ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৯ মার্চ থেকে লেনদেন ১০টা-১২টা

ব্যাংকে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২৫ মার্চ ২০২০

ব্যাংকে উপচেপড়া ভিড়

রহিম শেখ ॥ নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারী ঘোষিত ছুটি শুরুর আগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় নগদ টাকা নিতে ভিড় করেছেন গ্রাহকরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে দেখা গেছে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়। কোথাও কোথাও গ্রাহকদের লাইন ব্যাংকের বাইরেও চলে আসে। যদিও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকদের ব্যাংক শাখায় না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তার পরিবর্তে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম বুথ ব্যবহার ও অন্যান্য সেবার জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। এছাড়া ছুটির সময়ে দেশের সব এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার পাশাপাশি বুথগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে করোনার কারণে দুর্যোগের মতো পরিস্থিতিতে বাজারে নগদ অর্থ সরবরাহ বাড়াতে নগদ জমা নীতি সুদহারে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ টাকার পরিমাণ বাড়বে, কম সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকাও ধার করতে পারবে। অন্যদিকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। জানা গেছে, সরকার আগামী ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ১০ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারী-বেসরকারী চাকুরেরা। তবে সাধারণ ছুটিতে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সকল ব্যাংকের লেনদেন কার্যক্রম চলবে। আর ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের টাকা তোলার হার বেড়েছে। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় মঙ্গলবার গ্রাহকদের টাকা তোলার চাপটা বেশি দেখা গেছে। কোথাও কোথাও গ্রাহকদের লাইন ব্যাংকের বাইরেও চলে আসে। মতিঝিলের একটি বেসরকারী ব্যাংকে টাকা তুলতে যাওয়া রফিকুল ইসলাম নামের একজন জানান, টানা ছুটিতে ব্যাংকও বন্ধ থাকার শঙ্কায় টাকা তুলছেন তিনি। তিনি বলেন, যেভাবে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাতে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বোঝা যাচ্ছে না। ওই কারণে বাসায় নগদ কিছু টাকা হাতে রাখতেই উত্তোলন করছি। বেসরকারী ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় টাকা উত্তোলন করতে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে এটিএম বুথ থেকে উত্তোলন করা যায়। কিন্তু বেশি টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে আসতে হয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তি বলেন, বিভিন্ন জনের কাছে দেনা-পাওনা রয়েছে। পাওনাদাররা টাকা পরিশোধে চাপ দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে সবার মধ্যে ভীতি থাকায় হাতে টাকা রাখছে। নিজের হাতে রাখতে এবং পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা উত্তোলন করছি। দিলকুশাস্থ জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েকদিন ধরে গ্রাহকদের টাকা তোলার চাপ ছিল। তবে মঙ্গলবার একটু বেড়েছে। অনেক মানুষের ধারণা সরকার ঘোষিত এ ছুটিতে ব্যাংকও বন্ধ থাকবে। তাই সেই আতঙ্কে অনেকে টাকা তুলে হাতে রেখে দিচ্ছে। এটিএম ও অনলাইনে সেবা নিতে পরামর্শ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকদের ব্যাংক শাখায় না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তার পরিবর্তে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম বুথ ব্যবহার ও অন্যান্য সেবার জন্য অনলাইন প্লাটফরম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। প্রতি দিনই এসব বার্তা দিয়ে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এসএমএস পাঠানো শুরু করেছে। মঙ্গলবারও কয়েকটি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের এমন বার্তা দিয়ে এসএমএস করেছে। পাশাপাশি সব ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে, করোনা প্রতিরোধ সম্পর্কে গ্রাহকদের সতর্ক করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। নিজেদের ওয়েসাইট ও ফেসবুক পেজে এ সম্পর্কিত তথ্য দিয়েছে। ঢাকা ব্যাংক গ্রাহকদের বলেছে, ‘করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনাদের দৈনন্দিন লেনদেন শাখা ব্যাংকিংয়ের বিকল্প হিসেবে এটিএম, পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস), ঢাকা ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।’ সিটি টাচ এটিএম ও সিটি টাচ এ্যাপসের মাধমে গ্রাহকদের সেবা নিতে বার্তা পাঠিয়েছে সিটি ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া প্রধান কার্যালয়ে আসতে গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করছে। প্রাইম ব্যাংক স্বাস্থ্য সতর্কতা ও সবার কল্যাণের জন্য গ্রাহকদের সেবার বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার করতে বলেছে। ব্যাংকের লাইন পরিহার করে, কারও কাছে না গিয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে সহজেই ঘরে বসে সেবা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংকটি। জীবাণুমুক্ত করে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ ॥ সরকারী ঘোষিত ছুটির সময়ে দেশের সব এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার পাশাপাশি বুথগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের পয়েন্ট অব সেলস, ইন্টারনেট, এ্যাপ ও ইউএসএসডি ভিত্তিক সব লেনদেন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বলা হয়েছে। দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতন করতে উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখ করেছে, উদ্ভূত যে কোন পরিস্থিতিতে নিরাপদ ব্যাংকিং ও পরিশোধ সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ব্যাংক আইসিটিসহ ক্রিটিক্যাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের কি পারসন চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিজনেস কনটিনিউটি প্ল্যান (বিসিপি) প্রণয়ন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন মাশুল কাটা যাবে না। মাশুল ছাড়াই দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ও প্রতি মাসে এক লাখ টাকার জরুরী পণ্য কেনা যাবে। তবে এর বেশি কেনাকাটায় মাশুল দিতে হবে। এছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে জরুরী কেনাকাটাতে কোন মাশুল কাটতে পারবে না ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে প্রতি মাসের লেনদেন সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দিনে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলন করলে কোন মাশুল কাটা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের সব এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার পাশাপাশি বুথগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের পয়েন্ট অব সেলস, ইন্টারনেট, এ্যাপ ও ইউএসএসডি ভিত্তিক সব লেনদেন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বলা হয়েছে। ছুটিতে সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকবে ॥ সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সার্কুলারে ৫টি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে। দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো এই সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে সরকার আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এমতাবস্থায়, ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য ৫টি নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে: ১. শুধুমাত্র নগদ জমা ও উত্তোলনের জন্য অনলাইন সুবিধা সংবলিত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে গ্রাহকদের লেনদেনের সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করতে শাখাগুলোর মধ্যে দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শাখা খোলা রাখতে হবে। ২. অনলাইন সুবিধাবহির্ভূত ব্যাংকের শাখাগুলো শুধু নগদ জমা ও উত্তোলনের জন্য খোলা থাকবে। ৩. শুধু জরুরী বৈদেশিক লেনদেনের জন্য এডি শাখাগুলো খোলা রাখা যাবে। ৪. উপরোক্ত সবক্ষেত্রে দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচী হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের শুধু সংশ্লিষ্ট বিভাগ দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। ৫. এটিএম ও কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চালু রাখার সুবিধার্থে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ সার্বক্ষণিক চালু রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে ২৩ মার্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত আকারে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষমহল। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের কথা ভেবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ ছুটির সময়ে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
×