ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় সেনা মোতায়েন

প্রকাশিত: ১১:২৪, ২৫ মার্চ ২০২০

স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় সেনা মোতায়েন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণে দেশের সকল জেলায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভাইরাসটির বাংলাদেশে সংক্রমণ ও বিস্তৃতির ঝুঁকি রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের প্রতিটি জেলায় সেনাবাহিনী স্থাানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তৃতি ঠেকাতে সরকার সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের প্রতিটি জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় দেশের সকল জেলার স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে এবং সমন্বয় করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের তালিকা প্রস্তুত ও বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের নেয়া উদ্যোগ বা গৃহীত পদক্ষেপে সহায়তা ও সমন্বয় করবে। এছাড়াও সেনাবাহিনী বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনে মেডিক্যাল সহায়তা প্রদান করবে। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে মাঠে নামবে সশস্ত্র বাহিনী। নৌবাহিনী উপকূলীয় এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কাজ করবে। বিমানবাহিনী হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও জরুরী পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবে। বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। সেনাবাহিনী বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক সময় অবস্থান করতে ত্রুটি বা অবহেলা করছে কিনা, তা পর্যালোচনা করবে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা ও স্টাফ রিপোর্টাররা জানান- নারায়ণগঞ্জ ॥ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছেন সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা। পরে সেনাবাহিনী নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় টহল শুরু করে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি দ্রব্যমূল্যের মজুদ করে দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয় তবে জেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী সেনাবাহিনী সহযোগিতার পাশাপাশি তদারকি করবে। যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অথবা সরকারী নির্দেশ অমান্য করছেন তারা যাতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেন এজন্য জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী। নীলফামারী ॥ মঙ্গলবার দুপুরে নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয় বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলার সকল স্তরের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকেই নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলায় সেনাবাহিনী টহল শুরু করে। সেনাবাহিনী আইসোলেশন সেন্টার, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পরিদর্শন, এমনকি প্রশাসনের সফলতা ও দুর্বলতাও পর্যবেক্ষণ করবে। সাতক্ষীরা ॥ মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, লে. কর্নেল ফারহানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠকে করোনোভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব তৈরিতে সাধারণ মানুষকে বিনা কারণে ঘর থেকে বেরুনো রোধ ও বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ফরিদপুর ॥ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার থেকে জেলাটিতে সাভার ক্যান্টনমেন্টের ২৮/বির এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজের নেতৃত্বে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শুরুর আগে তারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন। ফেনী ॥ করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় মঙ্গলবার সেনাবাহিনী ফেনীতে কাজ শুরু করে। এরআগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষে কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩৩ পদাতিক ডিভিশন নিয়ন্ত্রিত ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের অধীন ২৮ মিডিয়াম আর্টিলারি রেজিমেন্টের অধিনায়ক লে. কর্নেল আজমিনসহ ব্যাটালিয়নের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
×