ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও স্থগিতের পথে!

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২৫ মার্চ ২০২০

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও স্থগিতের পথে!

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশের পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ড সফর স্থগিত হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থগিত হওয়ার পথে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও। জুনে হওয়ার কথা ছিল, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ দুটি। কিন্তু এখন যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে সিরিজটি আপাতত হবে না। কেন? অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ১৮ অক্টোবর থেকে ১৫ নবেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু যথাসময়ে টি২০ বিশ্বকাপ যে হবে না, তাও ইঙ্গিত মিলছে। কারণ, জনগণের সুরক্ষার স্বার্থে অস্ট্রেলিয়ান সরকার সীমান্ত লকডাউন করে দিয়েছে। তা আগামী ছয়-সাত মাসও বহাল থাকতে পারে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে তা হবে। তা যদি হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত টি২০ বিশ্বকাপও হবে না। জুনে যে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা অস্ট্রেলিয়ার, তাও স্থগিত হয়ে যাবে। কারণ, ছয়-সাত মাস সীমান্ত লকডাউন হবে মানে ক্রিকেটাররাও আসলে খেলার মতো অবস্থায় থাকবেন না। টোকিও অলিম্পিক স্থগিত ঘোষণার আগেই অস্ট্রেলিয়া অংশ নেবে না জানিয়ে দিয়েছিল। যদি জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা থাকা অলিম্পিকে না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে জুনে কোনো খেলা কিভাবে খেলবেন অসি খেলোয়াড়রা? তা যে সম্ভব নয়, তা বোঝাই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে অস্ট্রেলিয়াতেও পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। দুই হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। দিন দিন মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। তাতে ভালভাবেই শঙ্কা বাড়ছে। আইসিসি আগামী ২৯ মার্চ টুর্নামেন্টের ভবিষ্যত নির্ধারণ নিয়ে আলোচনায় বসবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে আলোচনা। আর সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে টি২০ বিশ্বকাপ। তা সময়মতো না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমনকি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ হওয়ার পরই ২০২১ সালে ভারতের টি২০ বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। একই বছরে তো আর দুটি টি২০ বিশ্বকাপ হতে পারে না? আর তাই স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হলে বাতিলই হয়ে যেতে পারে। এমন মুহূর্তে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিদেশি নাগরিকদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা আরও ৬ মাস বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার ট্রেজারার জস ফ্রাইডেনবার্গ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করা হতে পারে।’ তা যদি হয়, তাহলে বিশ্বকাপ হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। এই ছয় মাসে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলও কোন খেলা খেলতে পারবে না। তাতে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও স্থগিত হয়ে যেতে পারে। এপ্রিলে পাকিস্তান সফরে তৃতীয় ধাপে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। একটি ওয়ানডে ও একটি টেস্ট খেলার কথা ছিল। তা স্থগিত হয়েছে। মে মাসজুড়ে আয়ারল্যান্ড সফরে তিনটি ওয়ানডে ও চারটি টি২০ ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। তাও স্থগিত হয়ে গেছে। জুনে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। জুনে বাংলাদেশে এসে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি টেস্ট খেলার কথা অস্ট্রেলিয়ার। জুনের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে পা রেখে ১১ জুন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ও ১৯ জুন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার কথা ছিল অসিদের। যেহেতু প্রথম টেস্টটি চট্টগ্রামে হওয়ার কথা, তাই ঢাকায় পা রেখেই সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলতে নামার আগে চট্টগ্রামে বিসিবি একাদশের বিরুদ্ধে চারদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার কথা তাদের। এরপর টেস্টের মিশন শুরু করার কথা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশেষ ২০১৭ সালে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলে। সেবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হয়েছিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া প্রথম টেস্টে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। দুই বছর পর আবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার সুযোগ মিলে বাংলাদেশের। মাঝপথে খেলার কথা থাকলেও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসেনি। এবার আশা বাধ্যতামূলকই ছিল। কারণ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাব সম্ভবত অস্ট্রেলিয়াকে আপাতত বাংলাদেশ সফরে আসায় বাধা দিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে এ বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া)। সরকারের সিদ্ধান্তের ওপরই এখন সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে। আর তাই ছয়মাস যদি অস্ট্রেলিয়া লকডাউন হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরও স্থগিত হয়ে যাবে।
×