ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপির ইতিহাস ও রাজিনের রেকর্ড গড়ার দিন

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৫ মার্চ ২০২০

অপির ইতিহাস ও রাজিনের রেকর্ড গড়ার দিন

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি রেকর্ড নিজের দখলে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন আতহার আলী খান। বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড ছিল তার। প্রথমে ১৯৯০ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কলকাতায় অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংস খেলে সেরা পারফর্মার হয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে নিজেকেই ছাড়িয়ে যান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কলম্বোয় ৮২ রান করে। আতহারের এই রেকর্ড ভেঙ্গে দেন মেহরাব হোসেন অপি। এ ওপেনার ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যান ১০১ রান করে। যদিও মেরিল ত্রিদেশীয় সিরিজটিতে মাত্র ৪ দিন আগেই শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ৯৫ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ড গড়েছিলেন। আর ২১ বছর আগে এই দিনে অপি শতক হাঁকিয়ে অবিস্মরণীয় রেকর্ডটি গড়েছিলেন। একই দিনে অপির ৭ বছর পর দেশের পক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে শতক হাঁকিয়ে সেরা হয়ে যান রাজিন সালেহ। তিনি ফতুল্লায় কেনিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০৮ রান করে দেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েন। ডানহাতি ওপেনার অপির ওয়ানডে অভিষেক হয় ১৯৯৮ সালে ভারতের বিরুদ্ধে মোহালিতে। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে অভিষেকের সেই ম্যাচে অবশ্য ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিনি। সেটিই শেষ এরপরই ওপেনার হয়ে গেছেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ রান করে অবশ্য আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। তবে এরপর ১৯৯৯ সালের মার্চে দেশের মাটিতে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেকে দারুণভাবে প্রমাণ করেন এ ডানহাতি। প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৭৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন। কেনিয়ার বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচে তিনি খেলেননি। ওপেনিং সঙ্গী বিদ্যুৎ গড়েন নয়া রেকর্ড। ভেঙ্গে দেন দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলা আতহারের দীর্ঘদিনের রেকর্ড। ২০ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৯৫ রান করে আউট হয়ে অবশ্য আফসোসে ভুগেছেন বিদ্যুৎ দেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার সুযোগটা মিস করে। পরে ২৪ মার্চ কেনিয়ার বিরুদ্ধে ফিরতি ম্যাচে ফিরে ২৩ রানে আউট হন অপি। কিন্তু ২৫ মার্চ গড়ে ফেলেন রেকর্ড। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ফিরতি সেই ম্যাচে ১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন ৯ চার, ২ ছক্কায়। বিদ্যুৎ ৬৮ রান করে সাজঘরে ফিরে সেখান থেকেই দেখেছিলেন অপির গড়া বিস্ময়কর সেই রেকর্ড। ২১ বছর আগের সেই ঘটনাটি আজকের দিনের। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একেবারেই অন্যরকম একটি দিন ছিল সেটি। কারণ যে কোন ফরমেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার গৌরবময় কীর্তি গড়েন অপি। বিদ্যুতের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ১৭০ রানের যে জুটি গড়েছিলেন সেটিও ছিল বাংলাদেশের জন্য রেকর্ড। উদ্বোধনী জুটির সেই রেকর্ড আবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই ২১ বছর পর ভেঙ্গেছেন সদ্যই সমাপ্ত সিরিজে লিটন কুমার দাস ও তামিম ইকবাল খান ২৯২ রানের জুটি গড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৬ জুলাই কলম্বোয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮২ রানের ইনিংস খেলেছিলেনে আতহার। প্রায় দুই বছর ধরে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড ছিল সেটি। এর আগের রেকর্ডটাও ছিল তারই দখলে যা ৭ বছর অবিকৃত থেকেছে। ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কলকাতার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৭৮ রান করে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক হয়েছিলেন। ৭ বছর পর নিজেকেই ছাড়িয়ে গিয়ে করেন ৮২। আতহারের এই দীর্ঘ সময়ের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে শতক হাঁকান অপি। তার ১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংসটির পর কেটে গেছে ৬ বছর আরেকটি ওয়ানডে শতকের জন্য। ততদিনে টেস্টে ১০টি সেঞ্চুরি এসেছে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের উইলো থেকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করা অপির অবিস্মরণীয় সেই শতকের ৬ বছর পর মোহাম্মদ আশরাফুল দেশের পক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকান। কার্ডিফে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে ১০০ রান করেন তিনি। অর্থাৎ অপির ১০১ রানই থাকে ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সবচেয়ে বড় ইনিংস হিসেবে। তবে আশরাফুলের শতক ছিল সেরা। কারণ অপি শতক হাঁকিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি, আশরাফুল জিতিয়েছেন। তবে তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরির জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০০৬ সালের আরেকটি ২৫ মার্চ, এবার রাজিন সালেহ ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। ২০০৬ সালের ২৫ মার্চ কেনিয়ার বিরুদ্ধে ফতুল্লাায় নতুন করে ইতিহাস লেখেন তিনি ১০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। ১১৩ বলে ১৬ চারে তার অপরাজিত ১০৮ রানের সুবাদে কেনিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার কোন প্রতিপক্ষকে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ দল। আর রাজিন হয়ে যান নতুন রেকর্ডের মালিক। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল সেটি তার। এই রেকর্ডটি তিনি গড়বেন তার আভাস আগেই দিয়ে যাচ্ছিলেন। দু’বার পারেননি সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে। ২০০৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৮২ এবং ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৭৭ রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অপিকে ছাড়িয়ে যান যেদিন অপি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন সেই ২৫ মার্চেই।
×