ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে দায়িত্ববোধ

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৫ মার্চ ২০২০

করোনাকালে দায়িত্ববোধ

সব পেশার জন্যই অঙ্গীকার একটি জরুরী বিষয়। কোন কোন ক্ষেত্রে তো রীতিমতো শপথও নিতে হয়। দুঃখজনক হলো শপথ নিয়ে শপথ ভঙ্গের দৃষ্টান্তও এই সমাজে কম নয়। আর দায়িত্ববোধ? সেটি সব মানুষেরই থাকতে হয়, যদি তিনি নিজেকে মানুষ বলে দাবি করেন। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনার পর আমাদের সমাজে এমন সব ঘটনা ঘটছে যা যেমন অপ্রত্যাশিত, অনাকাক্সিক্ষত, তেমনি মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার অবমাননাও বটে। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন না, আবার কেউ দাঁড়ালে তার বিপক্ষে একাট্টা হবেন- এমন বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? কয়েকটি ঘটনার দিকে ফিরে তাকালে এমনটাই মনে হয়। ফরিদপুরের একজন বাসিন্দা বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। পরে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফরিদপুরের কোন হাসপাতালই তাকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। তাকে পরামর্শ দেয়া হয়, তিনি যেন আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। খুলনায় জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তি চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালের ফ্লোরেই মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, করোনা রোগী আখ্যায়িত করে তাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানান চিকিৎসক। আসা যাক রাজধানীচিত্রে। উত্তরায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীকে ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। এ সময় ভাংচুর, হাতাহাতি ও হট্টগোল সৃষ্টির ঘটনা ঘটে। এসব চিত্র কিসের আলামত? মানুষ কি তার বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলছে? এখনও দেশে করোনা মহামারীর রূপ পরিগ্রহ করেনি। এরই মধ্যে মানুষ এতটা নিচে নেমে গেছে? একটি জিনিসের কথা খুব শোনা যাচ্ছে। সেটি হলো পিপিই বা পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট। ডাক্তার-নার্সদের জীবাণুরোধক পোশাক। এই পোশাকের ভেতর বিশেষ চশমা, টুপি এবং জুতাও সংযুক্ত। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, বিশেষ করে চিকিৎসক ও নার্সরা। একদল তরুণ চিকিৎসক নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষার পোশাক তৈরি করে নিয়েছেন। এই মানবিকতাবোধ ও কর্তব্যবোধই বেশি জরুরী এমন দুর্যোগকালে। চিকিৎসকরা দাবি তুলবেন, সমালোচনা করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এটি স্বাভাবিক। কিন্তু তার চেয়েও স্বাভাবিক ছিল আপৎকালীন কিছু একটা ব্যবস্থা নেয়া। নিজেদেরই উদ্যোগী হওয়া। আর সব পেশার সঙ্গে চিকিৎসকরা যদি নিজেদের পেশাকে মিশিয়ে ফেলেন তাহলে আর কি বলার আছে? করোনাভাইরাসের গতিপ্রকৃতি স্টাডি করে জানা যাচ্ছে, তিনজনের একজন জানবেনও না তার দেহে করোনা এসেছিল, চলে গেছে; ১০ জনে ৮ জন বাড়িতেই সেরে উঠবেন, ১০ জনে দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার দরকার পড়বে, ২০ জন বা ৩০ জনে একজন মারা যাবেন। চিকিৎসা প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে, সারাবিশ্বের চিকিৎসকরা তাদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। কাজেই চিকিৎসা নিতে দিতে হবে। চিকিৎসা নিতে না দিলে এটা আরও ছড়াবে। কারণ মানুষ রোগ গোপন করবে। হাসপাতাল ভাংচুর করে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা নির্বুদ্ধিতা। বর্তমানে মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, যেমন ডাক্তার-নার্সসহ হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মী, যাদের বেশিরভাগই একাত্তর দেখেননি, তাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে জীবাণু ধ্বংসকারী যোদ্ধা হিসেবে দেশ ও জাতির জন্য ভূমিকা রাখা। এই সুযোগ কি তারা হেলায় হারাবেন, নাকি ঝাঁপিয়ে পড়বেন মানবসেবায়? আমরা জনকল্যাণের চিন্তাটাই আগে করব। আমরা আশা করব, প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিয়ে মেডিক্যাল কর্মীরা তাদের ওপর অর্পিত মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে নবীন প্রজন্মের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। এখন দোষারোপ করার সময় নয়। সবাই এক হওয়া চাই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তরিক ও সক্রিয় হোন। তাহলেই আমরা এই দুঃসময় অতিক্রম করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত রাখতে পারব।
×