ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধায় সব ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৫ মার্চ ২০২০

গাইবান্ধায় সব ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধের নির্দেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৪ মার্চ ॥ করোনাভাইরাসের বিপদ অব্যাহত থাকায় শ্রমজীবী মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তদুপরি এই সময়টিতে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু এই বিরূপ সময়টিতেও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী স্থানীয় ছোট এবং বড় এনজিওগুলো তাদের সাপ্তাহিক ঋণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে ঋণ গ্রহণকারী দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ গ্রহীতাদের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত দুর্যোগের এই সময়টিতে ঋণের কিস্তি আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য তাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। কিন্তু তাদের সমস্যার কথা কানেই তুলছে না এনজিওগুলো। ফলে শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষ কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে এনজিওদের চাপে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তবে এই দুঃসময়টিতে এগিয়ে এসেছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল মতিন। তিনি ২৩ মার্চ স্বাক্ষরিত এক পত্রে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের আয় ও কাজের পরিধি কমে যাওয়ায় জনস্বার্থে জেলার আওতাধীন সকল এনজিও’র ঋণের কিস্তি আদায় কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই স্থগিত আদেশ বহাল থাকবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এর আগে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এনজিও’র ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ করে দেন। কলাপাড়ায় মানছে না মাঠ কর্মীরা নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় করোনার প্রভাব বিস্তার রোধে সরকারী নিষেধাজ্ঞার পরে শতাধিক হোটেল-মোটেল বন্ধ রয়েছে। জীবন-যাত্রায় এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। কোথাও নেই প্রাণচাঞ্চল্য। সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। নি¤œ আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তরা এমনিতেই টানাপড়েনে দিন কাটাচ্ছেন। ২৩ মার্চ পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন এক লিখিত নির্দেশনায় সকল এনজিওর ঋণের কিস্তি আদায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। কিন্তু কিস্তি আদায়ের দৌরাত্ম্য থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে কুয়াকাটাসহ সাগরপারের কলাপাড়া উপজেলায় সকল এনজিও তাদের ঋণের কিস্তি আদায় করছে। এ নিয়ে ঋণগ্রহীতার সঙ্গে আদায়কারী মাঠকর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিত-া হয়েছে। কিন্তু কিস্তি আদায় থেমে নেই। শুধু এনজিও নয়, উপজেলা সমাজসেবা এবং সমবায় অফিসের নিবন্ধিত সমবায় সমিতিগুলো নিজেদের মতো পরিচালিত ঋণের দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক কিস্তি আদায় অব্যাহত রেখেছে। এমনকি সুদি মহাজনরাও দোকানে দোকানে গিয়ে কিস্তি আদায় অব্যাহত রেখেছে। মাঠ পর্যায়ে যথাযথ মনিটরিং না থাকায় সরকারের দেয়া সেবা পায়না সাধারণ মানুষ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, সকল এনজিও প্রতিনিধিদের কিস্তি আদায় বন্ধের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ না মানলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমতলী নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী থেকে জানান, উপজেলার এনজিও’র ঋণের কিস্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও মনিরা পারভীন। মঙ্গলবার ইউএনও’র কার্যালয়ে এনজিও’র সমন্বয় সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়। জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক বে-সরকারী সংস্থা-এনজিও রয়েছে। ওই এনজিওগুলো থেকে আমতলী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য, গরু ও হাঁস মুরগি পালন করে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দেয়ায় উপজেলার ব্যবসায়ী, কৃষক, জেলে ও দিন মজুর মানুষের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার ঋণ গ্রহিতারা। এক দিকে পরিবারের ভরণ পোষণ, অন্য দিকে সপ্তাহিক ও মাসিক ঋণের কিস্তির বোঝা। এনজিও’র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে ঋণ গ্রহিতারা। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আমতলী ইউএনও’র কার্যালয়ে উপজেলা এনজিও’র সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আমতলীতে কর্মরত সকল এনজিও’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজারে জরিমানা স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও জনসমাগম করে ঋণের কিস্তি সংগ্রহের দায়ে এনজিও কর্মকর্তাকে জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে এনজিও সংস্থা বাস্তবের এক কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদ- দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহাজান আলী বলেন, এই ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সকল এনজিওদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
×