ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে-২০২০

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২৪ মার্চ ২০২০

ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে-২০২০

প্রতি বছর ২০ মার্চ ‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে’ সারা বিশ্বে পালিত হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশে আনুমানিক ১০ লক্ষাধিক ডেন্টাল সার্জন এ দিনটি পালন করে থাকেন। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস যার মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয স্বাস্থ্যবান মুখের লাভ ও প্রাপ্তি সম্পর্কে। ২০২০ সালের ‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে’ ক্যাম্পেন বা কার্যক্রমের থিম বা বিষয় হলো “টহরঃব ঋড়ৎ গড়ঁঃয ঐবধষঃয” মুখের স্বাস্থ্যের জন্য একযোগে কাজ করতে হবে অর্থাৎ মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় মুখের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অধিকাংশ মুখের রোগের ক্ষেত্রেই অন্যান্য শরীরের রোগের সঙ্গে একই ধরনের রিস্ক ফ্যাক্টর বিদ্যমান থাকে। হৃদরোগ ইতোমধ্যেই শীর্ষ ঘাতক ব্যাধি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে যা মাঢ়ি রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি জরিপে দেখা গেছে মাঢ়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাঢ়ি রোগের মাধ্যমে যদি “ভিরিড্যানস্ স্ট্রেপটোকক্কাই” ব্যাকটেরিয়া রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাঢ়ি রোগের ক্ষেত্রে কোন প্রকার অবহেলা করবেন না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় পেরিওডন্টাল রোগে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় বা দেখা যায় তার মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাস স্যানগুইস বা স্যানগুইনিস হার্টে সংক্রমিত হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস দেখা দিতে পারে। স্টেপটোকক্কাস স্যানগুইনিস সুস্থ মানুষের মুখে বিদ্যমান বিশেষ করে ডেন্টাল প্ল্যাকে। সম্প্রতি গবেষণায় জানা যায় যে, মাঢ়ি রোগের সঙ্গে শুধুমাত্র হৃদরোগ সম্পৃক্ত নয় বরং মাঢ়ি রোগের কারণে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। তাই মাঢ়ি রোগের ক্ষেত্রে অবহেলা না করে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত পেরিওডন্টাইটিসের ক্ষেত্রে দাঁত নড়ে যায়। কিন্তু দাঁত বেশি নড়ে গেলেই সেটি পেরিওডন্টাইটিসের কারণে হয়েছে, এমনটি ভাবা ঠিক নয়। আর এ ক্ষেত্রে পেরিওডন্টাইটিস ভেবে দাঁত তোলাও ঠিক নয়। রোগীদেরও দাঁত নড়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারকে ডাক্তারের কাছে এসে দাঁত ফেলে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা মোটেই ঠিক নয়। কারণ পেরিওডন্টাইটিস ছাড়া ও মাঢ়ির ক্যান্সারের কারণে দাঁত নড়ে যেতে পারে। এছাড়া রক্তনালির টিউমার হেমানজিওমা হলেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে দাঁত ফেলে দিলে বড় ধরনের সমস্যা যেমন-অঝোর ধারায় রক্তপাত হতে পারে। মোট কথা টিউমার, সিস্ট এবং অন্য কারণেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। মাঢ়ি রোগ বা মাঢ়ির পাশে আলসার বা ঘাঁ দেখা দিলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। থাইরয়েড গ্রন্থির অচলাবস্থার কারণে মুখের অভ্যন্তরে পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে। আবার পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্য খারাপ হলে সংক্রমণের মাধ্যমে আপনার হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো লিভারের সঙ্গে পেরিওডন্টাল রোগের যোগসূত্র রয়েছে। লিভারের রোগে অনেক সময় মুখে প্রচ- দুর্গন্ধ হয়ে বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। পেরিওডন্টাইটিসের সঙ্গে লিভারের রোগ যেমন নন এলকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, অর্থাৎ এসব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। মুখের অভ্যন্তরে কোন সার্জারির পর রক্তপাত বেশি হতে পারে লিভারের রোগে। কোয়াগুলোপ্যাথির জন্য সামান্য আঘাতে মাঢ়ি থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রনিক লিভার ডিজিজে দাঁত ও মাঢ়িতে সবুজ দাগ এবং এনামেল হাইপোপ্লাসিয়া দেখা যেতে পারে। আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং আপনার মাঢ়ি রোগ থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয় ঐ শিশু আকার আকৃতিতে ছোট হবে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে মুখের ক্যান্সার ও সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ কে মুখের ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসাবে গণ্য করা হয়। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস প্রতিরোধে আপনার সন্তানের যৌন জীবন শুরু করার আগে টিকা প্রদান করুন। অতএব, মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। মুখকে নিয়ে ভাবুন, মুখ আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যকে নিয়ে ভাববে। মনে রাখবেন মুখ ও মুখগহ্বরকে অবহেলা করে কখনই আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যকে ভাল রাখা সম্ভব নয়। লেখক : ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
×