ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়া নারী দলের টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের পেছনের গল্প শোনালেন কোচ ম্যাথু মোট

অথচ পেরির বক্তব্যই ছিল প্রেরণা ...

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২৪ মার্চ ২০২০

অথচ পেরির বক্তব্যই ছিল প্রেরণা ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এ্যালিসা পেরি। অস্ট্রেলিয়া তো বটেই মেয়েদের ক্রিকেটে আধুনিক সময়ের অন্যতমসেরা অলরাউন্ডার। গত বছর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) নারী বিভাগে বর্ষসেরার পুরস্কার জয়ী ২৯ বছর বয়সী এ তারকাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছিল টি২০ বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা। অধিনায়ক মেগ ল্যানিং সেটি একাধিবার বলেছিলেনও। কিন্তু দুর্ভাগ্য গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর ইনজুরিতে পড়েন পেরি। ডু অর ডাই হয়ে ওঠা ওই ম্যাচ জিতেই সেমিফাইনালে ওঠে স্বাগতিকরা। সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো শিরোপার উল্লাসে মাতে অজি মেয়েরা। তবে পেরির প্রেরাণার বক্তব্যটা ছিল তারও আগে, যখন উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের কাছে হারের কারণেই মূলত গ্রুপ-পর্ব থেকে বাদ পড়ার অবস্থা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। পেরি তখন বলেছিলেন, ‘আমরা আসলে প্রমাণ করতে চাই, আমরাই এ গ্রুপের প্রাণ।’ তার ওই বক্তব্য শুরুর ধাক্কা-সামলে কিভাবে গোটা দলকে এক করেছিল, সেটি জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া নারী দলের কোচ ম্যাথু মোট, ‘ক্রিকেট দুনিয়া জানে, অস্ট্রেলিয়ানরা মাঠে কখনও হাল ছাড়ে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করতে ভালবাসে। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারের পর স্বভাবতই মেয়েরা কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ড্রেসিং রুমে এসে পেরি সেদিন বলেছিল, আমরা প্রমাণ করে দেব আমরাই এ গ্রুপের প্রাণ। যেটা গোটা বিশ্বকাপের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে! শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে টানা জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটটা ডু অর ডাই হওয়ায় মেয়েরা ফেরা নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। পেরি সেদিনও ওই কথাটারই পুনরাবৃত্তি করে। বাকিটা ইতিহাস। কেউ আমাদের থামিয়ে রাখতে পারেনি। এমনকি ও ইনজুরিতে পড়ার পরও।’ ওই ম্যাচেই পেরির ইনজুরি অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছিল। কিন্তু তার জন্যই শিরোপা জিততে মারিয়া ছিল গোটা দল। ফল, সিডনিতে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে পঞ্চমবারে মতো নারী টি২০ বিশ্বকাপের পতাকা উড়িয়েছিল মেগ ল্যানিংয়ের দল। সাত আসরে একটা দল পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন, ভাবা যায়? অভাবিত কাজটা করে যারপরনাই গর্বিত অধিনায়ক ল্যানিং পেরির কথা বলতে ভোলেননি, ‘এই দলটা নিয়ে আমি খুব গর্বিত। আমরা উত্থান পতনের ভেতর দিয়ে আসছিলাম। (ভারতের কাছে) প্রথম ম্যাচ হারার পর চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বিশেষ কিছু। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়ার আগেরদিনও পেরি বলেছিল, আমরা পারব, এই বিশ্বাসটা ছিল সবচেয়ে জরুরী। ঘরে-বাইরে আমাদের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। আমরা আসলে দারুণ খুশি’Ñ বলছিলেন চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক। গ্রুপপর্বে যে ভারতের কাছে হারতে হয়েছিল, সিডনিতে ৮৫ রানের বিশাল জয়ের পথে সেই তাদের রীতিমতো বিধ্বস্ত করে অজি মেয়েরা বুঝিয়ে দিয়েছিল যে কোন ঘারনার ক্রিকেটে বড় ম্যাচের বড় দল অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত হারমাপ্রিত কাউরদের কাঁদিয়ে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দুরন্ত-দূর্বার অস্ট্রেলিয়ান মেয়েরা। উল্লেখ্য, ছেলেদের পর মেয়েদের ক্রিকেটেও অস্ট্রেলিয়ার রাজ-রাজত্ব। ওয়ানডে বিশ্বকাপে অজিরা-পুরুষ ক্রিকেট পাঁচবার শিরোপা জিতেছে। ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫ সালে। দেশটির মেয়েরা এবার পঞ্চমবার টি২০ বিশ্বকাপ জিতে ছেলেদের এই অনন্য নজিরের সঙ্গে একই স্থানে উঠে আসে। ২০০৭ সালে ছেলেদের প্রথম টি২০ বিশ্বকাপেই শিরোপা জিতে বাজিমাত করেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। দেশটির মেয়েরা এবারই প্রথম ফাইনালে উঠেও পারেনি। ২০০৯, ২০১০ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে সেমি থেকে বিদায় নেয় ভারত। ২০০৯ সালে প্রথম নারী টি২০ বিশ্বকাপে চাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। আর অস্ট্রেলিয়া এর আগে সাফল্য পায় ২০১০, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। মাঝে ২০১৬ Ñ এ শিরোপা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ মেয়েদের ঘরে।
×