ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বাত্মক প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২৪ মার্চ ২০২০

সর্বাত্মক প্রতিরোধ

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তথা যুদ্ধ করার জন্য বিশ্বের কোন দেশই প্রস্তুত ছিল না। এমনকি করোনার আঁতুড়ঘর বলে খ্যাত চীনের হুবেই প্রদেশের উহানও নয়। অভিযোগ আছে যে, চীনে যখন এর প্রাদুর্ভাব ধরা পড়ে তখন সে দেশের সরকার বেশ কিছুদিন গোপন রেখেছিল এর ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা। পরে তা যখন আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি তখনই তা ছড়িয়ে পড়ে প্রথমে সিঙ্গাপুর এবং পরে দক্ষিণ কোরিয়ায়। চীন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পরাশক্তি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উভয় দিক থেকে। আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গেও। সুতরাং করোনা বা কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তেও সময় লাগেনি। তবে বিশ্ববাসী এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ বা প্রতিরক্ষা কোনটাই গড়ে তুলতে পারেনি যথাসময়ে। কেননা, করোনা একটি কদমফুল সদৃশ ভাইরাস বা জীবাণু যা ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র পাল্টে আক্রমণ করে মানুষকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর অগ্রসর হলেও প্রকৃতপক্ষে ভাইরাসের এই বিচিত্র চরিত্রের জন্য অদ্যাবধি কার্যকর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। যেমন, ফ্লু, প্রচলিত অর্থে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রতিষেধক নেই। অনুরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায় মার্স, সার্স, জিকা ভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, নিপাহ ভাইরাস, বার্ডফ্লু ইত্যাদির ক্ষেত্রেও। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। করোনার সংক্রমণে মৃত্যুহার দিন দিন বাড়ছেই। এই মুহূর্তের খবর হলো, বিশ্বের কয়েকটি দেশ অন্তত ২০টির বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে মানবদেহে এর সফল প্রয়োগও হয়েছে বলে খবর আছে। তবে তা বাজারে আসতে এখনও অনেক দেরি। করোনাভাইরাস সম্পর্কে তথ্য সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তালিকানুযায়ী করোনা আক্রান্ত শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে ইত্যালি, চীন, ইরান, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। বলতেই হবে যে, এসব ধনী ও সচ্ছল দেশ, বাংলাদেশের তুলনায় তো বটেই। এসব দেশেও প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা পোশাকসহ চিকিৎসা সামগ্রীর গুরুতর ঘাটতি ও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আরও যা দুঃখজনক ও মর্মান্তিক তা হলো, করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন নিয়েও দেখা দিয়েছে সমূহ সঙ্কট। সে অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি যথাযথ ও ব্যাপক হবে এমনটি ভাবাও বাতুলতা। তবুও সরকার তার সীমিত সম্পদ ও সক্ষমতা নিয়ে যথাসাধ্য প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এ কথা স্বীকার করতে হবে। আর সব কিছু সরকার করে দেবে এমনটি ভাবাও ঠিক হবে না। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে অবশ্যই। ইতোমধ্যে করোনা মোকাবেলায় ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী গঠিত হয়েছে সার্ক তহবিল, যেখানে শুরুতেই ১০ মিলিয়ন ডলার প্রায় ৮৫ কোটি টাকা দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ দিয়েছে ১৫ লাখ ডলার। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা বাদে অন্য দেশগুলোও দিয়েছে। করোনা আতঙ্কে যেখানে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে এবং ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সেখানে এটি একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাবটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি সার্ক দেশগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় পৃথক সংস্থা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে আরও গবেষণার জন্য একটি আন্তর্জাতিকমানের ইনস্টিটিউট স্থাপনের কথাও বলেছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহারসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা নীতি সর্বদাই মেনে চলতে হবে ঘরে ও বাইরে সর্বত্র। হাসপাতাল কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে যথাযথভাবে। জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন ও পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে না বেরনোই ভাল। বেশি বেশি নিত্য পণ্য কেনার অভ্যাস বর্জন করতে হবে। সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে প্রতিকূল পরিস্থিতির।
×