ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক রিগ্যানের সাজা স্থগিত

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৪ মার্চ ২০২০

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক রিগ্যানের সাজা স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে দেয়া সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি), আরডিসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক আরিফুলের অভিযোগ মামলা (হত্যাচেষ্টা) হিসেবে গ্রহণ করতে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি ওই সাংবাদিককে সাজা দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মোঃ রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র এ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন ও এ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। একইসঙ্গে আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। এছাড়া কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (সুলতানা পারভীন), সহকারী কমিশনার (এসি) রিন্টু বিকাশ চাকমা, সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন ও সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করে আরিফুল থানায় যে অভিযোগ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা নেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। এদিন মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দ- দেয়া-সংক্রান্ত্র ঘটনায় প্রশ্ন তুলেন আদালত। ওই ঘটনায় আরিফুল ইসলামকে দ- দেয়া হলেও স্বীকারোক্তির স্থানে আসামির নাম দেখানো হয় ‘মোঃ রফিকুল ইসলাম’। আবার আসামির বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘মৃত. মোঃ রফিকুল ইসলাম’। দ- দেয়ার বিষয়ে আদালতের নজরে আসা বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেছে, আমরাও (বিচারকরা) নিজেরাও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেককিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোন কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়। এ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেয়া আইনসম্মত নয়। এছাড়াও দু’জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসঙ্গে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে মদ ও গাঁজা কীভাবে খাওয়া যেতে পারে? এমনকি ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছে কিন্তু গাঁজার অপরাধে দেয়নি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেল? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়নি। আইনজীবীর শুনানি শেষ হলে আদালত বলেন, যেহেতু তিনি (সাংবাদিক আরিফ) হাইকোর্টে এসেছেন সেহেতু তিনি তার নিজের পিটিশনার করলে ভাল হবে। আপনারা তাকে পিটিশনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমরা আদেশ দিতে চাই, নইলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে। শুনানির শুরুতে আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিক আরিফকে সাজা প্রদান সংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকু আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো। এটা কীভাবে সম্ভব ? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং পিতার নাম একই লেখা হয় কীভাবে ? জবাবে আদালত বলেন, ‘আমি নিজেও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোন কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।’ ইশরাত হাসান বলেন, ‘স্বীকারোক্তিতে আসামি আর তার বাবার নাম একই। সেখানে আসামির নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেয়া হবে ? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যক্তি না। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কী অপরাধ তারও কোন বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কী থাকতে পারে? এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোন নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, এ্যাটর্নি জেনারেল এই বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেয়া আইনসম্মত নয়। এছাড়া দুইজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসঙ্গে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু গাঁজার অপরাধে সাজা দেননি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেল ? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি। উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড় শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীররাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ওই সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৫ মার্চ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন।
×