ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

* করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটে সীমান্ত গ্রামগুলো লক ডাউন করার দাবি

ভারতে যাতায়াত কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৩ মার্চ ২০২০

ভারতে যাতায়াত কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ লালমনিরহাট সীমান্তে বাংলাদেশ ভারত সংলগ্ন গ্রাম গুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও সর্তকতা জারি করা হয়েছে। করনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতার অভাবে গ্রাম ও শহরে ঘটছে নানা অপ্রতিকর ঘটনা। সীমান্ত গ্রাম গুলোকে লক ডাউন করার দাবি উঠেছে। কোক্রমেই যাতে ভারতীয় গ্রামেরবাসিন্ধারা বাংলাদেশের গ্রামে আসতে না পারে সচেতনতা বাড়াতে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালাতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসক। আজ সোমবার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে চিটি এসেছে। সীমান্তের গ্রাম গুলোতে নজরদারী বাড়াতে। কোন ক্রমে যেন, সীমান্ত গ্রামের সাধারণ মানুষ ভারতীয় গ্রামে না যায়। আবার ভারতীয় গ্রামের মানুষ বাংলাদেশে না আসে। আতœস্বজনদের এড়িয়ে চলতে বলা হচ্ছে। সীমান্তে নজরদারী জোরদার ও কঠোর সর্তকতা জারির নির্দেশ দিয়েছে। করনাভাইরাস নিয়ে প্রচার প্রচারনা চালাতে বলা হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ে নানা অপ্রতিকর ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। আজ সোমবার জেলা সদরের মোগলহাট সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড হতে ডিঁল ছুরা দূরুতে থাকা ভারতের নগদটারী গ্রামে জনৈক ভারতীয় নাগরিক জ্বর, সর্দি নিয়ে দিল্লি হতে বাড়িতে আসে। তাকে গ্রামবাসিরা পিটিয়ে পুনরায় কাটাতারের বেড়ার ওপাশে ভারতের মূলভূখন্ডে রেখে এসেছে। কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ির ক্ষুদ্র মনিহারি দোকানের মালিক মোঃ ইউসুফ আলী(৫০) জানান, তার বাড়ি সীমান্ত পিলারের ৯৩১ ও ৯৩২এর মাঝামাঝি কাটাতারের পাশের বাংলাদেশের বালাপাড়া গ্রামে। তিনি জানান, কোন বাংলাদেশি নোম্যান্স ল্যান্ডে কৃষি কাজ করতে গেলে বিএসএফের সহায়তায় ভারতীয়রা পিটিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারিরা ঠিকই ভারত যাচ্ছে আসছে। এদিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে সৌদি ফিরত প্রবাসী এক নারী গাঁয়ে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল হতে ৩৮ জন রোগি রাতারাতি পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য সৌদি প্রবাসী নারী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। বিষয়টি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ র্মোশেদমন্জুর দোলন নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সাপ্টানা বাজারের মোছাঃ মোহসিনা বেগম(৩২) তার ৫ বছরের শিশু কন্যা কে সর্দি জ্বর নিয়ে আজ সোমবার সকাল ১১ টায় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে জানান। তাকে জরুরী বিভাগ হতে দুরে সরে যেতে বলা হয়। এক পর্যায়ে তাকে চলে যেতে বলা হয়। বলা হয় বাড়িতে জ্বর, সর্দির চিকিৎসা করাবেন। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা করোনা ভীতির কারণে এমন আচরণ করছে। জেলা সদরের মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মোগলহাটের কর্ণপুর, ধরলা নদীর ফলিমারীরচরসহ বেশ কয়েকটি সীমান্ত গ্রাম রয়েছে। কিন্তু কোন অবস্থাতে এসব গ্রামের মানুষ কে ভারতে যাতায়াত ও ভারতীয়দের বাংলাদেশেরে হাটবাজার আসা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। বিজিবিকে বারবার বলার পরেও সীমান্তে যাতাযাত বন্ধে তেমন কোন উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। তাই করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মুক্ত রাখতে প্রয়োজনে সীমান্ত গ্রাম গুলোকে লক ডাউন করা যেতে পারে। এসব গ্রামে তো অল্পসংখ্যক লোক বসবাস করে। এই অল্প সংখ্যক লোকের খামখেয়ালিতে মূলভূখন্ডের হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেয়া যাবে না। তারা যাতে সীমান্ত গ্রামের মানুষ মূল ভূখন্ডে আসতে না পারে তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যাকে বলে লক ডাইন। তবে প্রয়োজনে সীমান্ত গ্রামের অল্পসংখ্যক মানুষকে রেশনিং পদ্দতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তাদের দোরগোরায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রায় ২৮৫ কিলো মিটার স্থল ও জলজ সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় স্থল ও জলজ সীমান্তের প্রায় ৮৫ কিলোমিটারে কোন কাটাতারের বেড়া নেই। এদিকে কুড়িগ্রাম জেলায় ভারতীয় স্থল ও জলজ সীমান্ত রয়েছে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার। এই দুই জেলায় ভারতীয় কাটাতারের বেড়ার সাথে বেড়ার বাহিরে বেশকিছু ভারতীয় গ্রাম রয়েছে। এসব ভারতীয় গ্রামের পাশে বাংলাদেশের গ্রামও রয়েছে। তাদের সাথে প্রতিবেশীদের যাতায়াত রয়েছে। ভারতের বিএসএফ সন্ধ্যার পর নিরাপত্তার অযুহাতে সীমান্তের কাটাতারের বেড়ার গেট (ভারতীয়দের ব্যবহারের জন্য)গুলো বন্ধ করে দেয়। তখন ভারতীয়রা বাংলাদেশের গ্রামে চিকিৎসা, হাটবাজারে সদাইপাতি করতে আসে। আতœীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এছাড়াও সীমান্ত গ্রামের অনেকে ভারতের পাশের গ্রামে দিনমজুরী করতে যায়। আবার ভারতীয়রাও দিনমজুরী করতে বাংলাদেশের গ্রামে আসে। এই বিষয়টি একপ্রকার ওটেন সিক্রিট। অত্যন্ত মানবিক কারণে বিজিবি এড়িয়ে চলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাভাইরাস রোধে জনতার কারফিউ জারি করেছে। আজ সোমবার ২৩ মার্চ হতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থল, জল ও বিমান বন্দর বন্ধ ঘোষনা করেছে। বিদেশীদের ভিসা দেয়া বন্ধ করেছে। জনগণকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের হতে বারণ করেছে। ভারতে প্রতিদিই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগি বাড়ছে ও মারাও যাচ্ছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গকে মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাজি লক ডাউন করেছে। সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের হাটবাজার বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ভারত যৌথ বর্ডার হাট গুলো বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম সীমান্তে। এই দুই দেশের সীমান্তে গ্রাম গুলোতে দুই দেশের মানুষের যাতাযাত চলছে। ভারতীয়রা বাংলাদেশের সীমান্ত বাজার গুলো ব্যবহার করে সদাই পাতি কিনছে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রামনের ঝুঁকি বাড়ছে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও কুড়িগ্রামের সদ্য যোগদান করা জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম জানান, বিজিবি’র অধিনায়কদের সীমান্ত তদারকি ও নজদারি বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রনায় পত্র দিয়ে বলেছে, কোন অবস্থাতে যাতে ভারতীয়রা বাংলাদেশে আসতে না পারে। সীমান্ত সর্বচ্চো সর্তকতা জারি করা হয়েছে। একই সাথে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচার প্রচারণা চলছে। সীমান্তের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বররা মাঠে কাজ করছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক বলেন, সীমান্তে বিজিবি কাজ করছে। প্রয়োজনে গ্রাম পুলিশ ও আনছারবাহিনী কে সীমান্ত হাট বাজার গুলোতে নজরদারী করতে মোতায়ান করা হবে। লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তৌহিদুল আলম জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। দুই দেশের পাশাপাশি ও কাটাতারের পাশে কিছু গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামের মানুষ খুব সহজেই প্রতিবেশীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। তাই সীমান্ত গ্রামে করোনা ঝুঁকি মুক্ত নয়। তাই বিজিবিকে সর্বচ্চো সর্তক রাখা হয়েছে। সীমান্ত বিজিবি’র টহল জোরদার করা হয়েছে।
×