ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেলকর্মীর হাত ছুঁয়ে থাকা ছবি ফেসবুকে ভাইরাল

হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন, ফিরছেন ট্রেনে!

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২৩ মার্চ ২০২০

  হোম কোয়ারেন্টাইনে  থাকবেন, ফিরছেন ট্রেনে!

রশিদ মামুন ॥ বিদেশ ফেরত এক যাত্রী, হাতে হোম কোয়ারেন্টাইনের সিল। ট্রেনের টিকেট কাটছেন। টিকেটের সঙ্গে টাকা ধরা হাতেই সিলটি মারা রয়েছে। তার হাতের সঙ্গে ছুঁয়ে আছে রেলকর্মীর হাত। ফেসবুকে একটি ভাইরাল ছবিতে প্রশ্ন জেগেছে যাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে তারা বাড়ি ফিরছেন কি প্রক্রিয়াতে। যদি উত্তরটি হয় গণপরিবহন তো বিপদ অবধারিত। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশ ফেরত যাত্রীদের বিমান বন্দরের বহির্গমন ফটক পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিবারের লোক গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে গেলে একজন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের গন্তব্য জানতে চাইছেন। যার রেকর্ড রাখা হচ্ছে। কিন্তু ফটক পেরিয়ে এইসব যাত্রীরা কিভাবে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন সে বিষয়ে আর কোন খবর কেউ রাখছেন না। ফলে এসব মানুষ নিজেদের ইচ্ছামতো যাতায়াত করছেন। শুরুতে সমালোচনা হওয়াতে এখন বিদেশ ফেরত যাত্রীদের হাতে বিমানবন্দর থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনের সিল মেরে দেয়া হচ্ছে। ওই ব্যক্তিকে কতদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে তা ওই সিলেই উল্লেখ থাকছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক সিলেট সিটি মেয়র বদরুদ্দিন আহম্মেদ কামরান হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত ভেঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠানে। ধানমন্ডি-৩২ এ জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবদন করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব কাছাকাছি দেখা গিয়েছিল তাকে। কামরান যুক্তি দিয়েছিল বিমান বন্দর থেকে তাকে বলা হয়নি হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা। শুধু কি কামরান দেশে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ বিদেশ থেকে এসেছে। গত তিন মাসে সেই সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সরকার চেষ্টা করেছিল খুব বেশি করোনা আক্রান্ত এমন দেশ থেকে আসা মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার কিন্তু তারা কেউ রাজি হয়নি। শেষমেশ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করার শর্তে তাদের ছাড়া হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নিয়ম না মানার প্রবণতা। সঙ্গত কারণে শেষমেশ হাতে অমুচনীয় কালিতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য সিল দিয়ে দিচ্ছে বিমানবন্দর। কিন্ত এসব মানুষ বাড়ি ফিরছে কিসে! তার কি কোন খোঁজ কেউ রাখছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশ ফেরত যাত্রীরা বাড়ি ফিরছেন গণপরিবহনে। বাসে ট্রেনে লঞ্চে করে এসব মানুষ ছড়িয়ে পড়ছেন দেশের সবখানে। চিকিৎসকরা বলছেন করোনাভাইরাস কেউ বহন করলে ১৪ দিন পর্যন্ত কোন লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তিনি অন্য মানুষকে সংক্রমিত করতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েত পারে। সেখানে একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমণ ঘটতে পারে। দিন কয়েক আগে আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। একজন চিকিৎসক একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করছে। এতে তার হাতে ভাইরাসটি লেগে যাচ্ছে। এভাবে তিনি সংক্রামিত হচ্ছেন। এবার তিনি একটি কম্পিউটার স্পর্শ করছেন। কম্পিউটারটি পরে যিনি স্পর্শ করছেন তিনিও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এভাবে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভারের মধ্যে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সেখানে মূল বার্তা ছিল লিফটে ওঠার পর লিফটের বোতাম প্রেস করার জন্য টিস্যু ব্যবহার করা হচ্ছিল। দুটি ভিডিও বার্তার একটিতে বলা হচ্ছে কিভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়। আর অন্যটিতে বলা হচ্ছে কিভাবে এটিকে প্রতিরোধ করতে হয়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এমন মানুষদের যদি গণপরিবহনে বাড়ি ফিরতে হয় তাহলে কি এই দুই বার্তার একটিও প্রতিপালিত হয়। নাটোরে এক কয়েদীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ওই কয়েদী পাঁচদিন আগে একটি মরামারির মামলায় জেলে ঢুকেছে। তার শরীরের বাড়তি তাপমাত্রার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকায় মনে করা হচ্ছে করোনা। এমনকি সম্প্রতি মিরপুরের হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের কেউ বিদেশ ফেরত নয় এমনটি জানা গেছে। তাহলে এই দুই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলো কি করে! অর্থাৎ করোনার সামাজিক বিস্তার ঘটছে। এই পরিস্থিতি ভয়ানক। কেউ না কেউ পরিবেশে করোনার জীবাণু রেখে গেছেন সেখান থেকে এরা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। ঢাকা নৌবন্দরের পরিচালক একেএম আরিফউদ্দিন বলেছেন সরকারের তরফ থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। তাই তারা স্বাভাবিক মানুষের মতোই যাতায়াত করছেন। লঞ্চঘাটে অনেক ভিড় থাকে। সঙ্গত কারণে তাদের আলাদা করা কঠিন। এরপরও সরকারের তরফ থেকে কোন নির্দেশনা থাকলে আমরা হয়তো বিষয়টি লঞ্চ মালিক, আনসার, পুলিশ এদেরকে নজরদারি করতে বলতে পারতাম। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের বেলায় গণপরিহন তার নিজের জন্য যতটা না ঝুঁকিপূর্ণ তার থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অন্য মানুষের জন্য। দেশের গণপরিবহনের যে দশা তাতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটা খুব কঠিন কাজ নয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র একটি বাসে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা কি? খোদ ঢাকার গণপরিবহনের ভেতরের পরিবেশ ভয়ঙ্কর। চালক, চালকের সহকারী কিংবা বাসের সুপারভাইজাররা কি সচেতন। বাস মালিক সমিতির নেতারা বলছেন তারা বাস স্ট্যান্ডগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেছেন, বিদেশ ফেরত যাত্রীদের বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। ফলে তারা যেভাবে নিরাপদ মনে করছেন সেভাবেই যাচ্ছেন। আমরা কাউকে কোন বাধা দিচ্ছি না।
×