ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আতঙ্কে ফাঁকা বন্দরনগরী

করোনায় মৃত্যুর গুজব রটনাকারী সেই ডাক্তার রিমান্ডে

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৩ মার্চ ২০২০

 করোনায় মৃত্যুর  গুজব রটনাকারী  সেই ডাক্তার  রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ করোনাভাইরাসে মানুষের মৃত্যুর গুজব রটনাকারী জাতীয়তাবাদী যুবদল নেতা ডাঃ ইফতেখার আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, করোনা আতঙ্কে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে বন্দরনগরীর সড়কগুলো। নগরীর বাইরে মহাসড়কেও কমে গেছে যানবাহন চলাচল। মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসভীতি। সিএমপির পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জানায়, যুবদল নেতা ডাক্তার ইফতেখার আদনানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে দায়ের হওয়া মামলায় তাকে রবিবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুুর করেন। পুলিশ জানায়, ডাঃ ইফতেখার আদনান চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয়তাবাদী যুবদলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ছাত্রদলেরও নেতা ছিলেন। করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যুর মিথ্যা তথ্য সম্বলিত একটি অডিও ক্লিপ তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ক্লিপটি ভাইরাল করার উদ্দেশ্য ছিল জনমনে ভীতি সঞ্চার করার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি এ ক্লিপ ছাড়েন। প্রমাণ হয় যে, এটি তারই কণ্ঠস্বর। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ শনিবার বিকেলে মহানগরীর একটি রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে আটক করে। তিনি নগরীর ষোলশহর দুইনম্বর গেট মেয়রগলির বাসিন্দা। ইউএসটিসি থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে তিনি আবুল খায়ের গ্র‍ুপ ও জিইসি মোড়ে অবস্থিত বেসরকারী হাসপাতাল মেডিক্যাল সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। এ বিষয়ে শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ বাদী হয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করে। এর আগে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয় চট্টগ্রামে। তন্মধ্যে গত ১৭ মার্চ করোনা ভাইরাস গুজব ছড়ানোর জন্য কাজির দেউড়ি এলাকা থেকে কামরুল হাসান রুমি নামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারও আগে ১৩ মার্চ গ্রেফতার করা হয় এবিএম রেজা নামের এক প্রকৌশলীকে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বোয়ালখালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এদিকে, করোনা আতঙ্কে ব্যস্ততম বন্দরনগরী চট্টগ্রাম অনেকটাই প্রাণ হারিয়ছে। রবিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হলেও সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল ছিল খুবই কম। সাধারণত ছুটিতে যেমন দেখা যায় তেমনই চেহারা নিয়েছে নগরী। শহরের বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ প্রত্যেকটি জেলা সড়কে একই চিত্র। যানবাহন চলেছে সীমিত আকারে। যাত্রীও ছিল অনেক কম। অধিকাংশ যাত্রী এবং পথচারীর মুখে মাস্ক, চলাফেরায় অজানা আতঙ্ক। শপিংমল ও হোটেল রেস্তরাঁয় আগের মতো সেই ভিড় নেই। মানুষ একান্ত অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কেনাকাটা বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার থেকে সাটডাউন না হলেও করোনা সতর্কতায় থেমে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগসহ দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থাগুলো করোনা সতর্কতায় নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। জনসমাগম হয় এমন কোন আয়োজনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। মানুষ নিজ উদ্যোগেও এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নগর ভবনে আয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতাদের নিরাপত্তায় সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। রবিবার সকাল থেকে এই সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তাপমাত্রা মাপা যন্ত্র থার্মোমিটার দিয়ে নগর ভবনে প্রবেশকারী প্রত্যেকের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দ্বারা জীবানমুক্তকরণ, নগর ভবনের সম্মুখে জীবাণুনাশক ক্যামিকেল ছিঁটানো এবং প্রতিটি ফ্লোর, রেলিং, লিফট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। চসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষায় ফিঙ্গার এক্সেস ডিভাইস হাজিরা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। তিনি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য নগরবাসীকে সর্তকতার সহিত চলাফেরা ও সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
×