ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিটনেস ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২২ মার্চ ২০২০

ফিটনেস ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সব ধরনের ক্রীড়া কার্যক্রম। চলমান বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগও (ডিপিএল) এক রাউন্ড হওয়ার পর থেমে গেছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অফিস করার বিষয়টিও শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ থেকে খুব প্রয়োজন না পড়লে এবং অতীব জরুরী কাজ না থাকলে কর্মকর্তাদের অফিসে আসতে হবে না। শনিবার দুপুরে বিসিবির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে সচেতন করতে এক সেমিনারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলী জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ চন্দন কুমার রায়। এমন পরিস্থিতিতে ভুতুড়ে একটি পরিবেশই সৃষ্টি হচ্ছে দেশের ‘হোম অব ক্রিকেটে’। যেহেতু খেলা নেই, দলীয় অনুশীলনও নেই- তাহলে এখন ক্রিকেটাররা কি করবেন? অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে একাডেমি মাঠে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজন ক্রিকেটার বিসিবির কাছে অনুশীলনের সুযোগ সুবিধাও চেয়েছেন। এই স্থবিরতায় ক্রিকেটারদের ফিটনেস ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জিং। তাই ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই হালকা অনুশীলন চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। হুট করে ক্রিকেটাঙ্গনে চলে এসেছে স্থবিরতা। মারাত্মক আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন সারাবিশ্বেই ক্রীড়াঙ্গনে সব কর্মকা- থেমে গেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও তাই এখন ঘরে বসেই সময় কাটাতে হবে। কারণ জনসমাগম করা, একসঙ্গে অনুশীলন করা, খেলা বিপজ্জনক হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য। করোনার সংক্রমণের ক্ষেত্রে এসব বড় ভূমিকা রাখে। তাই বঙ্গবন্ধু ডিপিএল বন্ধ করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও যেখানে মিরপুরের একাডেমি মাঠে ৬/৭টি দল একসঙ্গে অনুশীলন করেছে, সেখানে এখন খাঁ খাঁ পরিবেশ। তবে শনিবারও কয়েকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুশীলন করেছেন। মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ নাইম শেখরা এসেছিলেন অনুশীলন করতে। খেলা বন্ধ হয়ে গেলেও ফিটনেস তো ধরে রাখতেই হবে। হাত-পা গুটিয়ে টানা বসে থাকলে আর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট যখন শুরু হবে, তখন আর ভাল ফিটনেস নিয়ে নামা সম্ভব হবে না। হঠাৎ করে পাওয়া এই অখ অবসরে নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জের পেশাদার ক্রিকেটারদের জন্য। এই কারণে দেশের ক্রিকেটারদের আলাদা করে দিক নির্দেশনা দিয়েছে বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগ। পুরোদমে ক্রিকেট শুরু হওয়ার আগে সব খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে কাজ করা হবে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেডিক্যাল বিভাগ ও ফিটনেস ট্রেনিং বিভাগ যেটা আছে তাদের কিছু নির্দেশনা সব ক্রিকেটারকে দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রিকেটাররা তাদের ফিটনেস ধরে রাখা থেকে যাবতীয় কাজগুলো করে যাবে।’ এর আগেই মরণঘাতী এই ভাইরাস নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে বিসিবি। তারই প্রয়োগ দেখা গেছে শনিবার। এদিন দুপুরে সেমিনারের আয়োজন করে বিসিবি। সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিএসএমএমইউ সহযোগী অধ্যাপক চন্দন কুমার রায় সচেতনতামূলক বক্তব্য রেখেছেন। এ বিষয়ে নিজামউদ্দিন বলেন, ‘এই সচেতনতায় সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে বলে বোর্ড মনে করে। সেক্ষেত্রে আমাদের স্টাফ মেম্বার যারা আছেন, বিভিন্ন পর্যায়ে যারা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের সঙ্গে কয়েকটা সেশনে আমরা কাজ করব। যেখানে আমাদের ডাক্তাররা করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলবেন। কীভাবে করোনাভাইরাস থেকে সচেতন থাকা যায় এটা নিয়ে তারা কথা বলবেন।’ এবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে বিসিবি যা আজ থেকে কার্যকর হবে। শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তা জানিয়ে দেয় বিসিবি। সিইও নিজামউদ্দিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা আমাদের বিভাগের ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলেছি। বোর্ডের একটা নির্দেশনা সবাইকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। যতটুকু সম্ভব, আমাদের অপারেশনাল যে কাজগুলো থাকবে, সেগুলো আমরা সীমিত করার চেষ্টা করব। এর মধ্যে কোন জরুরী কাজ যদি চলে আসে তাহলে অফিসে আসতে হবে।’ এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা ক্রিকেটারদেরই। তারা অনুশীলন না করলে ফিটনেস ধরে রাখবেন কিভাবে? যেহেতু দলীয় প্র্যাকটিস ও ক্রিকেট অনুশীলনের সুযোগ নেই। তাই ক্রিকেটারদের অন্তত নিজ নিজ ফিটনেস ঠিক রাখার কাজ করার দরকার আছে। বিসিবি সেজন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে মেডিক্যাল বিভাগ থেকে। কিন্তু কিছু ক্রিকেটার চান ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন চালিয়ে যেতে। কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি শেরে বাংলায় এসে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করার চিন্তা ভাবনাও করছেন। সেই তালিকায় মুশফিকুর রহীম আছেন জানিয়ে আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘মুশফিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে শেরে বাংলায় একা ব্যাটিং প্র্যাকটিস করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। তার জন্য আলাদা নেটের ব্যবস্থা করতে মাঠ কর্মীদের বলাও হয়েছে।’ প্রাইম ব্যাংকের কোচ সারোয়ার ইমরানও বললেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে ফিটনেস ট্রেনিং বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা ছাড়া ক্রিকেটারদের এখন করণীয়ও কিছু নেই।’ জাতীয় দলসহ অন্যান্য সব ক্রিকেটার এখন ফিটনেস লেভেল ধরে রাখতে অন্তত ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজই করে যাচ্ছেন এবং করার কথাও ভাবছেন। টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ বলেন, ‘বেঁচে থাকাই সবার আগে। বর্তমানে করোনা আতঙ্ক যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে নিজের ফিটনেস ও ক্রিকেটীয় প্রস্তুতির চেয়ে কিছু দিন সতর্ক ও সাবধানে থাকা উচিত। এখন যেহেতু সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ, তাই ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি মানে ব্যাটিং ও বোলিং নিয়মিত অনুশীলন করার প্রয়োজন সে অর্থে নেই। তার চেয়ে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। যেটা বাসায় বসেই করা যায়। তাতে অন্তত শারীরিক সক্ষমতাটা ঠিক রাখা সম্ভব। ইচ্ছে করলে বিসিবিতে গিয়ে জিম করা যায়। হোম অব ক্রিকেটে অনুশীলন করারও সুযোগ আছে। তবে বর্তমান অবস্থায় আমি তা করতে চাই না।’ সৌম্য সরকারও বাসায় নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে চান। তবে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান খেলা বন্ধের ভেতরেও সময় করে শেরে বাংলায় যাচ্ছেন এবং অনেকটা নীরবে একা একা রানিং এবং জিমওয়ার্ক করছেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে আছি। তবে এর ভেতরেও নিজেকে যতটা সম্ভব ফিট রাখতে হবে। মাঠের ক্রিকেটে ভাল করার জন্য অন্তত শারীরিকভাবে সক্ষম রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ দীর্ঘ সময় ঘরে বসে থাকলে ফিটনেস লেভেল কমে যাবে। তাই আমি সবার অজান্তে হয়ত খুব সকালে না হয় সন্ধ্যায় শেরে বাংলায় চলে যাই। রানিং করি। জিমেও যাই। তখন কেউ থাকে না। কারও সঙ্গে শারীরিক স্পর্শের সুযোগ থাকছে না। এছাড়া আমি ঘরে বসে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করি। পাশাপাশি রাবার দিয়ে যে বিশেষ ড্রিল করানো হয়, সেটাও নিয়ে এসেছি। এখন থেকে বাসায় করব। সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা এবং পুশআপও করে যাচ্ছি।’
×