স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিটি ছবিজুড়ে আছে বাংলার নিসর্গের রূপময়তা। জলংয়ের আঁচড়ের চিত্রিত সেই প্রকৃতির সঙ্গে মিলে গেছে জীবন। যে জীবন বলে যায় নদীর বুকে ভেসে থাকা বাংলাদেশের কথা। সেখানে নদীর সঙ্গে মিতালী গড়ে সবুজের সমারোহ। সেই সূত্রে মাটির সঙ্গে গড়ে ওঠে মানুষের গভীর প্রেমময়তা। চিত্রপটে সেসব দৃশ্যচিত্র মেলে ধরেছেন চার তরুণ চিত্রকর। তাদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। জলছবিতে সজ্জিত শিল্পায়োজনটির শিরোনাম বাংলাদেশ। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রদশনীটি উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া চার নবীন শিল্পী হলেন আল আখির সরকার, কামরুজ্জোহা, মাসুদ আহমেদ ও পলাশ দত্ত। তাদের শিল্পিত প্রয়াসে উদ্ভাসিত হয়েছে সারাদেশের নানা প্রান্তের রূপ বৈচিত্র।
আকাশে উড়ছে মেঘমালা। চারপাশের প্রান্তে উঁকি দিচ্ছে বৃক্ষরাজি। আর জমিনে ভাসছে হালকা জল। তারই মাঝে ধানের চারা বোনায় ব্যস্ত চাষীর দল। ফসলের পরম্পরের শিরোনামের ছবিটি এঁকেছেন আল আখির সরকার। সুন্দরবনের করমজলে ভাসমান নৌকা থেকে সাম্পান কিংবা বেদে নৌকার ছবি এঁকেছেন এই শিল্পী। রং আর রেখার খেলায় মেলে ধরেছেন পাখিদের প্রেমময়তার দৃশ্যকাব্য।
পরিমিত রঙের ব্যবহারে সবুজ লতা-পাতার ভেতর থেকে ধানম-ির ৩২ নম্বরের দ্বিতল বাড়িটিকে চমৎকারভাবে এঁঁকেছেন কামরুজ্জোহা। চিত্রকর্মটির শিরোনাম দিয়েছেন ‘ঠিকানা ১৯৭১’। এই শিল্পীর আরেক ছবিতে দেখা মেলে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলা সড়ক। পাহাড়ী জনপদের জীবনচিত্রের সঙ্গে এঁকেছেন সোঁদা মাটির গন্ধমাখা গ্রাম বাংলার ছবি। বিশেষভাবে দর্শনার্থীর নজর কাড়ে নীল জলরাশির বুকে ভেসে থাকা অজস্র্র লাল পদ্মের ছবিটি।
খরতাপমাখা লালচে মাটির বরেন্দ্র ভূমিকে ক্যানভাসে তুলে ধরেছেন মাসুদ আহমেদ। এই শিল্পী আরও এঁকেছেন ঐতিহাসিক প্রতœস্থাপনা কান্তজির মন্দির থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ। বিস্তৃত সবুজ ফসলি ভূমির সঙ্গে নদীর বুক চিরে এগিয়ে চলা পালতোলা নৌকার ছবি এঁকেছেন পলাশ দত্ত। আরেক ছবিতে বনজঙ্গল আর পাহাড় পেরিয়ে পিঠে ঝুরি নিয়ে ঘরের পানে ফিরতে দেখা যায় এক পাহাড়ী নারীকে। এই শিল্পী আরও এঁকেছেন ঘন বনের মাঝে মায়া হরিণের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য।
এভাবেই জলরঙের সাধক চার নবীন শিল্পী মেলে ধরেছেন বাংলার রূপ মাধুর্য। জলরঙের আশ্রয়ে এ দেশের জল-হাওয়ার সঙ্গে গড়েছেন সিম্ফোনি। সৃজনের অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছেন নদী, আকাশ, মেঘ, শষ্যক্ষেত আর মানুষকে। চিত্রপটে বলেছেন পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ধলেশ্বরীর গল্পকথা।
৭৭টি চিত্রকর্মে সজ্জিত প্রদর্শনীটির সূচনা হয় ১২ মার্চ। বারো দিনব্যাপী শিল্পায়োজনটি শেষ হবে ২৩ মার্চ। বিকেল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: