ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একটি চক্র ফায়দা লুটছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা নিয়ে অপপ্রচার রোধ করা যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২২ মার্চ ২০২০

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা নিয়ে অপপ্রচার রোধ করা যাচ্ছে না

ফিরোজ মান্না ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা নিয়ে নানা অপপ্রচার ঠেকাতে সরকারের তিনটি সংস্থা কাজ করছে। বিটিসিএল’র ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স টিম’ ‘পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট’ (সিটিটিসি) ও বিটিআরসি। এরপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা নিয়ে অপপ্রচার রোধ করতে পারছে না। সরকার ও দেশবিরোধী একটি চক্র করোনাকে উপলক্ষ করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার আইডির বিরুদ্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। উল্টো ফেসবুকে নতুন আইডি খুলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শকে ম্লান করে দিচ্ছে অপপ্রচারের মাধ্যমে। বাজারে দ্রব্য মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রেও পোস্টগুলো মারাত্মকভাবে দায়ী। সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটগুলোর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার ও গুজব রটিয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিং বা নজরদারির মধ্যেও অপপ্রচার থেমে নেই। মনিটরিং সেলগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। এমনকি মনিটরিং সেলগুলোকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য প্রযুক্তিগত সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অপপ্রচারের বড় মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। এই ফেসবুক থেকেই চলছে নানা ধরনের অপপ্রচার। করোনার করণীয় সম্পর্কে নানা পরামর্শের মধ্যেই লেখা হচ্ছে দেশ ও সরকার বিরোধী কথা। বিশেষ করে ধর্মকে ব্যবহার করে কথাগুলো বলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এসব কথায় বিশ্বাস করে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। প্রচার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া পরামর্শকে ফেসবুকের ওই পোস্টগুলো ম্লান করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের আওতায় ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২৪ ঘণ্টা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের ওপর নজর রাখছেন। যখনই কোন আপত্তিকর পোস্ট আসছে-তখনই তারা সেগুলো বন্ধ করছে। যেগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না সেগুলোর বিষয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা হচ্ছে। একইভাবে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) কাজ করে যাচ্ছে। বিটিআরসি সাইবার ক্রাইম মনিটর করার জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। এর বাইরে সরকারের আরও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করছেন। করোনা নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে তা বন্ধ করার জন্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা করার জন্য ইউনিটগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটর করছে। সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ও বিভ্রান্তিকর খবর রটানো হচ্ছে। অপপ্রচারকারীদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব ও পুলিশ মাঠে নেমেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে করোনা নিয়ে বানোয়াট-মিথ্যা তথ্য প্রচার, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুকের অপপ্রচারে দেশের বাজারগুলোতে জিনিসপত্রের দাম আকাশ চুম্বি হয়েছে। করোনা কত দিনে শেষ হবে না হবে তার জন্য মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে কিনে রাখছেন। করোনার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন দেশের মানুষ। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মনের ওপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ। আতঙ্ক, অহেতুক রাগ বা অবসাদের লক্ষণও দেখা দিতে পারে। কিন্তু যে কোন বিপদ মোকাবেলার সময় চাই ধৈর্য, দায়িত্বশীল আচরণ আর সাহস নিয়ে থাকতে হবে-গুজবে কান না দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এসব পরামর্শ দিচ্ছে বিশেষজ্ঞরা। কোন প্যানিক তৈরি থেকে মানুষকে বিরত থাকার অনুরোধও জানিয়েছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোন গুজব না শুনে নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ওয়েবসাইট, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর বা সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। অপপ্রচার ঠেকাতে শুধু সাইবার জগত ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসাবে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটে নানা ধরনের গুজব অপপ্রচার ছড়িয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে নানা ক্ষতি কর প্রভাব ফেলছে। তাই সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা গুজব সৃষ্টি করে, তারা নানা ধরনের ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে কাজ করছে। এজন্য তাদের শনাক্ত করা কঠিন। এরপরও পুলিশ তাদের শনাক্ত করার কাজ করছে। করোনা বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও সাইবার জগতের সার্বিক দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে পুলিশ ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার’ নামে আরও একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করছে। ‘এ্যানহ্যান্সিং সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ক্যাপাবিলিটি অব বাংলাদেশ পুলিশ’ প্রকল্পের আওতায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) কাজ করে যাচ্ছে।
×