ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা আতঙ্কে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে

সারাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে চলবে সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২২ মার্চ ২০২০

সারাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে চলবে সাঁড়াশি অভিযান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অভিযানের পর ‘বাজার মনিটরিং টিম’ বাজার থেকে সরলেই বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে র‌্যাব। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। চাল, ডাল, আটা, পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের মতো অতি প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে দাম নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় শনিবার ছুটির দিন সকাল থেকে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পাল্লাপাল্লি করে খাদ্যপণ্য কেনায় বাজারে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। লাগামহীনভাবে নিত্যপণ্য কিনে নিচ্ছেন ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফের মেডিক্যাল পণ্য বিশেষ করে মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ, টিস্যু, প্যারাসিটামল গ্রুপের সব ধরনের ওষুধ, কাশির সিরাপ এবং ঠা-ার সব ধরনের ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। অনেক ফার্মেসিতে এসব ওষুধের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকার বাইরে জেলাশহর ও উপজেলায় পর্যায়েও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন ঢাকার মানুষ। হুমড়ি খেয়ে বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছেন। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, শনিবার ৯টি পণ্যের দাম আবার বেড়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে রসুন ১৩০-১৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০-৮০, আদা ১৪০-১৮০, মশুর ডাল ৬৫-১৩০, সয়াবিন তেল খোলা প্রতিলিটার ৮৮-৯৫, চাল সরু নাজির ও মিনিকেট ৫৮-৬৫, চাল মাঝারি পাইজাম ও লতা ৫০-৫৮ এবং স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩৫, ডিম ফার্ম ৩৬-৩৮, আলু ২০-২৫ এবং ছোলা ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম এবং জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর নিয়মিত বাজার তদারকির পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা করা হবে। কয়েকদিন ধরে বাজারে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে দাম বেশি নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর এ কারণে প্রতিদিন অনেক ব্যবসায়ীকে জেল-জরিমানা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্যের সরবরাহ নেই। আর এ কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে বাজারে পণ্যের কোন সঙ্কট নেই। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণে বাজারে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে র‌্যাব দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে র‌্যাব। এর পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকেও বাজার মনিটরিং করা হবে। কিন্তু এই অভিযানের পরও জিনিসপত্রের দাম কমছে না। কাওরানবাজারে মোবাইল টিমের অভিযানের সময় জিনিসপত্রের দাম কমে যাচ্ছে। আবার টিম সরে পড়লে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই কাওরানবাজারে এই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে ভোক্তারা জানিয়েছেন, শুধু কাওরানবাজার নয়, পুরো বাংলাদেশের চিত্র এটি। যতক্ষণ বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয় কিংবা মোবাইল টিম বসে থাকে ততক্ষণ জিনিসপত্রের দাম সঠিক থাকে। টিম সরলেই ব্যবসায়ীরা আবার জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের ক্রেতা আবু হানিফ জনকণ্ঠকে বলেন, মোবাইল টিম চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাজারে আবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে দাম কমবে না। মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের মধ্যে মানবতা নেই। ওরা মানুষের সঙ্কট পুঁজি করে ব্যবসা করে থাকে। এদিকে দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্ককে পুঁজি করে রাজধানীর পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি করায় ১৪ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া পাঁচ জনকে বিভিন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টায় যাত্রাবাড়ীর পেঁয়াজের আড়তে অভিযান চালিয়ে এ জেল-জরিমানা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, করোনার কারণে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকের মধ্যেই একদিনে কয়েক মাসের বাজার করার প্রবণতা দেখা গেছে। এই সুযোগে আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম ৩-৪ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি ২৮ থেকে ৩১ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আর শুক্রবার তারা এই পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। অথচ বর্তমানে পেঁয়াজের সিজন। দেশে মজুদ পর্যাপ্ত থাকার পরও ব্যবসায়ী, আড়তদার মিলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এসব অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৫ জনকে ৬ মাস থেকে ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা এই করোনাভাইরাস বা মানুষের অতিরিক্ত কেনাকাটার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করবে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও জনগণ ও ক্রেতাদের অনুরোধ করব আপনারা একইসঙ্গে ২-৩ মাসের বাজার করবেন না। আপনারা সর্বোচ্চ ৭ দিনের বাজার করতে পারেন। সবাই এভাবে কেনাকাটা করতে গেলে দাম বাড়িয়ে ফেলবে তারা। ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আমরা পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কে কত টাকা নিচ্ছে তা নজরদারি করছি। সব ক্রেতাকে অনুরোধ করছি, আপনারা ভাউচার ছাড়া কেউ পণ্য ক্রয় করবেন না। এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে অতিরিক্ত কেনাকাটার কারণে বাজারে চালের দাম হঠাৎ অনেকটাই বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চালের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তাই অসাধু চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অভিযান পরিচালনা করবে। ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ প্রশাসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×