ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট প্রদান শেষে প্রধানমন্ত্রী

অতিরিক্ত খাদ্যপণ্য মজুদ করে সঙ্কট সৃষ্টি করবেন না

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২২ মার্চ ২০২০

অতিরিক্ত খাদ্যপণ্য মজুদ করে সঙ্কট সৃষ্টি করবেন না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত খাদ্যপণ্য মজুদ করে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি না করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য শস্যের মজুদ রয়েছে। সরকারী গুদামে প্রচুর খাদ্য দ্রব্য মজুদ রয়েছে। তাই অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বেশি কিনবেন না। যার যতটুকু প্রয়োজন সেটুকুই সংগ্রহ করুন। আতঙ্কিত হয়ে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। আর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে বাইরে ঘোরাঘুরি না করে যতটা সম্ভব ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের এটি সর্বোচ্চ কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেন তিনি। শনিবার রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে আরও বলেন, বাইরে ঘোরাঘুরি না করে যতদূর সম্ভব নিজের ঘরে থাকুন। আর নিজেকে, পরিবার ও সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখুন। সবাই ঘরে বসেই দোয়া করেন। এই রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে, তা থেকে যেন মানবজাতি মুক্তি পায় তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের খাদ্য দ্রব্যের কোন সমস্যা নেই। এখনও ১৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সরকারী গুদামেই মজুদ আছে। সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমাদের মজুদ আছে। এছাড়া আমাদের বেসরকারী রাইস মিলের কাছেও প্রচুর পরিমাণে খাদ্য মজুদ আছে। এছাড়াও সারা বাংলাদেশের বড় কৃষকদের কাছেও ধান, চাল মজুদ আছে। আমাদের খেতে ফসল আছে, কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন। তরকারি, শাক-সবজি আমাদের প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, সরকারী গুদামগুলোই সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন গম ছাড়াও ১৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারী রাইস মিলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য রয়েছে। তাই, আমি সকলকে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু খাদ্য দ্রব্য কিনতে অনুরোধ জানাই। অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে অনেকে অতিরিক্ত পণ্য কিনছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তারা সমানে খাবার জিনিস কিনে মজুদ করছে। একজনকে দেখলাম তিনি বলেছেন তিনি ৩০ কেজি লবণ কিনে রেখেছেন! এটা কতদিন খাবেন তা আমি জানি না। আর পেঁয়াজের একবার দাম বাড়ার ফলে অনেকের প্রচুর পেঁয়াজ কিনে মজুদ করেছিলেন। ফল এই হয়েছিল যে, পেঁয়াজগুলো পচে যাওয়াতে তা ফেলে দিতে হয়েছিল।’ সবাইকে প্রয়োজনের বেশি না কেনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে যার যতটুকু প্রয়োজন সেইটুকু আপনারা সংগ্রহ করেন। এই কারণে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলে বাজার জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে যার টাকা আছে সে হয়ত কিনতে পারছেন কিন্তু যারা সীমিত আয়ের তাদের জন্য তো এত কেনা সম্ভব না, তাদের কষ্ট হয়ে যায়। অন্যকে এভাবে কষ্ট দেয়ার অধিকার কারও নেই। বাজার মনিটরিং বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমি বলব আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এটা নজরদারিতে রাখা উচিত। সাধারণ মানুষের প্রতিও আহ্বান জানাব আপনারা নজরদারিতে রাখেন। অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, আর জিনিসপত্রের মজুদ কারই করা উচিত না। কাজেই সবাই স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারেন।’ যারা গ্রামে আছেন বা যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, সবই আছে। যারা গ্রামে যাচ্ছেন তারা একটা কাজ করতে পারেন, নিজের মাটি আছে, তাতে ফসল ফলান, তরকারি লাগান।’ সবাইকে আশস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরসহ সকলের সঙ্গে বসেছি। আমাদের যে রিজার্ভ আছে তাতে আগামী একবছরের খাবার ক্রয় করার মতো সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। কাজেই সেই দিক থেকেও দুঃচিন্তা করার কোন কারণ নেই।’ বিদেশ থাকা আসা প্রবাসীদের ঘোরাঘুরি না করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তারা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবেন না। কারণ আপনি তো নিজে সংক্রমিত হতে পারেন, নিজের পরিবারকে সংক্রমিত করবেন আবার আরও ১০ জনের মাঝে ছড়াবেন। কাজেই অন্যরা জীবনকে এভাবে বিপদগ্রস্ত করা মোটেই সমীচীন নয়। সবাই এ ব্যাপারে সচেতন হবেন এটাই চাই। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তারা অনেক সময় এর বাহক হয়ে থাকেন। যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে- তারা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের সকলের নিরাপত্তার জন্য ১৪টা দিন যাতে কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। তার মাধ্যমে যাতে তার পরিবারের সদস্য ও সাধারণ জনগণ কেউ যেন সংক্রমিত না হয়, সেই ব্যাপারে তাদের নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলকে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। হাঁচি, কাশি আসলে কাপড় দিয়ে নাক ঢেকে রাখতে হবে বা কনুই দিয়ে হাতটা ঢেকে রাখা অথবা যেখানে সেখানে না যাওয়া। বেশি করে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সকলেই ভিটামিন ‘সি’ বেশি করে খাবেন। এখন ভিটামিন ‘সি’র অনেক কিছুই বাজারে আছে। টমেটো, কমলা লেবু, মৌসুমি ফল, টক জাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়া। এটা প্রচুর খেলে করোনাভাইরাসের প্রতিরোধ শক্তি শরীরের মাঝে জমা হবে।’ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেয়া ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিভাবে এই ভাইরাস থেকে আমরা জনগণকে মুক্ত রাখতে পারি, সেখানে প্রতিদিনই এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া এবং তা প্রচারেরও ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর এই ব্যাপরে যথেষ্ট সতর্ক এবং তারা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। সেই দিক থেকে বলব বাংলাদেশ এখনও মোটামুটি ভাল আছে।’ তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সতর্কতা বার্তা দেয়া হচ্ছে। আমি শুধু আশা করব আমাদের দেশবাসী যাতে এটা মেনে চলে। যখন চীনে করোনাভাইরাস দেখা দিল তখন থেকেই আমরা কিন্তু সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সেখান থেকে ৩১৫ জন শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে এনে তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে ছেড়েছি। যারাই বিদেশ থেকে আসছেন তাদের আমরা পরীক্ষা করছি। আর যার ভেতরে এতটুকু সন্দেহ আছে তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা কয়েকটি হাসপাতালও সুর্নিদিষ্ট করে দিয়েছি, যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডাক্তার-নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার, নার্সসহ যারা কর্মকর্তা আছেন তাদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করছি। ইমিগ্রেশনে যে সকল পুলিশ কর্মকর্তা ও সেখানে যারা কর্মরত আছেন সকলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বোপরি নিরাপত্তার জন্য যখন যা প্রয়োজন হয় সেটা আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই এদিক থেকে আমরা আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইইডিসিআর সতর্ক আছে এবং দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এসব পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে মানুষ সতর্ক থাকে এবং এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভাল। সরকার জনগণকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে এক স্থানে কয়েকজনের সমাগমকে নিষিদ্ধ করেছে। আর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বাতিল করেছি এবং এর মধ্য দিয়ে সবাই বুঝতেই পারছেন যে আমরা জনগণের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের প্রতি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, আগামীতেও জনসমাগমের মতো অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হবে। বিশেষ করে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে আমাদের পুষ্পমাল্য অর্পণের কথা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। আলোচনা সভা সেটা আমাদের স্থগিত রাখতে হবে। নিজের মতো করে, আমরা স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব। কিন্তু এই লোক সমাগমরা আমাদের বন্ধ করে দিতে হবে। যাতে কোনভাবে এই সংক্রামক ব্যাধি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ও ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম মহিউদ্দিন।
×