ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবার নজর সেদিকেই

বিশটির বেশি প্রতিষেধক তৈরিতে চলছে দুরন্ত গতির গবেষণা

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২২ মার্চ ২০২০

বিশটির বেশি প্রতিষেধক তৈরিতে চলছে দুরন্ত গতির গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ^ব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়েছে কোভিড-১৯। চীন থেকে উৎপত্তি এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে একটা বড় অংশ বয়স্ক। বিভিন্ন দেশ এখন বয়স্কদের চিকিৎসা তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। নজর প্রজন্মকে বাঁচানোর। এ পরিস্থিতিতে কবে মরণব্যাধি এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে সবার নজর এখন সেই দিকে। কোন কিছুতেই যখন করোনা থেকে মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না তখন একমাত্র ভরসাই ভ্যাকসিন। এই ভাইরাস প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য চলছে দুরন্ত গতিতে গবেষণা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোন দেশের পক্ষ থেকে সুখবর মেলেনি। বলা চলে এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য কোন ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এই মুহূর্তে ২০টিরও বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি অন্যান্য প্রাণীর ওপর পরীক্ষা না চালিয়েই মানুষের দেহে পরীক্ষা করা শুরু করেছে। তারা এটি নিরাপদ কিনা এবং এর কার্যকারিতা আছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য বিজ্ঞানীরা এখনও অন্য প্রাণীর দেহে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ধাপে রয়েছে এবং এ বছরের শেষভাগের মধ্যে ফল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা এ বছরের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরি করতে পারলেও এটিকে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। পৃথিবীতে যে কোন রোগের ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে। অতীতে তাই দেখা গেছে। বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে আড়াই লাখের বেশি। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে সব মিলিয়ে কমপক্ষে ২০টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আবিষ্কৃত হবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন। বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসের ২০ ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ এক ধরনের রেকর্ড। এত কম সময়ে আগে কখনও কোন রোগের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা যায়নি। কোভিড-১৯ জিন সিকোয়েন্স তৈরির মাত্র ৬০ দিনের মাথায় এসব ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরী কর্মসূচীর টেকনিক্যাল লিড মারিয়া ভ্যান কেরখোভে বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত ও নাটকীয়ভাবে এগোচ্ছে। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য, তার চেয়েও দ্রুত এগোতে পারছি আমরা। সার্স ও মার্স যখন ছড়িয়েছিল, ওই সময় থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি। আগের গবেষণা নতুন ভাইরাসের ক্ষেত্রে কাজে লাগছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ-ও বলে দিয়েছে যে, জনসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী ওষুধ বানাতে আরও অনেক পথ পার হতে হবে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গবেষণা শেষে একটি নিরাপদ ওষুধ তৈরি করতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরী কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক মাইক রায়ান বলছেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী। কারণ একটি খারাপ ভাইরাসের তুলনায় একটি খারাপ ভ্যাকসিন বেশি অপকারী। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, নতুন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে বিজ্ঞানীরা ‘অবিশ্বাস্য গতিতে’ এগিয়ে চলেছেন। এটি কখনই সম্ভব হতো না, যদি না চীন ও অন্যান্য দেশ কোভিড-১৯’র জিনেটিক সিকোয়েন্স অন্যান্য দেশকে না জানাত। ১৯৭৬ সাল থেকে এই রোগের বিষয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা ও বিজ্ঞানীরা ওয়াকিবহাল। ২০১৪ সালে এই রোগ পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। মহামারী চলার সময় থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন বায়োটেক প্রতিষ্ঠান ইবোলার ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর অবশেষে ২০১৯ সালের নবেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইবোলার একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনকে ব্যবহারের উপযোগী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মাইক রায়ান বলেছেন, পৃথিবীর পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য একটি উপযোগী ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে অনেক সাবধানী পদক্ষেপ নিতে হয়। যদি একটি ভ্যাকসিন তৈরি করাও যায়, তখন আরও অনেক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক বাধার মুখোমুখি হতে হবে। কারণ নতুন করোনাভাইরাস ঠেকাতে হলে বিশ্বের সব মানুষকে এই ভ্যাকসিন দিতে হবে। শত শত কোটি মানুষের জন্য বিপুল পরিমাণে এই ভ্যাকসিন তৈরি করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সবাইকে এই ভ্যাকসিন দেয়া ও তা নিতে রাজি করানোও কঠিন কাজ। চীনের উহানে গত ডিসেম্বরে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ জন। মারা গেছে দুইজন। গত কয়েক মাসে ছয় লাখ ২৪ হাজারের বেশি প্রবাসী বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তারাই মূলত করোনার বাহক বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শনিবার বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আংশিক অথবা পুরোপুরিভাবে জরুরী অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
×