ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা রোগী থাকায় মিরপুর এক বাড়ি লকডাউন

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২২ মার্চ ২০২০

করোনা রোগী থাকায় মিরপুর এক বাড়ি লকডাউন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মিরপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পরিবারে থাকায় পুরো বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এদিকে খিলগাঁওয়ে একটি বাড়িতে সদ্য ফেরত ইতালিপ্রবাসী আশ্রয় নেয়ায় সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাসিন্দার মাঝে। পুলিশ কয়েক দফা ওই বাড়িতে হানা দিলেও ওই প্রবাসী বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য বহু বিদেশফেরত বনশ্রী এলাকায় অবস্থা নিয়েছে। তা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শনিবার রাজধানীর মিরপুরে উত্তর টোলারবাগের একটি বাসায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর পরিবার থাকায় পুরো ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে। একই সঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটি নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। ওই ভবনের বাসিন্দাদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ আশপাশে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ভবনের বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাসিন্দাদের কেউ যেন বের হতে না পারেন, সেজন্য এবং ভবনটিতে বাইরে থেকে কারও প্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি চলছে। সূত্র জানায়, ভবনটিতে করোনাভাইরাস পজেটিভ একজন ব্যক্তি ছিলেন। ফলে ওই ব্যক্তির পরিবারসহ ভবনটির বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে আইইডিসিআর। এছাড়া ওই ভবনে সদ্য কানাডা ও জাপান থেকে আসা কয়েক প্রবাসী রয়েছেন। এদিকে খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা কে ব্লকের মেইন রোডের ১৬ নম্বর সাকিব ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে সদ্য ফেরত ইতালিপ্রবাসী সাঈদ জামাল আশ্রয় নেয়। এটি জানাজানি হওয়ায় ওই ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভবনের মালিক সোহেল রানা বিষয়টি থানা পুলিশকে জানান। ৫দিন ধরে পুলিশ ওই বাড়িতে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু ইতালিপ্রবাসী সাঈদ কামাল কোনভাবেই সেখান থেকে বের হচ্ছেন না। খিলগাঁও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, গত ১৫ মার্চ রাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর ইতালিপ্রবাসী ওই ব্যক্তি গোপনে দক্ষিণ বনশ্রীর ষষ্ঠ তলার পশ্চিমপাশের একটি ফ্ল্যাটে আশ্রয় নেন। সেখানে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকেন। ঘটনার চারদিন পর থানা পুলিশ জানান ওই ভবনের মালিক সোহেল রানা। সেদিন থেকে প্রতিদিন পুলিশ তিন থেকে চার দফা ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু ইতালি ওই প্রবাসী ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তাকে সরকারী হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়। ওসি জানান, প্রবাসী এই নির্দেশ না মানায় তাকে রুম থেকে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এদিকে ওই সাকিব ভবনের মালিক সোহেল রানা জনকণ্ঠকে জানান, সদ্য ফেরত ইতালিপ্রবাসী সাঈদ জামালকে সরকারী হোম কোয়ারেন্টাইনে যাবার অনুরোধ করা হলে তিনি মানছেন না। তাকে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা বললেও তা শুনছে না। কারণ, বাড়ির ভাড়াটিয়া দফায় দফায় আমাকে জানাচ্ছে। এখন আমি কি করব? তিনি জানান, আইইডিসিআর দফায় দফায় ফোন করলেও তারা ধরছে না। পরে সদ্য ফেরত ইতালিপ্রবাসী সাঈদ কামাল মোবাইলে জনকণ্ঠকে জানান, ইতালি থেকে ১৫ মার্চ রাতে তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন। সেখানে তাকে চেক করার পর করোনাভাইরাস না পেয়ে ছেড়ে দেয়। পরে আমি খিলগাঁওয়ে দক্ষিণ বনশ্রীর ১৬ নম্বর সাকিব ভবনের ষষ্ঠতলা আমার স্ত্রীর ভাড়া বাসায় উঠি। এটি জানার পর গত দু’দিন ধরে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য বলছে। আমি করোনাভাইরাসবাহী রোগী নই। ভাল আছি। কেন আমি সরকারী কোয়ারেন্টাইনে যাব। তবে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা কুতুবে রাব্বানি জনকণ্ঠকে জানান, ১৫ মার্চ ইতালি শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে সোজা তাদের ভবনের ষষ্ঠতলায় ওঠেন। আসার পর তিনি কয়েক দফা বাইরে বের হয়ে কেনাকাটা করেন। তিনি জানান, চারদিন পর তারা জানতে পারেন, ষষ্ঠ তলার বাসিন্দা সাঈদ জামাল ইতালি থেকে দেশে এসে এখানে উঠেছেন। এটি জানাজানি হওয়ার পর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি বহু প্রবাসী এই এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আত্মগোনে আছেন।
×