ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় গাড়ি বিক্রি শূন্যের কোটায়

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২২ মার্চ ২০২০

করোনায় গাড়ি বিক্রি শূন্যের কোটায়

এম শাহজাহান ॥ করোনাভাইরাসের কারণে দেশে জাপানী ব্র্যান্ডখ্যাত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিক্রি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। স্থবির হয়ে পড়ছে আমদানি কার্যক্রম। এছাড়া শুল্ক বৈষম্যের শিকার হয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বেড়ে ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে, শুল্কায়ন বিভাগের বৈষম্যের কারণে নতুন গাড়ির শুল্ক কমছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার। ফলে এই সেক্টরটি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। এ অবস্থায় বছরভিত্তিক অবচয় নির্ধারণ করে স্পেসিফিক ডিউটি আরোপের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এদিকে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স এ্যান্ড ডিলার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) পক্ষ থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বৈষম্যের প্রস্তাব দেয়া হয়। বারভিডার প্রেসিডেন্ট আব্দুল হকের নেতৃত্বে এ খাতের ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করেন। এতে বলা হয়, দেশে নতুন গাড়ির চেয়ে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ককর বেশি। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার শুল্ক বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্য দূর না হলে দেশে এই গাড়ির বাজার থাকবে না। ভোক্তাদের নতুন খ্যাত নিম্নমানের গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় সিসি ও মোটরযানের প্রকৃতিভেদে স্পেসিফিক ডিউটি আরোপ করা যেতে পারে। সম প্রকৃতির ব্র্যান্ডনিউ মোটরযানের ওপর আরোপিত স্পেসিফিক ডিউটি থেকে বছরভেদে ও গাড়ির প্রকৃতিভেদে ১ বছর পুরনো ১০ শতাংশ, ২ বছর পুরনো ২০ ভাগ, ৩ বছর পুরনো ৩০ ভাগ, ৪ বছর পুরনো ৪০ ভাগ, ৫ বছর পুরনো ৫০ শতাংশ হারে অবচয় প্রদানপূর্বক রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। এতে আরও বলা হয়, ব্র্যান্ডনিউ গাড়ির মূল্য নির্ধারিত হয় আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে। এ প্রক্রিয়ায় আন্ডার ইনভয়েসিং এবং বিভিন্ন ফাঁকফোকর তৈরি করে শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। বৈষম্যের কারণে নতুন গাড়ির চেয়ে পুরনো গাড়ির মোট করা পতন বা টিটিআই বেশি দাঁড়াচ্ছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বেশি হওয়ায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিক্রি লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে যাওয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে। বারভিডার পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, গত দুই তিন বছর ধরে কিছু নেতিবাচক নীতিমালার কারণে রিকন্ডিশন্ড মোটরযান খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর ফলে- আমদানি ও বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পুরাতন গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় এবং নতুন গাড়ির শুল্ককর কম হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়েছে। তুলনা মূলকভাবে পুরাতন গাড়ির দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাগণ নিম্নমানের নতুন গাড়ি কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে ক্রেতা সঙ্কটে বিক্রিও প্রায় শূন্যের কোটায়। এ অবস্থায় তারা ব্যাংক ঋণের সুদের চাপ সামাল দিতে নীতি সহায়তা চান। এদিকে আমদানি বন্ধের কারণ দেখিয়ে বাড়তি দাম হাঁকছেন খুচরা যন্ত্রাংশের বিক্রেতারা। গত অর্থবছর বাংলাদেশে শুধু রিকন্ডিশন্ড গাড়িই আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৫০২টি, যা থেকে সরকার রাজস্ব পায় ১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ও বিপণন খাতে বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ প্রসঙ্গে আব্দুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার প্রভাবে সব দিক থেকে আমরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ব। ইতোমধ্যে গাড়ির আমদানি ও বিক্রি আশঙ্কাজনকহারে কমছে। শুল্কায়ন বৈষম্য একটি বড় সমস্যা। আগামী বাজেটে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু করা না হলে এ খাতটিতে বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। আশা করছি, সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার ব্যাংক ঋণের ইনস্টলমেন্টের বিষয়টাও সরকার দেখবে। এদিকে, দেশের অটোমোবাইল খাত পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি আসে জাপান, চীন, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ থেকে। মূলত সংযোজন করা গাড়িই আসে বেশি, তবে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যন্ত্রাংশ আমদানি করে স্থানীয়ভাবেও সংযোজিত গাড়ি বাজারজাত করছে দু’একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত দুই মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
×