ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনিশ্চয়তায় বিদেশে আটকেপড়া মার্কিনীরা

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২২ মার্চ ২০২০

অনিশ্চয়তায় বিদেশে আটকেপড়া মার্কিনীরা

লিন্ডা স্ক্রাগস ও মাইক রুস্টিসি মাচু পিকুর ইনকা ধ্বংসাবশেষ কমপ্লেক্সগামী দীর্ঘ আঁকাবাঁকা দুর্গম পথে পরিব্রাজকের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কয়েক মাস ধরে। তারা তাই বেশ শিহরণ বোধ করলেন যখন তাদের বিমান গত শুক্রবার অবতরণ করেছে পেরুর রাজধানী লিমায়। তারা তাদের সুদীর্ঘ দুর্গম পথ পাড়ির অংশবিশেষ সম্পন্ন করলেও এখন আটকে গেছেন লিমায় এক হোটেল কক্ষে এবং তারা জানেননা কখন ফিরে যেতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাস বিস্তার রোধের চেষ্টায় তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পর সমগ্র বিশ্বে হাজার হাজার লোকের মতোই আটকে গেছেন এ দম্পতি। -এপি পেরু ৬ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করে। স্ক্রাগস ও রুস্টিসি এর আগেই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার এক সপ্তাহ পর লিমায় এসে পৌঁছেন। পরিব্রাজকরা লিমায় পৌঁছার কয়েক দিন পর পেরুর প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারা এক জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেন এবং পেরুবাসীদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেন। কতজন আমেরিকান বা অন্য দেশের নাগরিক তাদের নিজ দেশের বাইরে আটকা পড়েছেন এর কোন সরকারী হিসেব নেই। কিন্তু এ দম্পতি কোভিড-১৯ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় বিদেশে আটকেপড়া অন্য পর্যটকদের মতো এক সীমাবদ্ধতার মধ্যে বন্দী হয়ে গেছেন। তারা নাশভিল ও টেনিসির বাসিন্দা। স্ক্রাগস ও রুস্টিসি টেলিফোন সাক্ষাতকারে এপিকে বলেন, পেরু ত্যাগের জন্য তাদের প্রায় ২৫ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোন ফ্লাইট পাননি। তারা পেরু ত্যাগ করতে না পারায় অন্তত ১৫ দিন তাদের হোটেল কক্ষে অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খাবার গ্রহণ বা সরবরাহ দ্রব্যের প্রয়োজন ছাড়া এ শহরের অর্থনৈতিক এলাকায় অবস্থিত এ হোটেল ত্যাগ করতে পারবেন না। দম্পতি বলেছেন, তারা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে সহযোগিতা বা তথ্য পাচ্ছেন অত্যন্ত কম। তারা বলেন, এক পর্যটক সহযোগিতার জন্য মার্কিন দূতাবাসে গেলে তাকে বের করে দেয়া হয় এবং অনলাইনে তথ্য পাওয়ার জন্য একটি ইমেইলও রেজিস্টার পাঠানোর জন্য বলা হয়। স্ক্রাগস ও রুস্টিসি অনভব ক্রছেন বিশ্ব যেন তাদের কাছে থেমে গেছে। স্ক্রাগস বলেন, ব্যাপকভাবে অস্ত্রসজ্জিত গার্ডরা রাস্তায় টহল দিচ্ছে। সারা বিশ্বে এ ভাইরাসে মৃত্যু সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে উঠেছে, কিন্তু এ সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মরক্কো, ইকুয়েডর ও অন্যান্য দেশে মার্কিন নাগরিকরাও এপিকে বলেছেন যে, পররাষ্ট্র দফতরের কাছে তারা যেন পরিত্যক্ত হয়ে ওঠেছেন। তারা বলেন, দূতাবাসগুলো তাদের সহযোগিতা করছেনা বা তাদের ফোনকল বা ইমেলে সাড়া দিচ্ছেনা। কেউ দূতাবাসে প্রবেশ করতে পারলেও সর্বশেষ তথ্যের জন্য দূতাবাসের ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করতে বলা হয় এবং তাদের নিজেদের দেশে ফেরার জন্য বিমান ভাড়া করতে বলা হয়। ডোরা ফ্রিগুইরিডো (৩৭) নামে নিউজার্সির নিউইয়র্কের এক আমেরিকান শুক্রবার চেষ্টা করেছেন আর্জেন্টিনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট রবিবার যথাসময়ে উড্ডয়ন করবে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ডোরা বুয়েনর্স এয়ার্সে গেছেন এক আর্জেন্টাইনকে বিয়ে করতে। তার স্বামী মার্কিন রেসিডেন্সি পাননি বলে এখনও যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেননি। ডোরা বলেন, প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি দেশে যেতে পারছিনা, একটা চাপ অনুভব করছি। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট শুক্রবার লকডাউন ঘোষণা করেছেন। তার ফ্লাইট শুক্রবার বাতিল করা না হলেও তিনি নিশ্চিত নন রবিবার তার ফ্লাইট কার্যকর থাকবে কি না এবং তিনি এটাও বুঝতে পারছেন না যে কী করে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। তিনি বলেন, বয়স্ক মা-বাবাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশে ফেরা আমার যথার্থ প্রয়োজন। নেবরাসকায় ওমাহার বাসিন্দা শিল্পী ক্যাথরিন ফার্গুসন (৭৭) তার স্বামীকে নিয়ে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে এক হোটেলে অবস্থান করছেন। হোটেলে অবস্থান করছেন আরও ১০ আমেরিকান। এদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ৬০ -এর ওপর। ফার্গুসন ও তার স্বামী অন্য তিন বন্ধুর সঙ্গে গত মাসে ভ্রমণে বেরোন। তারা যাত্রা করেন ফ্রান্স থেকে। ফ্রান্সে তখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে। ফার্গুসন বলেন, তারা এখন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার উদ্দেশে একটি বিমান ভাড়া করার জন্য মরক্কো সরকারের অনুমতি গ্রহণের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমরা সত্যিই এখানে আর থাকতে চাই না। মরক্কোতে পরিস্থিতি ক্রমেই মন্দের দিকে যাচ্ছে। তাদের হোটেল ত্যাগে নিষেধ করা হয়েছে এবং তারা কাসাব্ল্যাঙ্কায় মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
×