ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকে ভয় নয়, সহজে করুন জয়

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২২ মার্চ ২০২০

করোনাকে ভয় নয়, সহজে করুন জয়

করোনাভাইরাস বা কভিট-১৯ নিয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের ‘সাউথ চায়না সিফুড হোলসেল মার্কেট’ থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বাজারে বাদুড়, বনবিড়াল, সাপের মতো বন্য প্রাণীগুলো খাওয়ার জন্য রীতিমত জীবন্ত সাঁজিয়ে বিক্রি করত। বেশ কয়েকটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে- এমনটা দাবি করছেন গবেষকরা। অন্যদিকে, ১৯৩০ এর দশকে প্রথম করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সায়েন্স ডাইরেক্ট ডটকমে ২০১২ সালের এক গবেষণামূলক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মুরগির ‘এ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন‘ দেখা দিলে জানা যায় ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস (আইবিভি) এর মূল কারণ। আর ষাটের দশকে প্রথমবারের মতো মানুষের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পান বিজ্ঞানীরা। আর করোনাভাইরাসের আরেকটি রূপ হলো সার্স ভাইরাস (সেভার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম), যা ২০০২ সালে চীনে ছড়িয়ে পড়ার কারণে কমপক্ষে ৭৭৪ জন মানুষের প্রাণ ঝড়েগেছে। সার্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল তখন ৮ হাজার ৯৮ জন। সে হিসেবে কভিড-১৯ অনেকটা দ্রুততার সঙ্গে ছড়াচ্ছে। গবেষকরা বলেছে, সার্স ভাইরাসও বাদুড় থেকে বনবিড়ালে সংক্রমিত হয়েছিল। পরে তা মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছিল। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে সুস্থ থাকার পরেও মাস্ক সংগ্রহ করতে দৌড়াচ্ছি। এ সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু কিছু মুনাফালোভী মহল কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছে। সরকারের সমালোচনাও করছে। আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো বলেই দিয়েছে, সরকার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থ! কিন্তু কীভাবে ব্যর্থ-এটির সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ তিনি তুলে ধরতেও ব্যর্থ হয়েছেন। নভেল করোনাভাইরাস-১৯ নিয়ে নোংরা রাজনীতি না করে বরং কিভাবে সবার সচেতনতার মাধ্যমে করোনাকে জয় করা সম্ভব-এটি নিয়ে আলোচনা কিংবা রাজনৈতিক বক্তব্য জাতি আশা করে। আমাদের মনে রাখা দরকার, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চাইলে যে কোন ঝুঁকি নিয়ে তিনি মুজিববর্ষের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশটি করতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে যেখানে দেশ ও দেশের জনগণের নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন-সেখানে এক শ্রেণীর বিতর্কিতগোষ্ঠী মুজিববর্ষকে ঘিরে করোনাভাইরাসের ওপর ভর করে নানাবিধ গুজব ছড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে-এটি সত্যিই লজ্জাজনক এবং অনভিজ্ঞতার বহির্প্রকাশ। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জন্মশতবার্ষিকী বিশাল আকারে করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেখানে লাখো মানুষ জমায়েত হবে। সেই জমায়েত বন্ধ করে দিয়েছি, তার কারণ কোনভাবে মানুষের যেন ক্ষতি না হয়। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা আমি চাই না।’ করোনাকে ভয় করবেন না কারণ, করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করার জন্য আপনিই যথেষ্ট। শুধু আপনাকে সভ্যতার আদলে থাকতে হবে। গতানুগতিক পুরনো অভ্যেস পরিবর্তন করতে হবে। আপনি সাবধান-সতর্ক থাকলে আপনার সঙ্গে-সঙ্গে আপনার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবাই সুস্থ থাকবে। যেমন- আমরা সচরাচর হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় পাশের লোকের কথা মোটেও চিন্তা করি না। আমাদের এই প্রবণতা দূর করতে হবে। আমার-আপনার হাঁচি, কাশি থেকে যে জলীয় পদার্থ নির্গত হয়-এটি কি সবধরনের ভাইরাসমুক্ত? এখানে একটু অন্যভাবে চিন্তা করে দেখুন- আমার হাঁচি, কাশি থেকে আপনার শরীরে জলীয় পদার্থ পড়লে-এটা কেমন দেখায়? আবার আপনার শরীরে না পড়–ক, পাশে থাকা অন্য কোনও বস্তু-চেয়ার, টেবিল, বাড়ির সিঁড়ি বা অন্যের হাত এখানে স্পর্শ হবে-এমন বস্তুর ওপর পড়াও নিশ্চয় সভ্যতার অংশ হতে পারে না। তাই এই জায়গায় আমাদের একটু সাবধান সতর্ক হতে হবে। হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। আর সেই টিস্যু যেখানে-সেখানে না ফেলে বরং ময়লা ফেলার জায়গায় ফেলুন। ভাল করে হাত ধুয়ে ফেলুন। সাবান ও পানি কাছে না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত জীবাণুমুক্ত করার জেল ব্যবহার করুন। অথবা হাত পরিস্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি আপনার নাক, কান, মুখ ও চোখে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আর ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত-এমন অসুস্থ লোকজনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। আরেকটি বিষয়, বর্তমানে যেহেতু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে, তাই জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এমন পরামর্শ দিয়েছেন। এরপরেও যদি আপনি নিজেকে অসুস্থবোধ করেন কিংবা আপনার কাশি হচ্ছে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আপনি শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্টবোধ করছেন-তাহলে প্রথমেই হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি কিংবা ডাক্তারখানায় দৌঁড়ে না গিয়ে ফোনে আপনার পরিচিত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তার পরামর্শ নিয়ে কাজ করুন। এ ব্যাপারে লন্ডনে রয়্যাল কলেজের একজন চিকিৎসক ড. জনাথন লিচ বলছেন, ‘সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে রোগী আতংকিত না হওয়া। হয়তো দেখা যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ঠা-া কাশি বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে, এটি করোনাভাইরাসে নয়।’ আর অসুস্থবোধের বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র নার্স ফিলিপা হবসন বলছেন, ‘আপনার শরীরে যদি উপসর্গ (হাঁচি, শুকনো কাশির সঙ্গে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মাংসপেশিতে ব্যথা) দেখা দেয়, তাহলে নিজেকে আর সকলের কাছ থেকে আলাদা করে রাখুন। এবং ডাক্তারকে ফোন করে পরামর্শ নিন। ভাল মতো খাওয়া দাওয়া করবেন, খেয়াল রাখবেন শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না যায় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম করুন।’ আর করোনাভাইরাসই একমাত্র অসুস্থতার কারণ-এটি মোটেও ভাবা যাবে না। আপনি অন্য কোনও কারণেও অসুস্থ হতে পারেন। এর মাঝেও যদি আপনার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা যায় তাহলে আপনি আগে থেকে যেসব ওষুধ খাচ্ছিলেন, সেগুলোও আপনাকে সেবন করতে হবে। আর অসুস্থ অবস্থায় আপনার যদি ওষুধ ফুরিয়েও যায় তাহলে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের অন্য কাউকে দিয়ে হলেও সেসব ওষুধ আনিয়ে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে লন্ডনে ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রফেসর পিটার ওপেনশ বলছেন, ‘এরকম অসুস্থ লোকজনের ঘরে কমপক্ষে চার সপ্তাহের ওষুধ থাকা দরকার।’ ঘরে অতিরিক্ত কিছু খাবার দাবার রেখে দেওয়াও ভাল, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। পাঠক! করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিও পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হতে পারেন এবং ইতোমধ্যে হয়েছেনও কারণ, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ সমস্যা অনুভব করে থাকেন। ফলে আশা করা যাচ্ছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ ব্যক্তিই সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে বয়স্ক, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো রোগী বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের জন্য এই ভাইরাস বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের মতো রোগগুলোর কোন টিকা আবিষ্কার হয়নি। তবে গবেষকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কারণ, এ ধরনের ভাইরাস এর আগে দেখা যায়নি। ফলে চিকিৎসকরা এর আগ পর্যন্ত এ ধরনের ভাইরাস সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলেন। তাই এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখবেন, করোনাভাইরাস ফ্লুর মতো নয়। এটি একেবারেই আলাদা ধরনের ভাইরাস। ফ্লুর কারণেও আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এবং কোন কোন ব্যক্তির বেলায় এই ফ্লু গুরুতর রূপ নিতে পারে। তবে ফ্লু-র টিকা নেয়া থাকলে ভাল। বিশেষ করে যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, শিশু, যাদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা ছাড়াও গর্ভবতী নারীরাও ফ্লু-র টিকা (ফ্লু জ্যাব) নিতে পারেন। তাছাড়া আপনার এ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট যদি তীব্র হয় এবং আপনার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এ ব্যাপারে এ্যাজমা ইউকে নামের সংস্থা বলছে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে প্রতিদিন ইনহেলার (সাধারণত বাদামী) নিন। করোনাভাইরাসসহ অন্য কোন ভাইরাসেও যদি আক্রান্ত হন তাহলে ইনহেলার এ্যাজমা এ্যাটাক থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। তবে নীল রঙের ইনহেলারটিও সবসময় সঙ্গে রাখুন। যদি দেখেন শ্বাস কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে তখন এটি ব্যবহার করতে পারেন। ডায়বেটিকসে আক্রান্তরা একটু বাড়তি সচেতন হতে হবে। যারা টাইপ-ওয়ান বা টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের বেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তাদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। ডায়াবেটিস ইউকে নামের একটি সংস্থার কর্মকর্তা ড্যান হাওয়ার্থ বলছেন, ‘যাদের ডায়াবেটিস আছে করোনাভাইরাস কিংবা কভিড-১৯ তাদের শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।’ তবে ভয়ের কারণ নেই। এখানে আপনাকে যা করতে হবে, ‘আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং কাশি, জ্বর এবং শ্বাস কষ্টের উপসর্গ থাকে, তাহলে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রার ওপর বেশি সতর্ক নজর দিতে হবে।’ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আরেকটি বিশেষ দিক হলো, আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন- যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে সমস্যা এবং দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা দুর্বল হলে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এবং এই অসুস্থতা মারাত্মক রূপও নিতে পারে। গর্ভবতী নারীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি- এমন কথা বলার পক্ষে এখনও কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সংক্রমণ এড়াতে অন্যদের মতো গর্ভবতী নারীদেরও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মেনে চলা উচিত। বাংলাদেশে কমবেশি প্রায় অনেকেই ধূমপান করে থাকে। প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন-কানুনসহ সরকারের নানামুখী উদ্যোগ থাকলেও হরহামেশাই জনসমক্ষে ধূমপান করতে দেখা যায়। আর ধূমপান ফুসফুস ও হৃদপি-ের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলে তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। পাঠক। একটা কথা মনে রাখবেন এবং আমিও ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, প্রকৃতি অনেক সময় বাধ্য হয়েই তার ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রকৃতির কাছে তার প্রতিটি জড় পদার্থ থেকে আরম্ভ করে জীব-প্রাণীর গুরুত্ব অনেক বেশি মুল্যবান। কিন্তু আমরা মানবজাতি অনেক সময় ভুলে যাই অথবা এটা মানতে চাই না। কথায় আছে, বন্যেরা বনেই সুন্দর। আপনার পোষা প্রাণীটার জীবন নিয়ে একবারও কি ভেবেছেন, আপনি তাকে বাধ্য করে খাঁচায় বন্দী করে রেখে আপনার আনন্দময় সময় কাটানোর মাঝে তার দুঃখকষ্টগুলো কেমন? বছরের পর বছর ধরে লালন-পালন করার পরেও আপনার পোষা প্রাণীটি সুযোগ পেলে কেন উড়ে বনেই চলে যায়! হাঁটার সময় আমি-আপনি আমরা অনেকেই বিনা প্রয়োজনে গাছের পাতা টেনে ছিঁড়ে ফেলে দেই। আমরা কি একবারও চিন্তা করে দেখেছি, গাছেরও যে প্রাণ আছে। গাছও আঘাত অনুভব করে! বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে পাখি শিকার হচ্ছে, যেভাবে বন উজাড় করা হচ্ছে, যেভাবে সাগর-নদীর গর্ভে পলিথিনে ভরে যাচ্ছে, যেভাবে বিষাক্ত গ্যাস সবুজ বনাঞ্চলকে গ্রাস করছে-কী হবে ভবিষ্যতে? আর কী অপেক্ষা করছে মানবজাতির জন্য? আজ সামান্য করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তৃতীয় বিশ্বের সম্ভাব্য শক্তিশালী দেশ চীনও সময়ের কাছে নিজেদের সপে দিয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য কৌশল অবলম্বন করেছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে এ ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করতে। কিন্তু এর মাঝেও বিশ্বের বিভিন্ন মসজিদ-মন্দির থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। সৌদি সরকার ওমরাহ হজ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, প্রকৃতির কাছে মানব সভ্যতা সত্যিই অসহায়। বাদুর, বনবিড়াল বা অন্যসব পোকামাকড় মনুষ্য খাবার হিসেবে নিশ্চিত করার আগে অবশ্যই গবেষণার দাবি রাখে। আমরা আশা করি মানবজাতি অতীতের ন্যায় ঘুরে দাঁড়াবে। খুব শীঘ্রই এই সঙ্কট থেকে বিশ্বমানব সম্প্রদায় উঠে আসবে। আর বাংলাদেশ আমাদের সকলের। আবেগ নয়, বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করুন। গুজব না রটিয়ে, আতঙ্কিত না করে, বিনা কারণে দোষারোপের সমালোচনা পরিহার করে সবাই মিলে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সাবধান, সতর্কতা আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা-একজন সুনাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব পালন করাই হবে দেশাত্মবোধের পরিচায়ক। অযথা মাস্ক, হেক্সাসল, স্যানিটাইজার নিয়ে বাসায় মজুদ করার দরকার নেই। একটা সময় আপনার কোন আত্মীয়ের বিশেষ প্রয়োজনেও তখন আপনার-আমার তৈরি করা কৃত্রিম সঙ্কট তার জীবনকে আরও সঙ্কটময় করে তুলতে পারে। বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বেশ সতর্কতার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় হাসপাতাল, ডাক্তারদের প্রস্তুত রেখেছে। তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুজিববর্ষের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানমালা স্থগিতসহ ছোটও করা হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ তথ্য জানুন। প্রথম সারির গণমাধ্যমের তথ্য ছাড়া তথাকথিত গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলুন। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছাড়া ফেসবুকের তথ্যকে বিশ্বাস করবেন না। আর ফেসবুকে কোনও কিছু ভাইরাল, শেয়ার করার আগে একটু যাচাই-বাছাই করুন। করোনাভাইরাস বা এ নিয়ে বিশেষ কোন তথ্য জানার প্রয়োজনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইনে (১৬২৬৩ বা ০১৯৪৪৩৩৩৪৪৪) কল করুন। এ বিষয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘অসুস্থ কেউ যদি আইইডিসিআর-এর হটলাইনে যোগাযোগ করেন, তাহলে আইইডিসিআর-এর টিম বাড়ি থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করবে।’ সঠিক তথ্য-উপাত্ত আর আপনার সচেতনতাই আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো আছে। ‘করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমানোর উপায় হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়ম কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা’-ব্রিটিশ লিভার ট্রাস্টের এই কথাটি তুলে ধরে অবশেষে বলব- করোনাকে ভয় নয়, জয় করুন এবং নিজের অভ্যাসে সভ্যতা আনুন। তথ্য সূত্র : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিবিসি, এনডিটিভি, আইইডিসিআর লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) [email protected]
×