ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রসম্পদের প্রাচুর্য

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২২ মার্চ ২০২০

সমুদ্রসম্পদের প্রাচুর্য

বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র নানাভাবেই অবদান রেখে চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যে বলা হচ্ছে, বিশ্বে ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের যোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। বাংলাদেশের মালিকানায় রয়েছে বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিশাল এ জলসীমাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশের স্থলভাগে যে পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান তার সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, এই সম্পদের প্রায় সমপরিমাণ (৮১ শতাংশ) সম্পদ সমুদ্র তলদেশে আছে। ‘সমুদ্র বিজয়’ নিয়ে যতটা মাতামাতি হয়েছে সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে ততটা উদ্যোগ কিন্তু পরিলক্ষিত হয়নি। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালে ‘ব্লুু ইকোনমি সেল’ নামে একটি ক্ষুদ্র প্রশাসনিক সেল গঠন ছাড়া তেমন কোন অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ যে বিশাল অঞ্চলের মালিকানা পেয়েছে সেখানে অন্তত চারটি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালানো হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জন করা সম্ভব। এই ক্ষেত্র চারটি হলো তেল-গ্যাস উত্তোলন, মৎস্যসম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটন। বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছসহ ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি এবং বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক ও জৈব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আছে। ২০১৭-১৮ সালে দেশে উৎপাদিত মোট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন মাছের মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনই এসেছে সমুদ্র থেকে। বিশ্বের ৬৭টি বৃহৎ সামুদ্রিক পরিবেশের (লার্জ মেরিন ইকোসিস্টেম) মধ্যে বঙ্গোপসাগরেই সবচেয়ে বেশি নদীবিধৌত পানি ও পলি প্রবেশ করে। ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত এবং হাজারও নদ-নদীর পুষ্টিসমৃদ্ধ পানিই বঙ্গোপসাগরকে সমৃদ্ধ করেছে অনন্য জীববৈচিত্র্য দিয়ে। আমাদের সমুদ্রসীমায় জীববৈচিত্র্যের বিশাল সমাহারের মধ্যে রয়েছে মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক, স্তন্যপায়ী প্রাণী, প্রবাল, শৈবাল ইত্যাদি। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বিভিন্ন প্রজাতির এ্যাকুরিয়াম মৎস্যসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক বিশাল চারণক্ষেত্র। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় প্যারাবন এলাকা স্বাদু, অল্প লবণাক্ত এবং সামুদ্রিক সব প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও নার্সারি ক্ষেত্র হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২০০ মিটারের অধিক গভীরতায় অতি পরিভ্রমণশীল মৎস্য প্রজাতি এবং গভীর সমুদ্রে টুনা ও টুনা জাতীয় মাছের প্রাচুর্য রয়েছে। এদিকে ‘সেভ আওয়ার সি’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন টন মাছ ধরা পড়ে। এর মধ্যে ০.৭০ মিলিয়ন টন মাছ বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা আহরণ করে। নানা প্রজাতির মূল্যবান মাছ ছাড়াও সমুদ্রসীমায় নানা ধরনের প্রবাল, গুল্মজাতীয় প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির চিংড়ি, তিন প্রজাতির লবস্টার, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়। উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক জেলের জীবিকার যোগান আসে এই সমুদ্র থেকেই। তবে ইতিবাচক তথ্য হলো, ২০১৬ সাল থেকে আরভি মীন সন্ধানী নামের সমুদ্র গবেষণা ও জরিপ জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্রের চিংড়িসহ তলদেশীয় ও উপরিস্থ মাছের জরিপের কাজও চলছে। যার কার্যক্রম সাগরের ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। যদি এসব মূল্যবান খনিজ উত্তোলন ও আহরণ সম্ভব হয় তবে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা নিঃসন্দেহে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।
×