ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যোগ নেই

খালেদাকে মুক্ত করতে না পেরে স্বজনরা হতাশ

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২১ মার্চ ২০২০

 খালেদাকে মুক্ত করতে না পেরে স্বজনরা হতাশ

শরীফুল ইসলাম ॥ শত চেষ্টা করেও কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পেরে তার স্বজনরা হতাশ। তারা চেয়েছিলেন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠাতে। কিন্তু ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করেও তাতে সফল হননি। আর করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন আর এ বিষয়ে নতুন করে কোন চেষ্টা তদ্বির করছে না খালেদা জিয়ার স্বজনরা। উল্লেখ্য, কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠাতে গত কয়েক মাস তার স্বজনরা দৌড়ঝাঁপ করেছেন। তার মুক্তি চেয়ে সর্বশেষ ৪ মার্চ পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করে। কিন্তু প্যারোলের জন্য আবেদন না করায় এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। আর জামিনের জন্য করা আইনজীবীদের আবেদনও হাইকোর্ট আমলে নেয়নি। তবে খালেদা জিয়ার স্বজনরা চেয়েছিলেন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে যে কোন উপায়ে তাকে মুক্ত করতে। এদিকে বার বার চেষ্টা করেও স্বজনরা খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করতে রাজি করাতে পারেননি। এ কারণে প্যারোলের জন্য আবেদনও করা হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল প্যারোলের জন্য আবেদন করলে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আইনগতভাবে বিবেচনা করে দেখা হবে। সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির কারণে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়ে নতুন করে আর স্বজনরা কোন চেষ্টা চালাতে পারছেন না। তা না হলে এখনও এ বিষয়ে তারা সোচ্চার থাকতেন। তাই এতদিন স্বজনরা দেশ-বিদেশের যেসব মহলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে তৎপর ছিলেন তা আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই তাকে মুক্ত করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাতে থাকেন স্বজনরা। প্রথমদিকে দলের নেতারাও এ বিষয়ে স্বজনদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেন বিএনপি নেতারা। তবে এক পর্যায়ে বিএনপি নেতারা স্বজনদের চেষ্টায় আর সহযোগিতা করেনি। তারপর থেকে স্বজনরা নিজেদের অবস্থান থেকেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে থাকে। এ বছরের শুরু থেকেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তৎপরতা জোরদার করে স্বজনরা। প্রথমেই তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে সুপারিশ করার অনুরোধ করে। সেই সঙ্গে তারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে তাকে প্যারোলে মুক্ত করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে না পারা ও প্যারোলের জন্য আবেদন করতে খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় স্বজনরা এ বিষয়ে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে না পারায় স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেনি। তাই স্বজনদের এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর পর স্বজনদের ইচ্ছায় আইনগতভাবে জামিন পাওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। পাশাপাশি স্বজনদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে দেনদরবারও চালানো হয়। স্বজনরা আশা করেছিলেন হয়তো তাঁকে জামিন দেয়া হবে। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেয়ায় খালেদা জিয়ার স্বজনরা হতাশ হয়। এর পর খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে আবেদন করে নতুন উদ্যমে চেষ্টা চালান স্বজনরা। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পাশাপাশি একই দিনে আইন মন্ত্রণালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেও এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেন। কিন্তু এভাবে তাকে মুক্তি দেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে আইনগতভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু স্বজনদের পক্ষ থেকে করা আবেদনে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে কিছু না বলে তার গুরুতর অসুস্থতার কথা জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়। এদিকে খালেদা জিয়ার স্বজনরা তার মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও বিএনপি নেতারা এ আবেদনের বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখাননি। আর এ কারণেই এই আবেদনের পর সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে করা আবেদনে কি আছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এটা পরিবারের সদস্যরাই বলতে পারবেন। সরকার প্যারোলে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করলে আপনারা আবেদন করবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এটা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এবং পরিবারের বিষয়। সর্বশেষ কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া উচিত। তবে আমরা তাকে জীবিত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে পারব কি না সেটা নিয়ে সন্দিহান। শ্বাসকষ্টের কারণে উনি নিশ্বাস নিতে পারছেন না। তার বাম হাতটা সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না, কোন কিছু খেতে পারছেন না, খেলেও বমি হচ্ছে। এ অবস্থায় তাকে দ্রুত বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। প্রথমদিকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য স্বজনদের আবেদন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের ফোনালাপ ও দলীয় আইনজীবীদের হাইকোর্টে জামিনের আবেদন এবং দলীয় এমপিদের দেনদরবারসহ বিভিন্নভাবে চেষ্টা-তদ্বির চালানো হয় তাকে মুক্ত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার জন্য। এক পর্যায়ে দলীয় নেতারা এ ইস্যুতে চুপ হয়ে গেলে স্বজনরা সোচ্চার হয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে কারাবন্দী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। পরিবারের সদস্য ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানানোর পর গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কেবিনে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে। এর পর বেশ ক’বার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান। তবে খালেদা জিয়াকে প্যারোলের বিষয়ে রাজি করাতে পারেননি তারা। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, স্বজনরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি। তারা চেয়েছিলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসা করাতে। এ জন্য লন্ডনে যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও সফল না হওয়ায় খালেদা জিয়ার স্বজনরা হতাশ হয়েছেন। আর বিএনপির পক্ষ থেকে আইনগতভাবে তাকে মুক্ত করার যাবতীয় চেষ্টা চালানো হয়। তবে খালেদা জিয়া বা বিএনপির কোন নেতা প্যারোলে মুক্তির পক্ষে নন। তাই সরকারের পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদনের কথা বলা হলেও বিএনপি এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আর খালেদা জিয়া রাজি না থাকায় তার স্বজনরাও প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করেননি।
×