ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবিসংবাদিত নেতার প্রতিবাদী মুখ, দেশ গড়ার সংগ্রাম

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২১ মার্চ ২০২০

অবিসংবাদিত নেতার  প্রতিবাদী মুখ,  দেশ গড়ার সংগ্রাম

মোরসালিন মিজান ॥ মুজিববর্ষ চলছে। গত ১৭ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো। তবে তারও আগে থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিল উদ্যাপন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে সরকারী বেসরকারীভাবে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রাক আয়োজনগুলোর অন্যতম একটি নাসির আলী মামুনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে আয়োজিত প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘জয় বঙ্গবন্ধু।’ এতে মহান নেতার ২৫টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। মাত্র ২৫টি। তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তোলা। নাসির আলী মামুনের ক্যামেরায় তোলা বলেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেশ বিদেশের অসংখ্য কীর্তিমানের ছবি তুলেছেন তিনি। পোর্টেট ফটোগ্রাফির প্রতিকৃৎ শুরুটা করেছিলেন সত্তরের দশকে। তখন তরুণ। আজকের মতো নাম কুড়োননি। এরপরও শেখ মুজিবের মতো নেতার কাছাকাছি যেতে কোন সমস্যা হয়নি। ওইটুকু বয়সে বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলার বিরল সুযোগ পেয়েছিলেন। সুযোগটি কাজেও লাগিয়েছেন তিনি। প্রদর্শনীর ছবিতে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও দেশগড়ার লড়াইয়ে মহাব্যস্ত শেখ মুজিব। অবিসংবাদিত নেতাকে দেখতে দেখতে পাকিস্তানী শাসন শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালীর ঘুরে দাঁড়ানো, প্রতিরোধ আন্দোলনের নানা মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাঙালীর সামনে যখন আর কোন পথ খোলা নেই, যখন মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশই একমাত্র সমাধান, জাতির আকাক্সক্ষার কথা জানিয়ে নেতা যখন ঘোষণা করছেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম; ঠিক তখন ক্যামেরা হাতে দাঁড়ানো নাসির আলী মামুন। ৭ মার্চের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে ক্যামেরায় ধারণ করেন তিনি। সে সময় তোলা একাধিক ছবিতে মুজিবের ক্ষুব্ধ প্রতিবাদী চেহারা। উত্তাল সময়ের ইতিহাস বর্ণনা করছে। সাদা কালো ছবিতে অদ্ভুদ এক মায়া। আলো-অধারীর যে যাদু মামুন এখন দেখিয়ে চলেছেন, তার সূচনালগ্নটি কেমন ছিল, প্রদর্শনীর ছবি দেখে অনুমান করা যায়। সদ্য স্বাধীন দেশে শেখ মুজিবুর রহমান যখন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান, তখন মামুনের ক্যামেরা দ্বিতীয় দফায় অনুসরণ করে তাঁকে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বপ্নের স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন জাতির জনক। আবেগঘন মুহূর্তের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেন মামুন। পরের বছরের একইদিন তোলা আরেকটি ছবি দেখে যুগপৎ বিস্মিত হতে হয়। এক বছর পরও আবেগাক্রান্ত ছিলেন বাঙালীর নেতা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। ’৭৩ সালে মামুনের তোলা ছবি দেখে এ তথ্য জানা যায়। প্রদর্শনীর অন্যান্য ছবিতে সদ্য স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর যে লড়াই তা স্পষ্ট হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা দেয়ার ঘটনাটি সে সময়ের বড় খবর ছিল। প্রদর্শনীর ছবিতে সময়টিকে খুঁজে পাওয়া যায়। কিছু আলোকচিত্রে মুজিবের রুটিন কাজ। তাঁর আসা যাওয়ার পথে তোলা। কিন্তু সেই সাধারণ মুহূর্তগুলো কী যে অসাধারণ হয়ে ধরা পড়েছে মামুনের ক্যামেরায়! উদাহরণ হতে পারে ১৯৭২ সালের ৭ জুন তোলা একটি ছবি। ছয়দফা আন্দোলনের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। গাড়িতে বসা অস্থায় জনগণের উদ্দেশে হাত নাড়াচ্ছিলেন তিনি। অপেক্ষাকৃত কম দেখা ছবিতে কী যেন আছে। হয়ত তাই নতুনের মতো কাছে টানে। একই দিন সমাবেশের মঞ্চ থেকে কনিষ্ঠ পুত্র রাসেলের হাত ধরে নেমে আসতে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবিটিও অন্যরকম। একটা বেশ নির্ভার চেহারা। চোখে মুখে বিজয়ীর ভঙ্গি। স্বাধীন দেশে জাতির জনককে অযুত সমস্যা সঙ্কট মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু দেশটি যেহেতু স্বাধীন, চাপে থাকলেও, একটা প্রশান্তি বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল। নাসির আলী মামুনের কিছু ছবি দেখে সেটি অনুমান করা যায়। খুঁটিয়ে দেখলে আরও অনেক কিছু দেখতে পাবেন আপনিও। নতুন করে অনেক কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন। ৬ মার্চ শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলার কথা। তবে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে আপাতত বন্ধ রয়েছে গ্যালারি। খোলা মাত্রই ঢুঁ মারুন।
×