ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ সাদমান-মৃত্যুঞ্জয়

করোনা প্রতিরোধে মুশফিক-মাশরাফিদের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৮:২১, ২১ মার্চ ২০২০

করোনা প্রতিরোধে মুশফিক-মাশরাফিদের আহ্বান

মিথুন আশরাফ ॥ ধীরে ধীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আরও বেশি সতর্কতা এবং করোনা প্রতিরোধের বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ক্রিকেটাররা নিচ্ছেনও। অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরা বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম আর অনুর্ধ-১৯ দলের পেস বোলিং অলরাউন্ডার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী দেশে ফিরে নিজেরাই ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। জাতীয় দলের মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমরা করোনা প্রতিরোধ করা এবং সতর্ক থাকার আহ্বানও জানাচ্ছেন। সাদমান কব্জির চোট সারাতে এবং মৃত্যুঞ্জয় কাঁধের চোট সারাতে মেলবোর্নে অস্ত্রোপচার শেষে দেশে ফিরেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশ আছে। বিদেশ থেকে ফিরলেই দুই সপ্তাহ ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকতে হবে। সাদমান ও মৃত্যুঞ্জয় সেই নির্দেশ পালনও করেন। সঙ্গে মেলবোর্নে সাদমান ও মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে থাকা বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরীও দেশে ফিরে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। এমনকি ব্যাঙ্কক থেকে দেশে ফেরা বিসিবির পরিচালক ও সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদও ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। দেশের ক্রিকেট এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। বৃহস্পতিবার যখন সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন ক্রিকেটারদের সতর্ক থাকতে বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেছেন, ‘খেলা শুরু যখন হয়েছে, আমার জানা মতে প্রতিটি খেলোয়াড়কে এবং ক্লাবকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এই জিনিসগুলো তাদের ব্রিফ করা হয়েছে। সবাই যেন সতর্ক থাকে। না পারতে যেন বাইরে না যায় এবং অন্য কারো সংস্পর্শে যতটা কম সম্ভব আসে। আমি বলছি না একেবারে লক ডাউন করে দিতে। করতে পারলে ভাল হতো। ওদের সাবধানে থাকতে হবে। আগে একটা চিন্তা ছিল এবং ভয় ছিল, ভয়ের কারণ নেই। আমি ভয় পাওয়ার কথা বলছি না। এটা হতেই পারে, তবে যেন না হয় এর জন্য যতটুকু সতর্ক হওয়া দরকার প্রত্যেকে সেটা হতে হবে। সকলের জন্য একটাই কথা, এটা শুধু ক্রিকেটারদের জন্য না। সবার জন্য একটাই কথা যে জিনিসটাকে হালকা করে নেয়ার সুযোগ নেই। কাজেই আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রত্যেককে এবং যতটা সম্ভব বাসা থেকে না বের হওয়া উচিত। এই বার্তাটা সবার জন্য। শুধু ক্রিকেটারদের নয়, যারা বোর্ডে আছে তাদের জন্যও প্রযোজ্য। জরুরী কাজ ছাড়া তারা যেন বের না হয়।’ মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজের ফেসবুক পেজে আহ্বান জানান। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি লিখেন, ‘না, এভাবে কাছে আসা যাবে না। না, নিজের পরিচিত কিংবা দূরের কাউকে জড়িয়ে ধরা যাবে না!’ সঙ্গে কি করা যাবে, কি করা যাবে না, তাও উল্লেখ করেন মাশরাফি। তিনি লিখেন, যা করা যাবে : নতুন করোনাভাইরাস রোগ সম্পর্কে কথা বলুন (কোভিড-১৯)। যা করা যাবে না : রোগের সঙ্গে এর ভৌগোলিক অবস্থান বা জাতিসত্তা সংযুক্ত করা যাবে না। মনে রাখবেন, ভাইরাসটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, জাতি বা বর্ণের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে না। যা করা যাবে : কোভিড-১৯ আছে এমন লোক সম্পর্কে, কোভিড-১৯ এর জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করছে এমন লোক সম্পর্কে, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থতা লাভ করেছেন এমন লোক সম্পর্কে বা কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরে মারা যাওয়া লোক সম্পর্কে কথা বলা যাবে। যা করা যাবে না : এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ এর ‘শিকার’ হিসাবে উল্লেখ করা যাবে না। যা করা যাবে : কোভিড-১৯ ব্যক্তিদের সংক্রমণের বিষয়ে কথা বলুন। যা করা যাবে না : কোভিড-১৯ আক্রান্ত লোকেরা ‘অন্যকে সংক্রামিত করে’ বা ‘ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়’-এসব বলা যাবে না কারণ এটি ইচ্ছাকৃতভাবে সংক্রমণ ছড়ানো বোঝায় এবং দোষ চাপিয়ে দেয়। যা করা যাবে : বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং সর্বশেষ অফিসিয়াল স্বাস্থ্য পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিকভাবে কথা বলুন। যা করা যাবে না : অসমর্থিত গুজবের পুনরাবৃত্তি এবং আতঙ্ক ছড়ায় এমন ভাষা ব্যবহার করা যেমন ‘প্লেগ’, ‘এ্যাপোক্যালিপস’ ইত্যাদি। যা করা যাবে : ইতিবাচকভাবে কথা বলুন এবং হাত ধোয়া সম্পর্কিত টিপস অনুসরণ করে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর জোর দিন। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এটি এমন একটি রোগ যা তারা কাটিয়ে উঠতে পারে। নিজেকে, প্রিয়জনদের এবং সবচেয়ে দুর্বলকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা সকলেই নিতে পারি এমন সহজ পদক্ষেপ। নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকলেও সাকিব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিতে হবে। দৈনন্দিন স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাসের দ্বারা নিজের যতœ নিন এবং আমাদের চারপাশে সবাইকে সচেতন করে তুলুন। নিরাপদ ও ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন।’ মুশফিকুর রহিম নিজের ফেসবুক পেজে উপদেশ দিয়ে লিখেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া সব খেলাধুলা বন্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কয়েকজনকে বাংলাদেশেও চিহ্নিত করা হয়েছে এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যুও হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হাত ঘন ঘন সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অর্থাৎ খুব জরুরী না হলে ভিড় বা জনসমাগম এড়িয়ে চলা।’ বিদেশ ফেরত মানুষের উদ্দেশ্যে মুশফিক লিখেন, ‘বিদেশ থেকে আসা ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ। আপনারা নিজের পরিবার ও দেশের সবার সুস্থতার জন্য কমপক্ষে ১৪ দিনের ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকুন। মনে রাখুন আপনি শুধু আপনার জন্য নয়, নিজের সন্তান, পরিবার, পাড়া প্রতিবেশী এবং দেশের সকল মানুষের জন্য নিজেকে সচেতন রাখুন আর দয়া করে এখন কেউ একসঙ্গে বাইরে ঘুরতে বের হবেন না। এই সময় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোন তথ্যের বিষয় সতর্ক থাকবেন। অনেকেই ভুল অথবা মিথ্যে তথ্য ছড়াতে পারে। গুজবে কান দেবেন না। আমি নিজে এবং পরিবারের সচেতনতার জন্য এখন বাসায় অবস্থান করছি। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হচ্ছি না। যতটুকু সম্ভব সচেতন থাকার চেষ্টা করছি। নিজে সুস্থ থাকুন এবং অন্যকেও সুস্থ থাকতে সাহায্য করুন। মনে রাখবেন আমার হাতেই আমার সুরক্ষা।’
×