ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরের পান চাষীরা স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ২১ মার্চ ২০২০

 দিনাজপুরের পান চাষীরা স্বাবলম্বী

দিনাজপুর হাকিমপুরের হিলিতে পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে পান চাষীরা। গত বছরের চেয়ে এ বছর তিনগুণ দাম বেশি পাচ্ছেন তারা। পান চাষ লাভজনক হওয়ায় হাকিমপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও নতুন করে পানের বরজ তৈরি করছেন নতুন পান চাষীরা। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ চাষীদের থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন তারা। এছাড়া জটিল বিষয়ে কৃষি অফিসেও যাচ্ছেন চাষীরা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ বছর ঘনকুয়াশা ও তীব্র শীতের তেমন প্রভাব পড়েনি পানের বরজে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে পানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গেলো বছরের চেয়ে এ বছর পানের দাম বাজারে তিনগুণ বেড়েছে। এতে করে ভীষণ খুশি স্থানীয় পান চাষীরা। হাকিমপুরের পান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঝারা পান (বড় পাতা) ৪০ বেড়ায় এক পোয়া বলা হয়। যার পাইকারি বাজার মূল্য ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ২শ’ টাকা। খুচরা মূল্য ৫ হাজার ৫শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা। ৬৪ পান পাতায় এক বেড়া ধরা হয়। যার বাজার মূল্য ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। খুচরা মূল্য ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। মাঝারি পান পাইকারি বাজারে ২ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৮শ’ টাকা পোয়া। খুচরা মূল্য ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ’ টাকা পোয়া। ছোট পান ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পোয়া পাইকারি। যার খুচরা মূল্য ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা। হিলি সীমান্তের ঘাসুড়িয়া গ্রামের পানচাষী সোহরাফ হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা করে তিনটি পানের বরজ আছে আমার। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত আমি পান চাষ করে আসছি। নিজের বরজে নিজেই সব কাজ করি। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পান পরিচর্যা করি। আমার বরজে ঝুট্টা ও কিছু গাটা জাতীয় পান আছে। এ বছর পানের ফলন ভাল হয়েছে। অন্যান্য বছরে শীত কুয়াশায় পান নষ্ট হয়। কিন্তু এ বছর প্রচুর কুয়াশা ও শীতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি পানের। প্রতি হাটে তিনটি বরজ থেকে প্রায় তিন পোয়া পান বরজ থেকে নামাই আমি। যার মূল্য পাই ৯ হাজার টাকা। পান চাষ ছাড়া অন্য কোন চাষাবাদ করি না। এটি চাষ করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব ভাল আছি।’ ঘাসুড়িয়া গ্রামের আরেক পান চাষী মোকবুল হোসেন বলেন, ‘পরিবার পরিজনদের সঙ্গে নিয়ে পানের বরজের পরিচর্যা করে আসছি। এ বছর আমার বরজে ঝাড়া পান বেশি পেয়েছি। পুরাতন পান শেষের দিকে। নতুন পানপাতা বের হতে শুরু করেছে। তবে কিছু ঝাড়া (বড়পাতা) পান আগালে রেখেছি ভাল দাম পাবো বলে। কয়েকদিন পর পানের বাজার আরও চড়া হবে। তখন ঝাড়া (বড়পাতা) পান নামাবো এবং বেশি দামে বিক্রি করতে পারলে ভাল লাভ হবে। সংসারের সকল চাহিদা মেটাব।’ হিলি বাজারের পান ব্যবসায়ী বোরহান হোসেন জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে এ সময় পানের দাম অনেক বেশি। প্রতি বছর এ সময় পানের দাম কম থাকে। বড় পান ৫০ টাকা, মাঝারি ২৫ ও ছোট পান ১০ টাকা দর। প্রতিটি পান তিনগুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বাজারে। এতে করে প্রভাব পড়ছে পানের খিলির দোকানে। হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমা নাজনীন জানান, অন্য বছরের চেয়ে এ বছর পান চাষ ভাল হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়েনি তাদের পানের বরজে। রোগ-বালাইও কম হয়েছে। এছাড়া, আমরা প্রতিনিয়ত তাদের পানের বরজ পরিদর্শন করছি। সার খৈল ও স্প্রেসহ নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি কৃষকদের। এ বছর প্রায় ৩৬ হেক্টর জমিতে ৩শ’ ৫৫টি বরজে পান চাষ করেছেন চাষিরা। ভাল ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন পান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এখানকার উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। -সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর থেকে
×