ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রাবিড় আচার্য

শ্রাবণসন্ধ্যা

প্রকাশিত: ১২:৩১, ২০ মার্চ ২০২০

শ্রাবণসন্ধ্যা

মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশছাড়া হওয়া, সর্বস্ব খোয়ানো, প্রাণে বাঁচার জন্য সর্বস্বান্ত হওয়া, ভারতের পাদদেশে মৈলাম ক্যাম্পে (শরণার্থী শিবির) আশ্রয় নেওয়াসহ গা ছমছম করা লোমহর্ষ ঘটনাবহুল জীবনের কাহিনী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘শ্রাবণসন্ধ্যা’। সাংবাদিক দীপক চৌধুরীর লেখা এই গল্পগ্রন্থটি এবার মম প্রকাশ এনেছে একুশের বইমেলায়। মোট ছয়টি গল্প নিয়ে তাঁর এ বই। সহজ-কঠিন-তুচ্ছ-গুরুগম্ভীর বিভিন্ন বিষয়কে লেখক সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন যা বা যেখানে গল্প পড়ার ক্ষেত্রে কোন ঝাঁকুনি খেতে হয় না। প্রতিটি গল্পের শিকড় মাটিতে অথচ শিকড়গুলোর ভিন্নতা রয়েছে, রয়েছে স্থান-কাল-পাত্রের আলাদা বিবরণ। লেখক দীপক চৌধুরীর ‘শ্রাবণসন্ধ্যা’ গল্পটির নায়ক-নায়িকার চরিত্রে তরুণ-তরুণীর জটিল অবস্থানকে গল্পকার কতটা সহজভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন তা এক কথায় অনবদ্য। মুক্তিযুদ্ধে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে অনায়াসে মাটির কাছাকাছি মানুষের সঙ্গে মিশেছে চরিত্রগুলো। লেখকের সৃষ্টিশীলতাকে উজ্জীবীত করেছে ‘শরণার্থী শিবিরে নেকড়ে’ গল্পটি। একদিকে ঘরে শিশু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিধবা তরুণী সরস্বতী। কিন্তু শরণার্থী হয়ে মৈলাম ক্যাম্পে পৌঁছানো পর্যন্ত তরুণীর জীবনে ঘটে যাওয়া নানাপ্রতিকূলতা তাকে নির্দয় এক নতুন পৃথিবীকে চেনায়। কখনো তাকে নীরবে সহ্য করতে হয়েছে দুঃসহ অবর্ণনীয় যন্ত্রণা, কখনোবা মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখতে হয়েছে, আবার মুক্তিযোদ্ধা তরুণ প্রেমিক কাশিকে আলিঙ্গন করার চিন্তাও তাকে আন্দোলিত করেছে। প্যারায় প্যারায় গল্পের গাঁথুনি মজবুত। গল্পের খাতিরেই সম্ভবত ক্যাম্পের কোনো কোনো মানুষের অশান্তির ভার বয়ে বেড়ানো তরুণী সরস্বতীকে বেশ দায়িত্ববোধ করে ফেলে, যা স্বাভাবিক ও বাস্তবতায় নিংড়ানো। পাহাড় থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনা বৃদ্ধাকে মানবিকতার আড়ালে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা তার বিবেকবোধের তাড়া এই তরুণী বিধবাকে পীড়িত করে। শরণার্থী শিবিরের মানুষের ভেতরটাকেও চিনিয়ে দেয় কখনোবা। প্রাণের জোয়ার বয়ে আনে বুকে। ‘কবরী যখন স্ত্রী হয়ে এলো’ গল্পে মুক্তিযুদ্ধের কারণে অসহায় মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে তোলে প্রশিক্ষণে রওয়ানা দেওয়া সদ্য বিবাহিতা রমাকে। হাঁটতে হাঁটতে নিরাশ না হতে রমাকে সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা সুধারাম বলে, ‘রমা, তুমি কবরীরে নিয়া ভাবতাছো এখনো? কতো কবরী প্রাণ দিয়েছে, শরীর দিয়েছে, মান দিয়েছে মিলিটারিরে- এর সংখ্যা জানো? জানবা না কোনোদিন।’ ‘তারা দুই বোন’, ‘ভালবাসার কিস্সা কাহিনি’, ‘এক স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্বীকারোক্তি’ গল্পগুলোয় বিচিত্র চরিত্রের সন্ধান পাই আমরা। এদের পরিচয় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন।
×