ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘এই মুহূর্তে অনুশীলন দরকার নেই’

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২০ মার্চ ২০২০

‘এই মুহূর্তে অনুশীলন দরকার নেই’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের আতঙ্কে স্থবির হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব। থমকে গেছে সবধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া কোন পর্যায়েই কোন ধরনের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা চলছে না। পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) খেলতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেল স্টেইন। তিনিও এখন দেশে ফিরে হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন পিএসএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায়। এক সাক্ষাতকারে তিনি দাবি করলেন, খেলা বন্ধ হয়ে গেছে, অনুশীলন করার সুযোগ কমে গেছে- কিন্তু এতে কোন প্রভাবই পড়বে না তার ওপর। স্টেইন দাবি করলেন, এখন তিনি অনুশীলন না করলেও খেলতে নেমে যেমন বোলিং করতে চান তেমনটাই করতে সক্ষম হন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে সম্প্রতিই ভারতে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ স্থগিত করে দেশে ফিরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। স্টেইন এখন সেভাবেই একাকী আছেন পরিবার নিয়ে। করোনা ভাইরাস নিয়ে নিজের কিছু কথা বলেছেন এ গতিময় পেসার সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে। প্রশ্ন ॥ আপনার সর্বশেষ সপ্তাহটা কেমন গেছে? স্টেইন ॥ এটা আসলে খুব দ্রুতই ঘটে গেছে। জানি না কিভাবে এটাকে বর্ণনা করব। আমি পাকিস্তানে ছিলাম এবং সেখানে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা আসলে হোটেলবন্দী হয়ে ছিলাম। পরামর্শ দেয়া হয়েছিল বাইরে না যাওয়ার। রাস্তাগুলো দারুণ সুন্দর লাগছিল, কিন্তু সেখানে দাঁড়ানোই নিষেধ করে দেয়া হয়। আমি কোন প্রোটোকল ভাঙ্গতে চাইনি এবং কিছু ঘটে গেলে আমার দোষ হয়ে যেত। পাকিস্তানে আর কখনও ক্রিকেট খেলিনি সে জন্য আমাকে দোষ দেয়া হতো। সপ্তাহ যতই এগিয়ে যেতে থাকল সবকিছুই মনে হতে লাগলো যেন সব শঙ্কাই বাড়তে থাকল। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই আমাদের কাছে করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলার মতো কেউ আসেনি। তবে আমাদের সবার কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল সেটাই বড় কথা। এরপরই বিদেশীরা কথা বলতে লাগল ঘরে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু তাদের দেশেও ফেরার সম্মতি দিচ্ছিল না। এরপর আমরা জানলাম ৯ জন ক্রিকেটার বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এরপর আমরা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরাও যাচ্ছি। প্রশ্ন ॥ পুরো বিষয়টি কতটা মাথা খারাপ করে দেয়ার মতো? স্টেইন ॥ আমার এটা বলার মতো ভাষা নেই। যেখানেই যান না কেন সবাই এটা নিয়েই কথা বলছে। আপনি বিমানে আছেন কিংবা মুদি দোকানে- সবাই আলোচনা করছে এটা নিয়ে। মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস ছাড়া কথা বলার আর কোন বিষয়ই নেই। সাধারণত আমি ছুটি পেয়ে গেলে মাছ ধরতে দূরে যাই কিংবা সার্ফিং করি। কিন্তু এখন আমি শুধু ঘরের মধ্যে বসে থেকেই উপভোগের চেষ্টা করছি। প্রশ্ন ॥ আপনার কি যথেষ্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে? স্টেইন ॥ আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড এই মুহূর্তে মায়ের সঙ্গে থাকছি, কারণ আমার বাড়িটার সংস্কার কাজ চলছে। শহর থেকে কিছুটা দূরে, ছোট্ট শহর কোমেটিয়েতে সমুদ্র তীরে আমাদের দারুণ একটি বাড়ি আছে। এখন আমরা আটকে আছি, সম্ভবত আগামী কয়েক সপ্তাহ এভাবেই থাকব কিন্তু অভিযোগ করার কিছুই নেই। এখন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি স্টক করে রাখাটা অবশ্যই ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কারণ সবারই এসব প্রয়োজন। আমি কিছুদিন আগে মুদি দোকানে গিয়ে দেখলাম সবাই মিলে অতিরিক্ত পরিমাণে টয়লেট পেপার কিনছে। আমি যতটা প্রয়োজন শুধু ততটাই নিয়েছি যা যা নিতে হবে। যদি শেষ হয়ে যায়, না পাই- ক্ষতি নেই। অনেক মানুষ আছে যারা দিন আনে দিন খায়। তারা তো অতিরিক্ত নিয়ে এসব জমা করে রাখতে পারবে না। তাই এমনটা কারই করা উচিত নয়। প্রশ্ন ॥ আপনার ক্রিকেট অনুশীলন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? স্টেইন ॥ দেখুন আপনারা জানেন যে এই মুহূর্তে আমি খুব বেশি ক্রিকেট অনুশীলন নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমি এখন এমন এক অবস্থানে আছি যে বুঝতে পারি- যদি ইয়র্কার করতে চাই, লেন্থ বল করতে চাই কিংবা বাউন্সার দিতে চাই সেটা আমি তৎক্ষণাৎ পারব। সেসব করতে হলে পেশি শক্তির বিষয়গুলো আমার জন্য এখন অপ্রয়োজনীয়। তাই আমি খেলার দিনে গিয়ে কিছু ওয়ার্মআপ করি এবং নিজের নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক বিষয়গুলো দেখে নেই। এরপরই খেলায় নেমে সেসব করে যেতে চেষ্টা করি। প্রশ্ন ॥ যদি আইসোলেশনে থাকতে হয় সেক্ষেত্রে কোন ক্রিকেটারের সঙ্গে থাকতে ভাল লাগবে আপনার? কোন্ ক্রিকেটারের সঙ্গ অপছন্দনীয় হবে? স্টেইন ॥ আমি কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে খুবই পছন্দ করব। এই পৃথিবীতে সে আমার অন্যতম প্রিয় একজন মানুষ। আপনি যদি তার হোটেল রুমে যান দেখবেন, সে হয় মাছ ধরার জন্য কিছু বানাচ্ছে নয়তো মাছ ধরার কিংবা রান্না বিষয়ক কোন ভিডিও দেখছে। যখন তার বাড়িতে যাবেন একই ব্যাপার আবিষ্কার করবেন। আমার রান্না করাটা একেবারেই অপছন্দনীয়, তাই সে সঙ্গে থাকলে দারুণ হবে। সে রান্না করতে খুব ভালবাসে। সে যখন রান্না করবে তখন আমি মজা করে সব ফিশিংয়ের ভিডিওগুলো দেখতে পারব। কিন্তু কার সঙ্গে থাকতে একেবারেই ভাল লাগবে না... নির্দিষ্ট কারও কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। কিন্তু যদি মিউজিকের বিষয় থেকে চিন্তা করি সেক্ষেত্রে ব্যক্তিটি হবে আন্দিলে ফেলুকোয়াও। সে সারাদিন গান শুনবে তখন আমি বিরক্ত হয়ে তাতে তাড়াতে সামনে গিয়ে অবশ্যই বলে ফেলব, ‘দেখো, আমি কিন্তু করোনাভাইরাস পজিটিভ। আমাকে দ্রুত কোয়ারেন্টাইনে পাঠাও।’
×