ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় টালমাটাল বিশ্ব- তবু নির্বাচন আয়োজনে তৎপর বাফুফে!

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২০ মার্চ ২০২০

করোনায় টালমাটাল বিশ্ব- তবু নির্বাচন আয়োজনে তৎপর বাফুফে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পুরো বিশ্বই এখন পার করছে অস্থির ও আতঙ্ক জাগানিয়া এক ক্রান্তিলগ্ন। বুঝতেই পারছেনÑ করোনাভাইরাসের কথাই বলা হচ্ছে। একটু দেরিতে হলেও এই অনাকাক্সিক্ষত ভাইরাসটি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যেই একজন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন আরও কয়েকজন এবং আক্রান্তদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সরকার ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে, জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলতে এবং দিয়েছে আরও কিছু পরামর্শ-নির্দেশনা। শুধু তাই নয়, দেশের অভ্যন্তরে সবধরনের খেলাধুলা এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত করারও ঘোষণা দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সবার শেষে ক্রিকেট ও ফুটবলের যাবতীয় লীগের খেলাও বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাইÑ এর মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনকে ভাইরাসমুক্ত বা সুস্থ রাখা। শোনা যাচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে সরকার বিভিন্ন স্থানে ‘লকডাউন’ করে দিতে পারে (বৃহস্পতিবার লকডাউন করা হয় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে)। সেক্ষেত্রে অফিস-আদালত (ইতোমধ্যেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে), ধর্মীয় উপাসনালয়, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান, হোটেল-রেস্তরাঁ, সেলুন, বাজার, বিপণী বিতানসহ অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে। চীন, ইতালি, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ইতোমধ্যেই এমনটা করেছে সেই দেশের সরকার। আশার কথাÑ এখনও করোনাভাইরাসের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে ফিরে নিয়ম না মেনে জনসম্মুখে চলাচল করছেন তাতে করে বাকিদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত (কেননা এটি ভয়াবহ ধরনের ছোঁয়াচে ব্যাধি) হবার ঝুঁকি শতগুণে বেড়ে যাবে এবং যাচ্ছেও। আশঙ্কার কথা হচ্ছে দেশের ৬৪ জেলাতেই করোনাভাইরাস সন্দেহে শত শত অসুন্থ রোগীকে ‘কোয়ারেন্টাইন’-এ ভর্তি করা হয়েছে। ফলে নিরাপদ নয় রাজধানী ঢাকাও। অথচ ঢাকার প্রাণকেন্দ্রেই অবস্থিত একটি ক্রীড়া ফেডারেশন এই নির্মম সত্যটি অনুধাবন করতে পারছে না, যার নাম বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর মধ্যে বাফুফেই সবার চেয়ে দেরিতে পুরুষ ও মহিলা ফুটবল লীগ স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এছাড়া বাফুফেতে অবস্থিত জাতীয় মহিলা দলের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবলারদের যে আবাসিক ক্যাম্প চলছিল সেটাও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে প্রায় ৬০ মহিলা ফুটবলার ইতোমধ্যেই ক্যাম্প ছেড়ে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এমনকি বাফুফে ভবনে ঢোকার আগে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাংবাদিকদের হাতে সুরক্ষার জন্য ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ও মাখিয়ে দিচ্ছে যা প্রশংসনীয়। কিন্তু এই বাফুফেই কিনা এমন একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যা মোটেও প্রশংসনীয় নয়, বরং সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় তুলছে। সেটি হচ্ছে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ এই পরিস্থিতির মধ্যেও দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি যথাসময়ে বহুল আলোচিত বাফুফের নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। তারিখটি হচ্ছে আগামী ২০ এপ্রিল। যেখানে সরকার বেশি জনসমাবেশ করতে নিরুৎসাহিত করছে মানুষকে, জরুরী কাজ না থাকলে বিনা কারণে ঘরের বাইরে থাকতেও নিষেধ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সেখানে শত শত লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে বাফুফে কেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে চায় সেটা সচেতন ক্রীড়ামোদীদের কাছে মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না। যদিও বাফুফের নির্বাচনের বাকি এখনও প্রায় এক মাস। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যে কমবে তার কোন নিশ্চয়তা বা সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত সিডিউল ঘোষণা করা হয়নি। এমনিতে নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত নির্বাচনের ১৫ দিন আগে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী শনিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাফুফের সভা আছে। জানা গেছে, সেখানেই ঠিক হতে পারে সিডিউলের বিষয়টি। প্রশ্ন উঠেছেÑ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে আয়োজন সম্ভব কি না। বাফুফে এ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে ইতেমধ্যেই। তারা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। সদস্য সংস্থাগুলোকে চিঠিও দিয়েছে। কাউন্সিলরদের নামও আসা শুরু হয়ে গেছে। বাফুফের নির্বাচনে কাউন্সিলর (ভোটার) ১৪০ জন। নির্বাচনের দিন এদের সঙ্গে আরও যুক্ত হবে বাফুফের নির্বাহী কমিটি, নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সংবাদকর্মীরাÑ সবমিলিয়ে কমপক্ষে আড়াই শ’ মানুষের সম্পৃতক্তা-উপস্থিতি থাকবে এই নির্বাচনে। এদের মধ্যে যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ থাকবেন না বা কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না তার কী নিশ্চয়তা আছে? আর নির্বাচনের দিন যদি কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই যান তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? বাফুফের দিকেই অভিযোগের তীরটা ধেয়ে আসবে সন্দেহাতীতভাবেই। যেখানে বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত, সেখানে তারা নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন আগেই নির্বাচন করতে চাওয়ার পেছনে অন্য কোন স্বার্থ বা উদ্দেশ্য আছে কি না এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, দেশের ফুটবলের কোন উন্নয়ন না করা, নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণা থেকে সরে আসা ব্যক্তিটি (কাজী মোঃ সালাউদ্দিন) যে কি মধু খুঁজে পেয়েছেন বাফুফে সভাপতির ওই চেয়ারটিতে সে এক বড় রহস্য। অথচ সালাউদ্দিনের কমিটির দুই সহসভাপতি বাদল রায় ও মহিউদ্দিন মহি বলেছেন, ‘দেশের এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়াই ভাল। কারণ দেশ এখন গভীর এক সঙ্কটে। সবকিছুই তো স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। তাহলে নির্বাচন কিছুদিন পরে হলে সমস্যা কী?’ কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়া বাদল রায় বাফুফে ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই সালাউদ্দিনকে ফোন করে দ্রুত নির্বাহী কমিটির জরুরী সভা আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছেন। ফোনে বাদল রায় সালাউদ্দিনকে বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের মধ্যে নির্বাচন করা কী ঠিক হবে? এ বিষয়ে একটা জরুরী সভা কী ডাকবেন? এটা তো আমাদের দেশের বিষয়। দেশ তো ভীষণ বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। আপনি আমাদের প্রধান। একটা জরুরী সভা ডেকে সবার সঙ্গে কথা বলুন। এই সমস্যার একটা সমাধান করা উচিত। আমরা আলাপ করি এই সমস্যা নিয়ে। এ বিষয়ে সবাইকে নিয়েই একটা মিটিং করেন।’ এদিকে এপ্রিলে বাফুফের নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি শুরু করেছে কাউন্সিলররা। বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের প্যানেলে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। অন্যদিকে সভাপতি পদে নির্বাচন না করলেও মাঠেই থাকছেন তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। গুঞ্জন আছে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন এই সংগঠক। ২০ এপ্রিল বাফুফের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব ফুটবলাঙ্গন। বাড়ছে পক্ষে-বিপক্ষের ব্যস্ততা। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও এরই মধ্যে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে অংশ নেবেন প্রার্থীরা। বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের প্যানেলে থাকছেন কারা, জানার কৌতূহল সবার। এরই মধ্যে তার প্যানেল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাদল রায় এবং মহিউদ্দিন আহমেদ মহি। বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সলাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, ‘কিছু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। টিম সাজাতে সালাউদ্দিনের মতামতই চূড়ান্ত।’ এখন দেখার বিষয় করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটময় সময়ে সালাউদ্দিনের বোধোদয় হয়ে নির্বাচন পিছিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেন কি না।
×