ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রীড়াবিদদের ক্ষোভ, অপেক্ষায় আইওসি

প্রকাশিত: ১২:২১, ২০ মার্চ ২০২০

ক্রীড়াবিদদের ক্ষোভ, অপেক্ষায় আইওসি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে জাপানের অলিম্পিক আয়োজনের কথা ছিল ১৯৪০ সালে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় সেবারের গেমস আর হয়নি। জাপানীদের কাছে যে গেমসটি এখনও ‘মিসিং অলিম্পিক’ নামে পরিচিত। তার ২৪ বছর পর টোকিও অলিম্পিক গেমস ঠিকই আয়োজন করে। তবে সেটির সঙ্গেও জড়িয়ে ছিল বিতর্ক। আর এবার? করোনাভাইরাসের কারণে টোকিও ২০২০ অলিম্পিক নিয়ে ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। সব কিছু ঠিক থাকলেও সবার মনেই প্রশ্ন, টোকিও অলিম্পিক কী শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যাবে? নাকি কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে? এই প্রশ্ন এখন গোটা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে। করোনাভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যেই অলিম্পিক বাদে মোটামুটি বড় ইভেন্টের খেলাগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অলিম্পিক নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। যার ফলে স্বয়ং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, টোকিও অলিম্পিক সাময়িক বন্ধ করার ব্যাপারে সত্যি তারা গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। ক্রীড়াঙ্গনও তার বাইরে নয়। ঘরোয়া লীগ থেকে শুরু করে ইউরোপের শীর্ষসারির লীগগুলোও স্থগিত করা হয়েছে। ইউরোকাপ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগও বন্ধ। এর পরপরই প্রশ্ন ওঠে তাহলে অলিম্পিক যথাসময়ে হওয়ার কারণ কী? বিশেষ করে এ্যাথলেটরা যখন গৃহবন্দী। কেউ তেমন অনুশীলন করতে পারছে না। যোগ্যতামানের টুর্নামেন্টগুলো ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তখন কিসের ভিত্তিতে ২৪ জুলাই অলিম্পিক শুরুর কথা ভাবছে আইওসি? বৃহস্পতিবার আইওসি’র প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ জানিয়েছেন, ‘ব্যাপারটা নিয়ে আমরা আলাদা করে ভাবতে শুরু করেছি। আসলে প্রচুর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ২২০ জন এ্যাথলেটের প্রতিনিধিরা আমাকে ফোন করেছিলেন। প্রত্যেকে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তারা যা যা বলেছেন তারমধ্যে সত্যতা লুকিয়ে আছে। এসব তো মানতেই হবে।’ শুধু এইটুকু বলেই থামেননি তিনি। আইওসি’র প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমাদের সদাসর্বদা লক্ষ্য থাকবে গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা করা। সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তবকে তুলে ধরা। তবে একটা কথা মানতেই হবে, আমাদের কাছে এ্যাথলেটরাই আসল। তাদের কথা আগে মানতে হবে। আমাদের কাছে আসল হলো দু’টো দিক। এক, এ্যাথলেটদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়টাকে আগে দেখা। যাতে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়। দুই, অলিম্পিকে এ্যাথলেটদের সুরক্ষায় রাখা।’ এদিকে বাখের এমন বক্তব্য শুনে বেজায় চটেছেন চারবার অলিম্পিকে রোয়িংয়ে সোনাজয়ী ব্রিটিশ এ্যাথলেট ম্যাথিউ পিনসেন্ট। তার সাফ কথা, ‘বাখ আপনার কথা আমাকে অবাক করেছে। এ্যাথলেটরা ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারছেন না। কোথাও যেতে পারছেন না। এ্যাথলেট থেকে শুরু করে দর্শক এমনকি আয়োজকরাও চাইছেন না অলিম্পিক হোক। তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে অলিম্পিক যথাসময়ে করার ব্যাপারে জেদ ধরে বসে আছেন?’ অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ক্যাটেরিনা স্টেফানিদি বলেন, ‘আইওসি চাচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্যকে একটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে।’ গ্রেট ব্রিটেনের ক্যাটেরিনা জনসন বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে অনুশীলন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।’ সম্প্রতি আইওসি’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘আমরা প্রকৃত সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না।’ বিশ্ব হেপ্টাথলনে চ্যাম্পিয়ন জনসন থমসন ফ্রান্সে কিছুদিন অনুশীলন সেরে ফিরে এসেছেন গ্রেট ব্রিটেনে। তিনিও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ্যাথলেটরা কোন পথে হাঁটবে? একদিকে আইওসি বলছে তোমরা অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নাও। নিজেদের সেরাটা তুলে ধরার চেষ্টা কর। অথচ আমাদের সরকার জানিয়ে দিয়েছে, পুরোপুরি বাড়িতে থাকতে হবে। ট্র্যাক থেকে জিম সবকিছু বন্ধ। তাহলে আমরা যাব কোথায়?’ এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য হতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
×