ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন ‘শাটডাউন’

প্রকাশিত: ১২:২০, ২০ মার্চ ২০২০

বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন ‘শাটডাউন’

মিথুন আশরাফ ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বজুড়েই ক্রীড়াঙ্গনে প্রভাব পড়েছে। একে একে সব খেলাধুলা, আসর, টুর্নামেন্ট, সিরিজ, লীগ বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনও ‘শাটডাউন’ হয়ে গেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের ক্রিকেটের সকল খেলা স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে এমন সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমের কাছে জানান। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে যা হচ্ছে বাংলাদেশেও এটা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। সেই কারণে সব জায়গায় খেলাধুলা বন্ধ ছিল। আমাদেরও ক্রিকেটটা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ডিপিএল যেটা চলছিল, প্রথম রাউন্ডের পর আমরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা কয়েকদিন অপেক্ষা করি, অবস্থা এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করি। এরপর যে সিদ্ধান্ত নেয়ার একবারে নেব। এটা তাৎক্ষণিক একটা সিদ্ধান্ত ছিল। আর এখন আমরা সকলে মিলে আলোচনা করে যেটা সঠিক মনে হয়েছে সেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। সবার সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝতে পারছি যে পরিস্থিতি আসলে বদলাচ্ছে। প্রথমদিকে মনে হয়েছে অনেক খেলোয়াড় খেলতে চাচ্ছে। অনেক ক্লাবগুলো খেলতে চাইছিল। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে তাতে করে অনেক ভিন্ন মতও আসছে। যাই হোক আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আজকে (বৃহস্পতিবার) একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমাদের ক্রিকেটের সকল খেলা আপাতত স্থগিত অনির্দিষ্টকালের জন্য। অনির্দিষ্টকালের জন্য বলতে যেটা বুঝাচ্ছে যে পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করব। পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয়, যদি মনে করি যে এখন খেলার পরিবেশ আবার এসেছে তাহলে অবশ্যই সেই তারিখটা ঘোষণা করে দেব। এটাই ছিল আজকে (বৃহস্পতিবার) আমাদের এই মিটিংয়ের প্রধান এ্যাজেন্ডা।’ বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের প্রথম রাউন্ডের খেলার পর দ্বিতীয় রাউন্ডের দুইদিনের খেলা পর্যন্ত শুরুতে স্থগিত ছিল লীগ। যদিও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব খেলা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এরপরও বিসিবি চেষ্টা করেছে লীগ চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু যে পরিস্থিতি তাতে সম্ভব হলো না। এ জন্য বৃহস্পতিবার বিসিবি কার্যালয়ে বিসিবি সভাপতি ও পরিচালকদের সঙ্গে সভা হয়। শেষ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য লীগ এবং দেশের সকল ক্রিকেট খেলা স্থগিত করা হয়েছে। কবে শুরু হবে? এখনই তা বলতে পারছেন না বিসিবি সভাপতি। তিনি জানান, ‘সমস্যা হচ্ছে যে এই সময়টা (খেলা শুরুর) বলা কঠিন। কারণ প্রতিদিনই পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা যদি জানতে পারতাম যে ৩১ মার্চের পর সব ঠিক হয়ে যাবে তাহলে বলতাম ৩১ মার্চ। এরপর ঠিক হবে নাকি পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে আমরা তো সেটা বলতে পারছি না। তাই আমরা কোন নির্দিষ্ট তারিখ দিচ্ছি না। আপাতত আমরা খেলা বন্ধ রাখছি। তবে আমাদের মনে হয় না যে ১৫ এপ্রিলের আগে ক্রিকেট কিংবা ডিপিএল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বরং এটা আরও বাড়তেও পারে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমরা মনে করি এটা শুধু খেলোয়াড়দের জন্য না, বরং প্রত্যেকটি মানুষের সাধারণ জনগণের প্রত্যেকেরই এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের যে করণীয় সেটা আমরা করছি। সরকার যতটা সম্ভব করছে, তবে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। সেই কারণে ক্রিকেট এখন কোনভাবেই খেলার উপযোগী না। যদিও ক্রিকেটের কন্টেক্সট আলাদা। যতটুকু দূরে থাকতে বলে ফিল্ডাররা তার থেকে আরও দূরে থাকে। এরপরও আমরা মনে করি এটা এখন খেলার সময় না।’ খেলা নেই। তবে খেলোয়াড়দের সতর্ক থাকতে বলেছেন বিসিবি সভাপতি, ‘খেলা শুরু যখন হয়েছে, আমার জানা মতে প্রতিটি খেলোয়াড়কে এবং ক্লাবকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এই জিনিসগুলো তাদের ব্রিফ করা হয়েছে। এখনও আমরা সেইরকম ব্রিফিং দেব তাদের যেন সবাই সতর্ক থাকে। না পারতে যেন বাইরে না যায় এবং অন্য কারও সংস্পর্শে যতটা কম সম্ভব আসে। আমি বলছি না একেবারে লকডাউন করে দিতে। করতে পারলে ভাল হতো। ওদের সাবধানে থাকতে হবে। আগে একটা চিন্তা ছিল এবং ভয় ছিল, ভয়ের কারণ নেই। আমি ভয় পাওয়ার কথা বলছি না। এটা হতেই পারে, তবে যেন না হয় এরজন্য যতটুকু সতর্ক হওয়া দরকার প্রত্যেককে সেটা হতে হবে।’ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বন্ধ হয়ে গেছে। দৈনন্দিন দাফতরিক সব কাজ বাড়ি থেকে পারলে করতে বলেছে। কিন্তু বিসিবিতে অফিসে এসেই সেই কাজ চলছে। আবার জিমে অনেক ক্রিকেটার একসঙ্গে জিম করছেন। বিসিবি কী বন্ধ থাকবে? বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘পরিস্থিতি প্রতিদিন কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে। তাই এখন একটা জিনিস বলবা, কাল আরেকটা বলব সেটা তো হয় না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগে আমরা নিজেরাই সচেতন হব। এটা করতে গিয়ে আমরা যা যা করণীয় সেটা করছি। আপাতত যে লিফট চলছিল সেটা বন্ধ হয়েছে। সকলের জন্য একটাই কথা, এটা শুধু ক্রিকেটারদের জন্য না। সবার জন্য একটাই কথা যে জিনিসটাকে হাল্কা করে নেয়ার সুযোগ নেই। কাজেই আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রত্যেককে এবং যতটা সম্ভব বাসা থেকে না বের হওয়া উচিত। এই বার্তাটা সবার জন্য। শুধু ক্রিকেটারদের নয়, যারা বোর্ডে আছে তাদের জন্যও প্রযোজ্য। জরুরী কাজ ছাড়া তারা যেন বের না হয়।’ দেশের খেলা বন্ধে আসন্ন বিদেশ সফরগুলোতে প্রভাব পড়বে কিনা? এমন প্রশ্নে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি সেটা যদি উন্নতি না করে তাহলে তো খেলাধুলার কোন সুযোগ নেই। পরিস্থিতিটা কি রকম দাঁড়ায় সেটার ওপর নির্ভর করছে। আমরা কেউ ডেট দিয়ে কিছু বলতে পারব না কবে এইটা থেকে মুক্তি পাবে এই পৃথিবী। শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের কোন দেশ কবে মুক্তি পাবে বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব এটাকে কোয়ারেন্টাইন করতে পারি, তত দ্রুত এটা থেকে বাঁচতে পারব।’
×