ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:২০, ২০ মার্চ ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ কীর্তিমানদের জন্মশতবর্ষ মানেই বড়সড়ো উদ্যাপন। এ সময় বহুবিধ আয়োজনের মাধ্যমে মহান ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা জানানো হয়। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু তো কীর্তিমান নন, জাতির জনক। আজকের যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ, তার স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী হিসেবে অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। অবিসংবাদিত নেতার শততম জন্মদিন ছিল গত ১৭ মার্চ। গোটা জাতির পক্ষ থেকে ওইদিন তাকে অভিবাদন জানানো হয়। কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। সারা দেশের মতো রাজধানীতেও ছিল জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা। জন্মের শুভক্ষণে রাত ৮টায় আতশবাজির মাধ্যমে বছরব্যাপী উদ্যাপনের সূচনা করা হয়। এছাড়াও টেলিভিশন রেডিও এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। এদিন থেকেই শুরু হয় পূর্ব ঘোষিত মুজিববর্ষের। হ্যাঁ, সব মিলিয়ে আনন্দঘন একটি দিন ছিল। তবে আক্ষেপও কম ছিল না। বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার জন্মশতবর্ষ। কত আগে থেকে প্রস্তুতি চলছিল! অথচ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় মূল কর্মসূচী কাটছাঁট করতে হলো। প্রথম দিনের এ আক্ষেপ নিশ্চয়ই অনেকের মনে থেকে যাবে। তবে করোনা ঝুঁকি এড়িয়ে সৃজনশীল নানা মাধ্যমে এখনও অনেক কাজ হচ্ছে। উদাহরণ হিসিবে এ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘মুজিব আমার পিতা’র কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অবিসংবাদিত নেতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দ্বিমাত্রিক এ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মাঝে এ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটি নিয়ে বেশ কৌতূহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের গেম এ্যান্ড এ্যাপ প্রজেক্টের আওতায় বিএমআইটি সল্যুশনের সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে ‘মুজিব আমার পিতা।’ গল্পের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার লেখা ‘মুজিব আমার পিতা’ ও বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ দু’টির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া গ্রামের শ্যামল প্রকৃতি, পরিবেশ, নদী জল হাওয়ায় মুজিবের বেড়ে ওঠা। সেই বেড়ে ওঠা ও সংগ্রামী জীবনের আলেখ্য হবে সিনেমাটি। শৈশব থেকে শুরু করে বায়ান্ন ভাষা আন্দোলনের সময় পর্যন্ত এখানে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, চলচ্চিত্রটির স্ক্রিপ্ট, স্টোরিবোর্ড, চরিত্র, দৃশ্যপট নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা হয়েছে। নির্মাণ বিষয়ে কথা হচ্ছিল পরিচালক সোহেল মোহাম্মদ রানার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, এ্যানিমেশন ফিল্মের বেলায় নির্মাতারা অনেকক্ষেত্রে কল্পনার আশ্রয় নেন। ইতিহাসভিত্তিক কাজের বেলায় সে সুযোগটা থাকে না। এখানেই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জে জয়ী হবেন বলেই আশ্বস্ত করেন পরিচালক। পরিচালক জানান, বিখ্যাত কিছু এ্যানিমেশন চলচ্চিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক বিবরণ থাকলেও, আধুনিক এ্যানিমেশন ফিল্মের গঠন প্রক্রিয়া এই ফিল্মে পাওয়া যাবে। সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন ফাহাদ চিশতী কানন ও ইবনে কবির। কাজ করছেন ৪০ জনেরও বেশি চারুশিল্পী। চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রটির ডিজাইন করেছেন আরাফাত করিম। প্রধান ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইনার পল্লব কুমার মোহন্ত। চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মুক্তি দেয়া হবে আগস্টে। স্থগিত করা অন্যান্য পরিকল্পনাও সহসাই শুরু করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আর তা হলে সামনের দিনগুলোতে মুজিববর্ষ আরও বেশি দৃশ্যমান হবে। তাই যেন হয়। কোভিড ১৯ প্রসঙ্গে আসা যাক। শহর ঢাকায় এর প্রভাব স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। দেখতে দেখতে ব্যস্ত রাস্তাগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। ঘন ঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতেও দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণ এড়াতে কাজ না থাকলে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোও খালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সব শিক্ষার্থীকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটের জরুরী সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান এ নির্দেশনার কথা জানান। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বহিরাগতদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থান না করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রশাসন। একইভাবে সচিবালয়েও দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এভাবে এক ধরনের সতর্কতামূলক অবস্থান চোখে পড়ছে। তবে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে স্বার্থপর শ্রেণীটি। এ শ্রেণীর লোকজন একা বাঁচতে মরিয়া। কা-জ্ঞানহীনের মতো গোটা বাজার কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। সুযোগ বুঝে পণ্য মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। এমন মওজুতদারি বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা। আমরা কি এই বিপদের দিনে একে অন্যের কথা ভাবব না? একটু মানবিক হব না?
×