ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধা

৩০ জুন পর্যন্ত কোন ঋণ খেলাপী ঘোষণা করা যাবে না

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২০ মার্চ ২০২০

৩০ জুন পর্যন্ত কোন ঋণ খেলাপী ঘোষণা করা যাবে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে ঋণগ্রহীতাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আগামী জুন পর্যন্ত কোন ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোও পরিবর্তন আনা যাবে না। অর্থাৎ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কোন ঋণগ্রহীতাকে ঋণ খেলাপী না করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে রফতানির অর্থ প্রত্যাবাসন এবং আমদানি পণ্য দেশে আনার সময়সীমা চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হচ্ছে। এছাড়া স্বল্পমেয়াদী সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিট এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয় নিয়ে একাধিক প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে কোনও ঋণগ্রহীতা যদি ৩০ জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে খেলাপী করা যাবে না। তবে কোনও খেলাপী ঋণগ্রহীতা যদি এই সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ করেন, তাকে নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। আরও বলা হয়, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমদানি-রফতানিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে অনেক ঋণগ্রহীতাই সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধে সক্ষম হবেন না বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এতে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত এবং দেশে সামগ্রিক কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে গত ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওই মানেই রাখতে হবে। এর চেয়ে বিরূপ মানের শ্রেণীকরণ করা যাবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ৪৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয় বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে কোন ঋণ ছয় মাস অপরিশোধিত থাকলে সাব স্ট্যান্ডার্ড, নয় মাস থাকলে নিম্নমান এবং এক বছর থাকলে ক্ষতিজনক মান বিবেচনা করা হয়। এছাড়া সাব স্ট্যান্ডার্ডের আগের অবস্থা স্পেশাল মেনশন এ্যাকাউন্ট বা এসএমএ হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে তৈরি হওয়া বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অনেক দেশ থেকে পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে। আবার বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিকারকরা দেরিতে পণ্য পাঠাতে বলছেন। এ অবস্থায় রফতানির অর্থ দেশে আনার সর্বোচ্চ সময়সীমা চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের এক সার্কুলারে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, বর্তমানে ১২০ দিনের মধ্যে রফতানির অর্থ দেশে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একইভাবে আমদানির ক্ষেত্রে এলসির দেনা পরিশোধের পর সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে পণ্য দেশে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় পার হলে তিনি ব্যাংকিং সুবিধা পেতে সমস্যায় পড়েন। আবার রফতানিকারক নির্ধারিত হারে প্রণোদনা পান না। এজন্য আমদানি পণ্য এবং রফতানির অর্থ দেশে আনার সর্বোচ্চ সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী বিদেশী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অপর এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিদ্যমান নিয়মে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকগুলো এক বছরের জন্য বাকিতে পণ্য আমদানির এলসি খুলতে পারে। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুত খাতের পণ্য আমদানিতে এক বছর সময় পাওয়া যায়। আর শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের বাকিতে আনা যায়। তবে উভয়ক্ষেত্রে ছয় মাস করে সময় বাড়িয়ে এক বছর এবং দেড় বছর করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, রফতানিকারকদের উৎসাহিত করতে ১৯৮৯ সাল থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ নামে পরিচিত এ তহবিল থেকে ছয় মাস মেয়াদে ঋণ নেয়া যায়। পরে সময় বাড়িয়ে নয় মাস করা যায়। জানা গেছে, এখানে প্রতি পর্যায়ে তিন মাস বাড়ানো হচ্ছে। এর মানে প্রথমেই একজন রফতানিকারক নয় মাস মেয়াদে ঋণ নিতে পারবেন। পরে আরও তিন মাস বাড়িয়ে এক বছর করা যাবে।
×