ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার থাবায় এবারের বিশ্ব সুখী দিবস

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২০ মার্চ ২০২০

করোনার থাবায় এবারের বিশ্ব সুখী দিবস

সমুদ্র হক ॥ জাতিসংঘ ঘোষিত অনেক দিবস ঘটা করে আসে অনেক দিবস আড়ালেই চলে যায়। এবারের বিশ্ব সুখী দিবস পালনে জাতিসংঘই বিপাকে পড়েছে। করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্বের সাধারণ মানুষের ‘সুখী’ হওয়ার আবেগ অনুভূতি উধাও হয়ে গেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) করোনাভাইরাসের কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে ৭/২৪ (সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা) একীভূত করে ফেলেছে। এ্যান্টি ভাইরাস বানাতে বিজ্ঞানীদের গবেষণা কাজে বিশ্রাম উড়ে গেছে। উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ, মধ্য আয়ের দেশ, গরিব দেশ সবই এক কাতারে। করোনার ছোবলে সব দেশের মানুষের মনে ‘অ-সুখের’ আগমনে সুখ দূরীভূত। এ বছর জতিসংঘ কি করে বলবে সুখী দিবস পালন করতে। সুখের সংজ্ঞা কি! কোন মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা করেও সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা দিতে পারেননি। বলেছেন সুখ খুঁজে নিতে হয়-সুখ লুকিয়ে আছে নিজের মধ্যে, নিজের কর্মের মধ্যে। এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক জটিল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘ ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ অধিবেশনে প্রতিবছর ২০ মার্চকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব হ্যাপিনেস’ ঘোষণা করে। জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ দেশ সম্মতি দেয়। তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন দিবসের ঘোষণা দেন। পরবর্তী বছর (২০১৩) দিবসটি প্রথম পালিত হয়। এই দিনে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেতা নেলসন মেন্ডেলার নাতি এনডাবা মেন্ডেলা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কন্যা চেলসী বিশ্বের সব মানুষের সুখের জন্য প্রার্থনা করেন। তারা বিশ্বকে সুখী রাখার উপায় বা ইস্যু নিয়ে প্রতিটি দেশকে কাজ করার আহ্বান জানান। কিন্তু এবার! অজানা আতঙ্কে মানব জাতি বিপন্ন। বিশ্বে এ যাবত যত ভাইরাস এসেছে এত মহামারী হয়ে কোন ভাইরাস আসেনি। প্রাচীনকালে বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছোঁয়াচে ব্যাধি বসন্ত কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা গেছে। গ্রাম উজার হয়েছে। মানুষ ভয়ে গ্রাম ও শহর ছেড়ে পালিয়েছে। ডাক্তার বৈদ্য কবিরাজের কাছে বসন্ত কলেরার কোন চিকিৎসা ছিল না। পরে বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছেন। মশা বাহিত ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ব্যাধিকে এরিডিকেট করা হয়েছে। অনেক ব্যাধি এসেছে। সেগুলো ছোঁয়াচে নয়। মানবজীবনে প্রতিটি অসুখ (রোগ ব্যাধি বালাই) সুখ কেড়ে নেয়। সুখের জন্য মানুষ কী না করে। আন্তর্জাতিক সুখী দিবসটির ধারণা দেন বিশে^র অন্যতম মানবহিতৈষী জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা জায়মি ইলিয়েন। ভূমিষ্ঠের পর তাকে ফেলে দেয়া হয় কলকাতার পথের ধারে। দৃষ্টিতে আসে মাদার তেরেসার। কোলে তুলে নেন। এক পর্যায়ে দত্তক নেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিঙ্গল মাদার এ্যানা বিলি ইলিয়েন। নাম দেন জায়ামী ইলিয়েন। উচ্চ শিক্ষা লাভ করে মানব প্রেমিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারেন জীবনে সুখের প্রয়োজন কতটা। বিষয়টি জাতিসংঘে সুখী দিবস করার প্রস্তাব করার সঙ্গেই কণ্ঠ ভোটে অনুমোদিত হয়। বিশ্বের সব মানুষ সূর্যোদয়ের সঙ্গে প্রার্থনা করে দিনটি যেন সুন্দর শান্তি ও সুখের পরশেই কেটে যায়। সুখী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘শেয়ার হ্যাপিনেস’ (সুখকে ভাগাভাগি করে নেয়া)। প্রত্যেক মানুষ সুখ ভাগাভাগি করে নিলে বিশ^ শান্তিময় হয়ে উঠবে। জাতিসংঘ ঘোষিত একটি দিবসের নাম ‘বিশ^ হাতধোয়া দিবস’। অনেকেই এই দিবস নিয়ে টিপ্পনী কাটে। কিন্তু আজ করোনার থাবা থেকে বাঁচতে ক্ষণে ক্ষণে হাত ধুয়ে নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হচ্ছে। সুখকেও ভাগাভাগি করে নেয়ারও সময় এসেছে।
×