ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৌভাতের দাওয়াত কার্ডে অনুরোধ

‘করোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থায় আসবেন’

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২০ মার্চ ২০২০

‘করোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থায় আসবেন’

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ জীবন তরী থেমে থাকে না। নদীর স্রোতের মতোই বহমান। তীরে পৌঁছাতে এই তরী বাইতে হয়। পৃথিবীতে নতুন সব ভয়ঙ্কর ভাইরাসের আবির্ভাবে মানব সভ্যতা ঝুঁকির মুখে। রেখে যাচ্ছে ধ্বংসাত্মক প্রভাব। গত ৩৭ বছরে ৩৯টি নতুন ভাইরাসে সংক্রামক রোগ দেখা দিয়েছে। এইডস, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা, সার্স, জিকা, চিকুনগুনিয়া, মারকার্গ, নিপাহ ভাইরাস, ডেঙ্গু ইত্যাদি। সামনের দিনগুলোতে আরও কত ভাইরাস আসবে, কত নতুন আতঙ্ক ছড়াবে, কত রোগের পুনরাবির্ভাব ঘটবে আরও কী হবে কেউ কি বলতে পারে! ভাইরাসের হাত থেকে যেন নিস্তার নেই। গত বছর মশক প্রজাতির এডিস নিয়ে কিই না তাণ্ডব। অতি ক্ষুদ্র এই প্রতিপক্ষের সঙ্গে ভীষণ তীব্র লড়াইয়ে নামতে হলো। এডিস নিধনে ফগার মেশিনে রাসায়নিক অস্ত্র (দ্রব্য) ভরে ড্রেনে পথে অলিতে গলিতে ধোঁয়া উদগিরণ করে নিয়ন্ত্রণ করা হলো ডেঙ্গু। সময় লাগলো অন্তত মাস ছয়েক। হঠাৎ করে থেমেও গেল। মানুষ ডেঙ্গু ভুলতে শুরু করেছে। নতুন বছরের দ্বিতীয় মাসেই আবির্ভাব হলো করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাসের। করোনা নিয়ে মানুষ আতঙ্কিত। পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভাবনা শুরু হয়েছে। কারণ মশককূল বসে নেই। বাসা বাড়িতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মানুষ এখন কোনটা সামলাবে! করোনা না ডেঙ্গু না নতুন কিছু। দেশের প্রতিটি স্থানে কারও না কারও আত্মীয়স্বজন বিদেশ বিভূঁইয়ে আছেন। তারা আসা যাওয়া করছেন। নিকটজন তাদের দেশে আসতে বারণ করছেন। তারপরও অনেকে আসছেন এই ভেবে বিদেশের চেয়ে দেশ হয়তো অতটা ঝুঁকির মধ্যে নেই। এসেও স্বস্তি মিলছে না। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতিতে আপনজনেরাই হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে দিচ্ছেন অন্তত ১৪ দিন। অনেকে এটা মানছেন না। অনেকে স্বেচ্ছায় বাড়িতে নির্দিষ্ট ঘরে থাকছেন। যদিও এই সংখ্যা কম। এত কিছুর পরও জীবন থেমে নেই। থেমে থাকেও না। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়। কেনা কাটা, বাজার হাট করতে হয়। সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে না। বিয়ের আয়োজন হয়। ঘর সাজাতে হয়। নিমন্ত্রণ করতে হয়। নিমন্ত্রিতদের বিয়ে ও বৌভাত অনুষ্ঠানে যেতে হয়। এমনই এক অনুষ্ঠানের চিত্র ছিল এ রকম- বৌভাতের নিমন্ত্রণ কার্ডের নিচে অপরাগতায় ফোন নম্বর লিখার সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘অনুগ্রহ করে করোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থায় আসবেন। আমাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে’। অতিথিগণের কেউ মাস্ক পরা। কারও হাতে রাবার গ্লাভস। করমর্দনের (হ্যান্ড শেক) পরিবর্তে শুধুই সালাম বিনিময়। যতটা পারা যায় নিরাপদ দূরত্বে থাকা। স্টেরিও সাউন্ডে মৃদু সঙ্গীতের ফাঁকে সুন্দর কণ্ঠে ঘোষণা- সুধীজন আপনারা অনুগ্রহে করে অনুষ্ঠানে প্রবেশের পরই বেসিনে রাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা কাপড় কাঁচা সাবানে ভাল করে হাত ধুয়ে নিন। অনুগ্রহ করে পাশাপাশি বেসিনে হাত না ধুয়ে একটি বেসিন ছেড়ে পরেরটিতে এসে দূরত্ব বজায় রাখুন। খাবার টেবিলে বসার আগে আরও একবার হাত ধুয়ে ফ্রেশ টিস্যু পেপারে হাত মুছে নিন। অনুষ্ঠানে খাবার টেবিলেও সতর্কতা। যে টেবিলে সাধারনত উভয় প্রান্তে তিন জন করে ছয়জন বসেন সেখানে চার জনের বসবার ব্যবস্থা। যারা খাবার সার্ভ করছেন তাদের গ্লাভস মাস্ক পাতলা প্লাস্টিকের গাউন পরানো হয়েছে। যারা উপহার সামগ্রী গ্রহণ করছেন তাদের মাস্ক গ্লাভস পরা আছে। বর কনের বসবার জায়গাটিতে অতিথিদের ভিড় কমানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থায় নিমন্ত্রিতরা কেউ অখুশি হননি। তারাও সাবধানতা অবলম্বনের কৌশল নিয়ে ভাবছেন। কয়েকজন বললেন এটা না হয় উন্নত অডিটোরিয়ামে ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষ কি এমন আয়োজন করতে পারবেন। পাল্টা উত্তর মিলছে- সাধ্যের মধ্যে যতটা পারা যায় তা করলে তো ক্ষতি নেই। অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রিত অতিথি মাশহুদা মাধবী বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করেছেন। বগুড়ার নগরীর একটি চিত্র- কেন্দ্রস্থল সাতমাথার কাছে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে নিত্যদিন তরুণ-তরুণীদের আড্ডা বসে। চা কফি, ফুচকা পিঁয়াজু হালিম সেদ্ধ বুট শিক কাবাবসহ মুখরোচক খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। গত ক’দিনে এই আড্ডা অর্ধেক কমেছে। লোকজন যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছে। ক’দিন আগে গরম পড়েছে। তবে গত দুদিনে হঠাৎ করে আবহাওয়া ফের শীতল হওয়ায় মানুষের মধ্যে অযাচিত এক আতঙ্ক পেয়ে বসেছে। যারা সিজনাল জ¦রজারি সর্দি কাশিতে আক্রান্ত তারা কিছুটা ভীত হয়ে পড়েছেন। যদিও চিকিৎসকগণ বলছেন এর সঙ্গে করোনার কোন সম্পর্ক নেই। তবুও আতঙ্কের জায়গাটি তো আর থেমে থাকে না। মানুষের খাদ্য তালিকাতেও পরিবর্তন এসেছে।
×