ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিমান খাত

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২০ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিমান খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর আকাশপথে যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। সব দেশেই ফ্লাইটের পরিমাণ নেমে এসেছে নগণ্য পরিমাণে। বাংলাদেশেও অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। উড়োজাহাজ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রভাব পড়বে বিমান খাতে। এরই মধ্যে এয়ারলাইন্সগুলোর রাজস্ব কমতে শুরু করেছে। এই ভাইরাসের প্রভাবে এই খাতে ধসও নেমে আসতে পারে। বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা যায়, দেশী-বিদেশী মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ২৮টি বিমান সংস্থা প্রতি সপ্তাহে আন্তর্জতিক ৬০৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল। সেই সংখ্যা এখন অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। গত আড়াই মাসে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটের ২৩৭টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশী-বিদেশী বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে এই ফ্লাইট কমে যাওয়ায় তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের চারটি বিমান সংস্থা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। জানা যায়, সপ্তাহে বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছিল ২১৮টি। ১৭টি রুটের মধ্যে ১০টি রুটে এরই মধ্যে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সাতটি রুটে ফ্লাইট চলছে। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলছে সপ্তাহে ৭০টির মতো। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) তাহেরা খন্দকার বলেন, এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যেকোনো এয়ারলাইন্সের জন্যই কষ্টসাধ্য। কেননা এই পরিস্থিতি কবেনাগাদ স্বাভাবিক হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। আমাদের দুই-তৃতীয়াংশ ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর রাজস্বের দিক থেকে তো অনেক ক্ষতি হয়েই গিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রাজস্ব নেমে এসেছে ৩৫ শতাংশে। সার্বিকভাবে এর ক্ষতির পরিমাণ কত হবে, তা হিসাব করতে আমাদের একটি টিম কাজ করছে। এদিকে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করত ৯৮টি। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৪২টি। তবে প্রতিদিনের অভ্যন্তরীণ ৬০টি ফ্লাইট এখন পর্যন্ত ঠিকঠাকমতো চলছে। জানতে চাইলে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে আমাদের রাজস্বের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। সামনে আরও বড় ক্ষতি হতে পারে। আর এই ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী, যা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। একই পরিস্থিতি রিজেন্ট এয়ারওয়েজেরও। সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করত এই এয়ারলাইন্সটি। বর্তমানে তাদের ফ্লাইট চলছে সাতটি। তবে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট অব্যাহত আছে তাদের। এ বিষয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সহজ হবে না। তাছাড়া এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে, সেটিও জানা যাচ্ছে না। আমাদের রাজস্ব ৪০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। এমন চলতে থাকলে আমাদের টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়বে। ভ্রমণ বিষয়ক নিউজ পোর্টাল বাংলাদেশ মনিটর’র সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম এয়ারলাইন্সগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে বলেন, দেশের এয়ারলাইন্সগুলো নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ৪৭ বছর ধরে বাংলাদেশ বিমান লাভজনক অবস্থানে নেই। কিন্তু যখনই তারা একটু লাভজনক হতে নতুন কয়েকটি বিমান কিনছে, তখনই এই অবস্থা। প্রাইভেট সংস্থাগুলোরও একই অবস্থা। বেশিরভাগ রুটই বন্ধ। যেগুলো চালু আছে, সেগুলোতেও তেমন যাত্রী নেই। এককথায় করোনাভাইরাসের কারণে বিমান খাতে ধস নামবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, বিশ্ববাজারে বিমানের তেলের দাম কমেছে। বাংলাদেশেও তেলের দাম কমানো দরকার। বাংলাদেশ বিমানকে ভর্তুকি দিয়ে চালানো হয়। তাই প্রাইভেট ক্যারিয়ারগুলোকে বাঁচাতে অভ্যন্তরীণ রুটগুলো তাদের দিয়ে দেয়া উচিত। একইসঙ্গে বিমানের ভ্যাট, ট্যাক্স ও ল্যান্ডিং চার্জ মওকুফ করা প্রয়োজন। নইলে তাদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আশীষ রায় বলেন, অনেক বিদেশী বড় বড় এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো কতটুকু ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে প্রাইভেট খাতের এয়ারলাইন্সগুলোকে বাঁচাতে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
×