ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বড় দলগুলোর ব্যর্থতায় জমে ওঠা লীগ স্থগিত

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১৯ মার্চ ২০২০

বড় দলগুলোর ব্যর্থতায় জমে ওঠা লীগ স্থগিত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইংরেজ আমলে ১৯১৫ সাল থেকে ঢাকায় প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ শুরু হয়। পাকিস্তান আমলে ঢাকায় প্রথম লীগ শুরু হয় (ঢাকা লীগ) ১৯৪৮ সাল থেকে। আর বাংলাদেশ আমলে প্রথম লীগ শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে। ১৯৯৩ সালে নাম বদলে প্রিমিয়ার ডিভিশন লীগ এবং ২০০৭ সালে নাম বদলে ‘বি’ লীগ ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ লীগ’ এবং ২০১২ সালে নতুন নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ (বিপিএল) নামে। ২০০৭ সালে যখন ‘বি’ লীগ শুরু হয় তখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সদর্পে ঘোষণা দিলÑ এই লীগের মাধ্যমে পেশাদার ফুটবলের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। কিন্তু হাস্যকর ও দুঃখজনক হলেও সত্যÑ কোন ক্লাবই পেশাদার হিসেবে নিজেদের শতভাগ প্রমাণ করতে পারেনি (কিছুটা কাছাকাছি গিয়েছিল শেখ জামাল ধানম-ি)। একযুগ পরও চিত্রটা খুব একটা বদলায়নি। তবে একটি ক্লাব ব্যতিক্রম। তাদের এখনই বলা যায় শতভাগ পেশাদার ক্লাব। ক্লাবটির নাম হচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। গত আসরে তারা আত্মপ্রকাশেই শিরোপা জিতেছিল। ক’দিন আগে এএফসি কাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে প্রথম ম্যাচেই বড় জয় কুড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন এবারও লীগ শিরোপা অনায়াসেই জিততে যাচ্ছে তারা। কিন্তু প্রথম লেগের খেলা শেষ হবার আগেই টানা দুই ম্যাচে হেরে সেই ধারণার ভিত্তি টলিয়ে দিয়েছে তারা। ৬ ম্যাচে মাত্র ১০ পয়েন্ট তাদের। পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান? শুনলে নিশ্চয়ই চোখ কপালে উঠে যাবে, ষষ্ঠ। গত ৭ মার্চ নতুন ভেন্যু কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরে অঘটনের শিকার হয় বসুন্ধরা কিংস। হারের কারণ হিসেবে তারা অসমতল মাঠের অজুহাত দিয়েছিল। কিন্তু ১৫ মার্চ তার পরের ম্যাচে নিজেদের হোম ভেন্যুতেই (নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়াম) তিন গোল করে এগিয়ে গিয়েও প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে ৪-৩ গোলে হারকে এবার আর কিছু বলে অজুহাত দিতে পারেনি তারা। আর এই দুই হারেই পয়েন্ট টেবিলে অনেক নিচে নেমে যায় তারা। এমনকি সেরা পাঁচেও থাকতে পারেনি তারা। শুধু তারাই নয়, তাদের মতো শিরোপা প্রত্যাশী আরও কয়েকটি দল হারের স্বাদ পেয়েছে। মোট কথা, করোনাভাইরাসের কারণে লীগ বন্ধ হয়ে যাবার আগ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে এই লীগে ‘অপরাজিত’ থাকার গৌরব কোন দলেরই নেই। ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে দুই আবাহনী। তবে গোল তফাতে এগিয়ে থাকায় ঢাকা আবাহনী আছে এক নম্বরে, চট্টগ্রাম আবাহনী আছে দুইয়ে। মজার ব্যাপারÑ ঢাকা আবাহনীকে একমাত্র হারের স্বাদ দিয়েছে ওই চট্টগ্রাম আবাহনীই (২-০) এবং তাও সেটা ওই ৭ মার্চেই। চট্টগ্রাম আবাহনীও হেরেছে ১ ম্যাচে। তারা যাদের কাছে হেরেছে (২-১) সেই আরামবাগ আছে পয়েন্ট টেবিলের আট নম্বরে। ৫ খেলায় তাদের সংগ্রহ ৫ পয়েন্ট। ৫ খেলায় ১২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থাকা আরেক জায়ান্ট শেখ জামাল ধানম-িও হেরেছে এক খেলায়। ০-২ গোলে তারা হারে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে। ৬ খেলায় ১২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে মোহামেডান। ২ খেলায় হেরেছে তারা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর কাছে ৪-০ গোলে এবং তাদের নিচে থাকা (৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট) সাইফ স্পোর্টিংয়ের কাছে। বরাবরই ওপরের সারির দলগুলোকে বেগ দেয়ার জন্য সুখ্যাতি আছে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির। এবার তারা আছে সাতে (৬ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট)। আটে আছে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ (৫ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট)। দুইয়ে থাকা চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-১ গোলে চমক দেখিয়েছে তারা। সমান পয়েন্ট নিয়ে নয়ে আছে বাংলাদেশ পুলিশ। একটি জয় থাকলেও এখনও বড় কোন দলকে হারাতে পারেনি তারা। বিস্ময়করভাবে পয়েন্ট টেবিলের তলানির দিকে আছে তিন সাবেক লীগ চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র, ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্রাদার্স এখনও জয়হীন। ৫ পয়েন্ট নিয়ে রাসেল দশে, ৪ পয়েন্ট নিয়ে ব্রাদার্স একাদশে এবং ১ পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে ত্রয়োদশ স্থানে মুক্তিযোদ্ধা। ১ পয়েন্ট নিয়ে মুক্তির ওপরে আছে উত্তর বারিধারা। আরামবাগের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলে ৬ গোল করে আছে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের এক নম্বরে। মজার ব্যাপার, দলের সবগুলো গোল তিনি একাই করেছেন। ৫ গোল করে দুইয়ে আছেন আরেক নাইজিরিয়ান আবাহনীর সানডে চিজোবা। এই গোলগুলোর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে সর্বশেষ ম্যাচে দলের প্রতিটি গোলই করেন তিনি (আবাহনী জেতে ৪-১ গোলে)। সেই সঙ্গে লীগের প্রথম হ্যাটট্রিকম্যানও বনে যান তিনি। ৪ গোল করে যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থানে আছেন দুজন। প্রথমজন শেখ জামালের গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড পা ওপর জোবে, দ্বিতীয়জন চট্টগ্রাম আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার নিক্সন গাইলহারমে। বাংলাদেশী ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ গোল করেছেন সাইফের ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত। সবচেয়ে বেশি গোলের যোগান দিয়েছেন বসুন্ধরার অধিনায়ক-কোস্টারিকান উইঙ্গার এবং ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা ড্যানিয়েল কলিনড্রেস (৪টি)। সবচেয়ে বেশি ৩টি করে হলুদ কার্ড দেখেছেন মোহামেডানের ডিফেন্ডার ইউসুফ সিফাত, ব্রাদার্সের উজবেক মিডফিল্ডার এতাবেক ভালিদজানোভ এবং মোহামেডানের নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার স্ট্যানলি উনিকাচি। সবচেয়ে বেশি ১টি করে লালকার্ড পেয়েছেন দু’জন। একজন বসুন্ধরার ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান, অন্যজন সাইফের স্ট্রাইকার ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। লীগ স্থগিত হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের ৭ ভেন্যুতে মোট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ৩৬টি। গোল হয় ৯৫টি। আত্মঘাতী গোল হয়েছে ৩টি। সবচেয়ে বেশি ১৩ গোল করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। সবচেয়ে বেশি ১২ গোল হজম করেছে মুক্তিযোদ্ধা।
×