ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোয়ারেন্টাইনে হেলস, অবরুদ্ধ হতে পারেন স্মিথ-ওয়ার্নাররা

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১৯ মার্চ ২০২০

কোয়ারেন্টাইনে হেলস, অবরুদ্ধ হতে পারেন স্মিথ-ওয়ার্নাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ করোনায় কাঁপছে বিশ্ব, কাঁপছে ক্রীড়াঙ্গন, কাঁপছে ক্রিকেট। ইতোমধ্যে পাঁচ-পাঁচটি আন্তর্জাতিক সিরিজ বাতিল অথবা স্থগিত হয়ে গেছে। বন্ধ প্রায় প্রতিটি দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন। অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটারদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। করোনা সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ভারতীয় তারকা ওপেনার শিখর ধাওয়ান। তবে ক্রিকেট মাঠ থেকে কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়া এ্যালেক্স হেলস এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত। সেমিফাইনালের আগে শেষ মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাকিস্তান সুপার লীগে (পিএসএল) খেলছিলেন এই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। বহু জাতি-বর্ণের দেশ ইংল্যান্ড ক্রিকেটে করোনার ভয়বহতা ঠেকাতে জরুরী এক টেলিকনফারেন্সের ডাক দিয়েছে ইংলিশ কাউন্টি কর্তৃপক্ষ এবং ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ওদিকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) বাতিল না হলেও সেখানে অস্ট্রেলিয়ানরা থাকছেন না বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ১৭ মার্চ সেমিফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগে পিএসএল বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। যেখানে করাচী কিংসের হয়ে খেলছিলেন হেলস। করোনা আতঙ্কে তার একদিন আগেই দেশে ফিরে যান এই ইংলিশ ওপেনার। এরপর তার মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে হেলস নিজেই কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এক টুইটবার্তায় হেলস বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমি এই মুহূর্তে কিছু ব্যাখ্যা দেয়া কর্তব্য মনে করছি। অন্য অনেক বিদেশী ক্রিকেটারের মতোই আমি দ্রুত পাকিস্তান ত্যাগ করেছি। কারণ করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করেছি, এই সময়টায় হাজার হাজার মাইল দূরে লকডাউনে পড়ে না থেকে পরিবারের পাশে থাকাই উত্তম।’ কোরারেন্টাইনে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে হেলস যোগ করেন, ‘রবিবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই আমার মনে হচ্ছিল আমি জ্বরাক্রান্ত। এ জন্যই সরকারের পরামর্শ মেনে আমি নিজেকে কোরারেন্টাইনে নিয়ে গেলাম। আমার শুষ্ক কাশি এবং কফ এখনও রয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন বোধ করছি না। আশা করছি খুব দ্রুতই এই অবস্থা শেষ হবে। না হয় শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই আমি চেকআপ করাব।’ কিংবদন্তি পাকিস্তান ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম সবার সুস্থতা কামনা করেছেন, ‘আমাদের ভালবাসার পিএসএলে অন্যরকম অবদান রাখায় দেীশ-বিদেশী সব খেলোয়াড়কে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সবাইকে যার যার পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আমরা সবার নিরাপত্তা প্রত্যাশা করি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন বিশ্বের পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।’ শোয়েব আখতার বলেছেন, ‘আমরা অন্য জাতি ও বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। এটা বৈশ্বিক দুর্যোগ। আর কোন মানুষ মারা যাক সেটি কেউই চাই না।’ শহীদ আফ্রিদির মন্তব্য, ‘পিসিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। তবে স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাই আগে। বিশেষ করে যাদের বাড়ি ফেরার তাড়া আছে।’ করোনাভাইরাসের প্রভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের আসন্ন ইংল্যন্ড সফর এবং সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ঘরোয়া মৌসুমের কি হবে সেটি নিয়ে আলাপ করতে দ্রুতই এক যৌথ টেলিকনফারেন্সের ডাক দিয়েছে ইংলিশ কাউন্টি কর্তৃপক্ষ ও ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ধাওয়ানের কেসটা অবশ্য হেলসের মতো নয়। তিনি ইউরোপে ঘুরতে গিয়েছিলেন। ফেরার পর সরকারী নির্দেশ মেনে এখন কোয়ারেন্টাইনে আছেন এই তারকা ওপেনার। করোনায় অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সিরিজ বন্ধ হয়ে গেলেও সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে আইপিএল নিয়ে। কারণ এটি বন্ধ হলে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) তাই অন্তত ১৫ দিন পিছিয়ে ১৫ এপ্রিল আসর শুরু করতে চায়। প্রয়োজনে আইপিএলের আকার ছোট করে, দর্শকশূন্য মাঠে হলেও আয়োজন করতে চায়। কিন্তু তাতেও বাদ সাধতে পারে করোনাভাইরাস। কারণ ইতোমধ্যে অনেক দেশ ভিসা প্রসেসিং এবং বিমান চলাচল বাতিল করেছে। রুদ্ধদ্বার আইপিএল অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে অস্ট্রেলিয়ানদের পাওয়া যাবে কি না সেই প্রশ্ন এখনই সামনে আসছে। কারণ খোদ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াই (সিএ) এমন ইঙ্গিত দিয়ে রাখছে, এবারের আইপিএলে তাদের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ আটকে যেতে পারে করোনাভাইরাসের কারণে। সিএ এক জরুরী সভার পর বাতিল করেছে তাদের ঘরোয়া শেফিল্ড শিল্ডের ফাইনাল। নিয়ম অনুযায়ী ঘরোয়া লীগ বন্ধ হলেও খেলোয়াড়রা চাইলে আইপিএলসহ বিদেশী লীগে অংশ নিতে পারেন। সিএ’র প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্ট জানিয়েছেন, খেলোয়াড়রা ব্যক্তিগতভাবে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন, তাই তারা খেলবেন কি খেলবেন না সেই সিদ্ধান্তও তাদেরই। তবে বাস্তবতা হলো, কোন খেলোয়াড়ই সিএ’র নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) বা অনাপত্তিপত্র ছাড়া আইপিএল কিংবা যুক্তরাজ্যে হান্ড্রেড টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবেন না। আর সেটা বোর্ড দেবে কি না নিশ্চিত করে বলছে না। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এক প্রতিবেদনে এসেছে, সিএ-সাধারণত প্রতি বছরই আইপিএলে খেলোয়াড়দের এনওসি দেয়। তবে এবারের বিষয়টি আলাদা। প্রয়োজনে তাদের না খেলার ব্যাপারে বোর্ডের নির্দেশনাও আসতে পারে। যদি সত্যিই এমন কিছু হয় তবে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। আইপিএলে বেশ দামেই বিক্রি হয়েছেন প্যাট কামিন্স, স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। আইপিএলের নিলামে কামিন্স ছিলেন বিদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে দামী। কলকাতা নাইট রাইডার্স অস্ট্রেলিয়ান এই পেসারকে কিনেছে সাড়ে ১৫ কোটি রুপী দিয়ে।
×