ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারাভিযান নিয়ে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৯ মার্চ ২০২০

নির্বাচনী প্রচারাভিযান নিয়ে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

শাহীন রহমান ॥ করোনা আতঙ্কের মধ্যেই আসন্ন কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে অটল থাকায় ভোটার ও নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সারাবিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জনগণের মধ্যে করেনা আতঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ অবস্থায় ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনসহ দেশের তিনটি আসনের উপনির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। ২৯ মার্চে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিতেও কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনে জনসমাগমের কারণে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া নির্বাচন স্থগিত না হওয়ায় পাঁচটি আসনের উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। ফলে নির্বাচনী প্রচারকে কেন্দ্র করেও বাড়ছে জনসমাবেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে নির্বাচনী প্রচারের কারণে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। একবার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে তা রোধ করা সম্ভব হবে না। তাই ইসির উচিত হবে এই মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া। তারা বলছেন করোনা ঝুঁকির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কোন ভোটার কেন্দ্রে যাবে না। যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তারা আতঙ্কের মধ্যে থাকবেন। পোলিং এজেন্টও ভয়ে মধ্যে থাকবেন। এ অবস্থায় জাল ভোট রোধ করা যেমন দুরূহ হয়ে পড়বে। এছাড়া নির্বাচনের কারণে কোন কোন কেন্দ্রে জনসমাগমও বাড়বে। ফলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাবে বলে তারা জানান। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার একে এক সব কিছু বন্ধ করে দিচ্ছে। স্কুল, কলেজ বন্ধ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার চিন্তাভাবনা চলছে। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া। পরে যে কোন সময় নির্বাচন করা যাবে। কিন্তু এই করোনা আতঙ্কের মধ্যে নির্বাচন করাটা মনে করি ঝুঁকিপুর্ণ হবে। এছাড়া এভাবে নির্বাচন করলে কেন্দ্রেও কোন ভোটার যাবে না। যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারাও আতঙ্কের মধ্যে থাকবেন। তিনি বলেন, ইসি নির্বাচন বন্ধ করবে কি না সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো আপাতত নির্বাচন স্থগিত রাখাই বাঞ্ছনীয়। আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন। একইদিনে বাগেরহাট-৩ ও গাইবান্ধা-৪ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। একইদিনে বগুড়া যশোর একটি করে আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, করোনাভাইরাস কতখানি প্রভাব ফেলবে, তা আরও দুএকদিন পর্যবেক্ষণ করবে ইসি। এরপরই নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ইসির কর্মকর্তারা জানান, ইসির এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হলো ২১ মার্চে ঢাকা-১০ আসন বাগেরহাট ও গাইবান্ধার উপনির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় তারা। এর পরে ২৯ তারিখে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনসহ অন্য নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইসির এই ধরনের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে করোনা আতঙ্কের কারণে বিশ্বের অনেক দেশ নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। বিমান চলাচল সীমান্ত, বন্ধ করে দিয়েছে। সারাদেশকে লক ডাউনে রেখেছে। ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। পার্শ¦বর্তী ভারতও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে প্রার্থীরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারের স্থান জনসমাগমে রূপ নিচ্ছে। তারা ভোটারের সঙ্গেও ব্যাপকভাবে মিশছেন। করমর্দন করছেন। এভাবে নির্বাচনী প্রচারে যেমন ঝুঁকি রয়েছে। তেমনি নির্বাচনের দিন জনসমাগম হলে করোনাভাইস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন করলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। একজনের কাছ থেকে তা অন্যদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলেন, এমনিতেই মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে তারা ভোট দেয়ার জন্য কোনভাবেই কেন্দ্রে যাবে না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন করা ইসির জন্য ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন। মাত্র এক সপ্তাহ আগে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও নতুন করে চারজন আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের মধ্যে যেমন বিদেশ থেকে আসার প্রবাসীরা রয়েছেন। অপর দিকে তাদের সংস্পর্শে এসেও অনেকে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এই করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার বলেছেন, প্রয়োজনে আন্তঃজেলা যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ অবস্থায় নির্বাচন করে জনসমাগম করলে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। অবিলম্বে ইসির উচিত হবে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া। পরে সুবিধা মতো সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। শুধু গণপরিবহন নয়, দেশে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাস্তাঘাটে লোক সমাগম কমে গেছে। ব্যস্ত রাজধানীর রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। বেশিরভাগ বাসিন্দারা মুখে মাস্ক ব্যবহার করে চলাফেরা করছেন। যাদের প্রয়োজনের কারণে অফিস আদালতে যেতে হচ্ছে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সর্দি কাশি হলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে মসজিদ বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পুরো দেশ লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনও নির্বাচনে অনড় থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ভোটারদের মধ্যে।
×