ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা কারা প্রশাসনের

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৯ মার্চ ২০২০

করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা কারা প্রশাসনের

করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা কারা প্রশাসনের নতুন বন্দীকে ১৪ দিন আলাদা রাখা হচ্ছে মশিউর রহমান খান ॥ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা অবলম্বন করছে কারা প্রশাসন। কোন বন্দী যদি একবার করোনা আক্রান্ত হয় তাহলে অতি দ্রুততার সঙ্গে কারাগারে তা ছড়িয়ে পড়বে ও অন্য যে কোন স্থান থেকে অন্তত কারাভ্যন্তরে ভয়ানক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এজন্যই এ বন্দীর সর্বোচ্চ সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কারা বিভাগ। প্রতিটি বন্দীকে করোনাভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য পাঁচটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বসানো হয়েছে পাঁচটি থার্মাল স্ক্যানার। বাকি নতুন কারাগারগুলোতেও তা বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কারা প্রশাসন কারাগার থেকে আদালতে গাদাগাদি করে বন্দী আনা নেয়া বন্ধ করতে দেশের সকল কারাগারের জন্য নতুন করে অতিরিক্ত প্রিজন ভ্যান প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়েছে। একইসঙ্গে বন্দীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাধ্যমে করোনা মেকাবেলায় বন্দীর জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হলে তার নির্দেশনা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে কারা অধিদফতর। করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে বন্দী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অধিদফতরের নির্দেশিত কর্মকা- সঠিকভাবে পরিচালনা করছেন কি তা তা কঠোরভাবে মনিটরিং করে প্রতি সপ্তাহে তার রিপোর্ট প্রদান করতে উপকারা মহাপরিদর্শকদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে কারা অধিদফতর। দেশের প্রতিটি এছাড়া নতুন পুরাতন সকল বন্দীর তাপমাত্রা মাপা পরীক্ষার জন্য প্রতিটি কারাগারে দেয়া হচ্ছে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। বন্দী কারাগারে প্রবেশের পরপরই তাকে এ মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। মূলত কারা প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বেও সঙ্গে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে ও তা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে সকল কারাগারকে নির্দেশ দিয়েছে। নতুন বন্দীদের কারাগারে প্রবেশ থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত কি কি করণীয় তা নিয়ে করা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে দেশের সব কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বন্দী যেন কোনক্রমেই করোনা নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে বা করলেও তা যেন ছড়াতে না পারে তার দিকে লক্ষ্য রাখতে জেল সুপার ও জেলারসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে কারা প্রশাসন। একইসঙ্গে করোনা মোকাবেলায় কারা অধিদফতরের দেয়া নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়নে কোন অবহেলাই সহ্য করা হবে না জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্নেল আবরার হোসেন। কারাসূত্র জানায়, করোনা মোকাবেলায় বন্দীদের আদালতে যাওয়ার সময় সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করা, বন্দীর করোনা আক্রান্ত হলে করণীয় ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে প্রতিদিনই সচেতনতা তৈরি করতে আলোচনা করা, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও বন্দীদের নিয়মিত হাত ধোয়া, কারাগারের স্টাফদের সুরক্ষার জন্য হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে কারা অধিদফতর। এছাড়া বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাত প্রার্থীদের সংখ্যা দুইয়ের অধিক না আসতে উৎসাহিত করা ও সাক্ষাতের সময় আগে মানবিক দিক বিবেচনায় জেলকোড অনুযায়ী আধা ঘণ্টার বেশি সময় সাক্ষাতের সুযোগ প্রদান করলেও নতুন নির্দেশনায় তা আধা ঘণ্টাই রাখার নির্দেশ দিয়েছে কারা বিভাগ। কারাসূত্র জানায়, দেশের সকল কারাগারে আটক বন্দীদের মাঝে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদফতর। কারা ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন নতুন বন্দী কারাগারে প্রবেশ করলেই সন্দেহজনক করোনা আক্তান্ত কি না তা দূর করতে ইনকিউবিশন পিরিয়ড হিসেবে পরবর্তী ১৪ দিন বিশেষ পর্যবেক্ষণ বা অনেকটা কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতিতে বন্দীকে রাখার বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে কারা অধিদফতর। নতুন সকল বন্দীকে আমদানি কক্ষে বন্দী করোনা আক্রান্ত কি না তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। এসব বন্দীকে দেখার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে বন্দীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে। কোন সন্দেহজনক বন্দী পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনে বাইরের সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কারা বিভাগ। জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের বৃহত্তম ৫টি কেন্দ্রীয় কারাগারে বসানো হয়েছে ৫টি থার্মাল স্ক্যানার। যেখানে নতুন প্রতিটি বন্দীকেই করোনাভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। নতুন পুরাতন সকল বন্দীর তাপমাত্রা মাপার জন্য প্রতিটি কারাগারে দেয়া হয়েছে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। তা দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। ইতোমধ্যেই প্রায় সকল কারাগারে এসব থার্মোমিটার পৌঁছে দেয়া হয়েছে বাকি কারাগারগুরেঅতে আগামী ২ দিনের মধ্যেই এসব ইনফ্রারেড থার্মোমিটার কারা অধিদফতর পৌঁছে দেবে বলে জানা গেছে। এছাড়া কারাগারের প্রতিটি ব্যক্তিকে কাজ শুরুর আগে ও পরে এবং প্রতিটি বন্দীকে টয়লেট থেকে ফেরার পর বাধ্যতামূলকভাবে হাত ধোয়ার জন্য সাবানের ব্যবস্থা রখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা কারাবন্দীদের মাঝে করোনা নিয়ে কোন প্রকার আতঙ্ক সৃষ্টি যেন না হয় তার উদ্যোগ নিয়েছি। কারা ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন নতুন বন্দী কারাগারে প্রবেশ করলেই সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত কি না তা দূর করতে ইনকিউবিশন পিরিয়ড হিসেবে পরবর্তী ১৪ দিন বিশেষ পর্যবেক্ষণ বা অনেকটা কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতিতে বন্দীকে রাখার বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। নতুন সকল বন্দীকে আমদানি কক্ষে বন্দী করোনা আক্রান্ত কি না তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। এসব বন্দীকে দেখার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে বন্দীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে কারা প্রশাসন। বাধ্যতামূলকভাবে কারাভ্যন্তরের রান্না থেকে শুরু করে সকল কাজ করার আগে ও পরে ভালভাবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া বন্দীর অধিক সেবায় নিয়োজিত কর্মরত স্টাফদের জন্য হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াশ প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া প্রতিটি বন্দীও টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ভালভাবে ধুতে প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাবান ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া এ অবস্থায় করোনা এড়াতে কারাবন্দীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ২ স্বজনকে নিয়ে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে কারা অধিদফতর নিয়মিত কঠোরভাবে সকল কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। করোনা নিয়ে নির্দেশিত দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্টদের কোন প্রকার অবহেলা সহ্য করা হবে না।
×