ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৮ শিল্প হাব নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ পাবে

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৯ মার্চ ২০২০

২৮ শিল্প হাব নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ পাবে

রশিদ মামুন ॥ দেশের ২৮ শিল্প হাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী ১২ পল্লী বিদ্যুত সমিতি এসব শিল্প হাবে বিদ্যুত সরবরাহ করে থাকে এজন্য আরইবি এক হাজার ২৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শিল্প হাবগুলোতে দৈনিক এক হাজার ৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হয়। বোর্ড সূত্র বলছে ছয় মাস থেকে চার বছর মেয়াদী তিন ধাপের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এসব শিল্পগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ পাবে। আরইবি সূত্র বলছে, শিল্প উদ্যোক্তারা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না পাওয়াতে গ্রিডের বিদ্যুতে আস্থা রাখতে পারে না। তারা বিকল্প উপায়ে বিদ্যুত উৎপাদন করে শিল্প পরিচালনা করে থাকে। সরকার মনে করছে শিল্পে বিদ্যুতের সরবরাহ না বৃদ্ধি করা গেলে দেশের অনেক বিদ্যুত কেন্দ্রকে বসে থাকতে হবে। এতে করে বিপুল পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়বে বিদ্যুত খাত। এজন্য সব বিতরণ প্রতিষ্ঠানকে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন দেশে ২৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক চাহিদা রয়েছে। সঙ্গত কারণে শিল্প গ্রাহক বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ সম্পর্কে বলেন, শিল্পহাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করার জন্য প্রতিটি বিতরণ প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প তৈরি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুত বিভাগে জামা দিতে বলা হয়েছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছি। এতে শিল্প এলাকা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় আসবে। আরইবি সূত্র বলছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি ঢাকা-১ এর নবীনগগর, চন্দ্রা মোড়, আশুলিয়া শিল্পহাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহর উদ্যোগ নিয়েছে। শিল্পহাব তিনটিতে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৫৫ মেগাওয়াট। এজন্য ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-৩ এ সাভার এবং ঢাকা-৪ এ শুভাঢ্যা জিঞ্জিরা আসছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের আওতায়। সাভার শিল্পগুলোর জন্য প্রয়োজন হয় ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। এজন্য ৫৫ কোটি টাকা ব্যায়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর জিঞ্জিরার জন্য ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন শিল্প বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় আসছে নারায়ণগঞ্জ-১ এবং ২ দুটি সমিতি। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ সমিতিতে তারাবো, কাঁচপুর, সোনারগাঁও, মেঘনাঘাট এবং মদনপুর শিল্পহাব রয়েছে। এই হাবে মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ২১০ মেগাওয়াট আর এখানে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-২ এ মুড়াপাড়া, ভূলতা এবং গাউসিয়া শিল্পহাবে ২৪ মেগাওয়াট নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ-২ সমিতির মাওনা এবং ভালুকা দুটি শিল্পহাবে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহে ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নরসিংদী-১ পল্লী বিদ্যুত সমিতির ২টি শিল্প এলাকা আসছে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের আওতায়। এই দুটি শিল্প এলাকা হচ্ছে মাধবদী এবং পাঁচদোনা। এখানে প্রতিদিন ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হয়। আর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে দিতে এখানে আরও ২০ কোটি টাকার ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুত সমিতি নরসিংদী-২ এর তিনটি শিল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হবে। এই তিনটি শিল্প এলাকা হচ্ছে চৌয়ালা, ইটাখোলা, শিলমান্দি। এখানে প্রতিদিন ৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। আর এতে ২০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় আসছে কুমিল্লা-৩ সমিতির গজারিয়া। এখানে প্রতিদিনের বিদ্যুত চাহিদা ৩৫ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ নিরবিচ্ছন্ন করতে ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। ঢাকার পার্শ^বর্তী গাজীপুরের দুটি সমিতির ৬টি শিল্পহাব নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় আসছে। এগুলো হচ্ছেÑ গাজীপুর-১ সমিতির কাশিমপুর, বোর্ডবাজার, কড্ডা, জয়দেবপুর এবং কোনাবাড়ি। প্রতিদিন এই পাঁচ শিল্প এলাকায় ১৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন। এজন্য সব থেকে বেশি ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুর-২ সমিতির রাজেন্দ্রপুর শিল্প এলাকায় ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত নিরবিচ্ছন্ন সরবরাহে ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল-১ পল্লী বিদ্যুত সমিতির মির্জাপুর এলাকায় ৫০ মেগাওয়াট নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য ৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব সমিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি ওইসব সমিতিতে প্রথমে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে দেশের বেশিরভাগ শিল্প কারখানা রয়েছে। এখানে তৈরি পোশাক কারখানার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় কারখানা। শ্রমঘন এসব কারখানার অনেকেই গ্রিড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ করে না।
×