ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ করোনা ভাইরাস : চাই সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১৯ মার্চ ২০২০

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ করোনা ভাইরাস : চাই সতর্কতা

গত প্রায় ৩ মাস ধরে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১৫০টি দেশে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছে। যত সময় যাচ্ছে ততই এই রোগ বিস্তার লাভ করছে। প্রতি দিনই মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখন আর এই রোগ নির্দিষ্ট কোন অঞ্চল বা এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। এখন এই রোগ মহামারী রূপ ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ইউরোপীয় দেশসমূহে। ইতালির অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ওই দেশে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করে দেশে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। করোনার তাণ্ডবে কানাডা সরকার তাদের জাতীয় সংসদ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় অর্ধেক পৃথিবীর সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ইরান, কুয়েত ও তিউনিসিয়ায় মসজিদে নামাজ পড়া স্থগিত করা হয়েছে। এখন আসল কথা হলো এ রোগ সৃষ্টি হলো কি ভাবে? জানা যায় যে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রিঃ চীন দেশের উহান শহরে এ রোগের উদ্ভব হয়। এবং এক সময় এ রোগ সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন এই রোগের উৎপত্তি স্থানকে এক ধরনের মানুষ নানাভাবে ওই অঞ্চলকে এ রোগের জন্য দায়ী করছে। তারা ধর্মীয় চেতনা থেকে বিষয়টিকে বিবেচনা করছে এবং এই রোগ সৃষ্টিকর্তার গজব বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। আর এই গজব নাজিল হওয়ার কারণ হিসাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথা প্রচার করছে। সৃষ্টিকর্তা রুষ্ট হয়ে ওই দেশের মানুষকে শাস্তি দেয়ার জন্য করোনাভাইরাসকে প্রেরণ করেছেন। এটা মানুষের পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়। গুজব রটনায় বাংলাদেশও থেমে নেই। সম্প্রতি গোপালগঞ্জে গুজব রটানো হয় যে ৭টি তুলসী পাতা খেলে আর করোনাভাইরাস হবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গুজব প্রকাশ হওয়ার ফলে এলাকায় তুলসী গাছের বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এ রকম প্রচুর বানোয়াট কিচ্ছাকাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হচ্ছে। এসব অপপ্রচারের ফলে সাধারণ আমজনতা প্রকৃত বিষয়টিই বুঝতে পারছে না। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। অথচ সরকার বার বার করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টির ঘোষণা দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং এ ব্যাপারে সরকার খুব সতর্ক অবস্থায় আছে। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে কারও মৃত্যু হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে করোনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট সফলতা। কিন্তু এই অর্জনকে ধর্ম ব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী গজব আখ্যায়িত করে ম্লান করে দিচ্ছে। যদি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর গজবকে মান্য করে বসে থাকেন তা হলে এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে করোনাভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণা চলছে এবং এক সময় ওষুধ আবিষ্কারও হবে, তখন দেখবেন ওইসব সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ঠিকই করোনার ওষুধ ব্যবহার করছে। তখন কিন্তু গজব বলবে না। এদের কোন লাজ-লজ্জা নেই। এরা বেহায়া, নিমকহারাম। অতএব, এসব বেহায়াদের কথায় বিশ্বাস না করে সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সকলের প্রতি অনুরোধ, আপনারা কোয়ারেনটাইনে থাকবেন, নিজকে, নিজের পরিবার তথা সমাজকে করোনামুক্ত রাখতে সচেষ্ট হবেন। গীর্জাপাড়া, মৌলবীবাজার থেকে
×