ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাট ডাউন!

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ১৯ মার্চ ২০২০

শাট ডাউন!

করোনা আতঙ্কে সব স্কুল-কলেজ-উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং বিশ্বজুড়েই। বাদ যায়নি শিক্ষা দীক্ষার পাদপীঠ বলে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রও। সেখানে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বেশ কিছুদিন থেকেই। বুয়েট ও ঢাবিতে ক্লাস বর্জনসহ ছাত্র আন্দোলনের খবরও ছিল। অবশেষে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। তবে বিশ্বের সব দেশকে একেবারে টেক্কা দিয়েছে মালয়েশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপিন্স। মালয়েশিয়া সরকার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশব্যাপী ১৮ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঘোষণা করেছে ‘লক ডাউন’। লক ডাউন চলাকালীন ১৪ দিন সব ধরনের সুপার শপ, পাবলিক প্লেস, চেন শপ, মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স এমনকি মসজিদের সব ধরনের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ থাকবে। মোটকথা, এ সময়ে জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা ছাড়া সব ধরনের একটিভিটিজ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। অনেকটা একই পথে হাঁটছে বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রও। তবে তারা এর নাম দিয়েছে ‘শাট ডাউন’। লক ডাউন বা শাট ডাউন যাই বলি না কেন প্যাটার্ন বা চরিত্র একই। একটানা ১৪ দিন পাবলিক প্লেসে সব ধরনের আনাগোনা, কেনাকাটা, জনসমাগম বা অনুরূপ কার্যক্রম একেবারে বন্ধ। বিনোদনের তো প্রশ্নই ওঠে না। সরকারী তথা জাতীয় পর্যায়ে এরূপ শাট ডাউন বা লক ডাউন ঘোষিত এবং তা বাস্তবায়িত হলে দেশ চলবে কিভাবে? সাধারণ মানুষ কিভাবে বাঁচবে? তদুপরি যেটি মোক্ষম প্রশ্নÑ এই অবস্থা চলবে কতদিন ধরে? জাতীয় ও বিশ্ব অর্থনীতিরই বা কি হবে? স্বেচ্ছা নির্বাসন তথা সেফ কোয়ারেন্টাইন শেষ হলেই যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে তার নিশ্চয়তা দেবে কে বা কারা? অবশ্য একটা আশার খবরও আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের ওপর তার প্রয়োগও হয়েছে। তবে তা বাজারে আসতে আসতে বাণিজ্যও যে শুরু হবে না, কে জানে। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী মন্দার খবর আছে। করোনা এতে যোগ করেছে সর্বশেষ সমূহ সর্বনাশ। বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতি নিয়ে ইতোপূর্বে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছিলেন আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। তার আশঙ্কাই বুঝি শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্ব মন্দার কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুঁকে দিয়েছে করোনাভাইরাস, যা বর্তমানে চিহ্নিত কোভিড-১৯ অভিধায়। চীনের উহানে উদ্ভূত এই মারাত্মক ভাইরাসটি-এর মধ্যে আক্রমণ করেছে প্রায় সমগ্র বিশ্বকে, যা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি বাংলাদেশও। চীন একটি অত্যন্ত উচ্চ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ, যার ওপর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। করোনার ভয়ানক প্রভাবে দূষণ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে অনেক শহর-নগর-বন্দর-শিল্পকারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পারস্পরিক নির্ভরশীল অর্থনৈতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য। তেলের বাজারে লেগেছে ধস। মাত্র ৩০-৩৫ ডলার প্রতি ব্যারেলে বিক্রি হচ্ছে তেল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য অন্যান্য শিল্পপণ্যেও। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক, চামড়া, সুতাসহ নানা পণ্যের সরাসরি বাণিজ্য থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। এই মহাসঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার পথ ও পদ্ধতি বের করতে হবে বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দসহ অর্থনীতিবিদদের। এর পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে করোনার প্রতিষেধক ও টিকা আবিষ্কারে। সর্বশক্তি নিয়ে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে জাতীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পুনরুদ্ধারে।
×