ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকায় অভিবাসন কমছে মজুরি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৮ মার্চ ২০২০

আমেরিকায় অভিবাসন কমছে মজুরি বাড়ছে

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী মানুষের সংখ্যা অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবারের মতো হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালে সে দেশে নিট অভিবাসীর সংখ্যা কমে ৫ লাখ ৯০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এত কম অভিবাসীর আগমন আর ঘটেনি। সে দেশটি নিজেকে বহিরাগতদের কাছে উন্মুক্ত রেখেছে বলে অনেক সময় গর্বভরে দাবি করে থাকে সেখানে ওপরের তথ্যগুলো সুগভীর পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এর পাশাপাশি আরেক পরিসংখ্যানও বেশ লক্ষ্য করার মতো। ২০১৮ ও ২০১৯ এই দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ন্যূনতম মজুরি ৩ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। আমেরিকার শ্রমবাজারে একেবারে তলানিতে যাদের অবস্থান তারা এখন বিশেষভাবে ভাল অবস্থায় আছে। গত বছর হাই স্কুলের ডিপ্লোমা না থাকা শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাটা ঘটছে এমন এক সময় যখন আমিেরকা অভিবাসীদের প্রতি আগের মতো আর উদার ও বন্ধুসুলভ নয়। আমেরিকানদের অনেকেই মনে করে যে অভিবাসীরা স্থানীয় চাকরি হরণ করে নিচ্ছে এবং তাদের কারণেই স্বল্প শিক্ষিত আমেরিকানদের ‘মজুরি কমে গেছে। দুটো ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে তা আছে কিনা তা দেখার বিষয়। অন্যদিকে অতি দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসীর সংখ্যা ক্রমাগতই বাড়ছে। সানফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে সারা বিশ্বের টেক বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা লেগেই আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে স্বল্প দক্ষ অভিবাসীর সংখ্যা হ্রাসের ফলেই আমেরিকায় বিদেশজাত জনগোষ্ঠীর সার্বিক সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া মন্দার কারণে এক দশক আগে এই সংখ্যাগুলো হ্রাস পেয়েছিল। অধিক সম্প্রতি স্বল্প দক্ষ অভিবাসীর সংখ্যা আবার হ্রাস পেয়েছে। সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির পরিণতিতে এমনটি ঘটেছে। অবশ্য আমেরিকার মজুরি বৃদ্ধির পেছনে অনেক কারণ কাজ করেছে। শ্রমের চাহিদা অতিমাত্রায় বেশি। অন্যদিকে বেকারত্বের হার ৩.৬ শতাংশ। এর ফলে কিছু শ্রমিকের দরকষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিকালে রাজ্য পর্যায়ে ন্যূনতম মজুরি শুধু আমেরিকায় নয়, ধনী দেশগুলোর সর্বত্রই বেড়েছেÑ যদিও এ ধরনের অনেক দেশেই বিদেশী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। অভিবাসীদের প্রতি আমেরিকার কমবর্ধমান বৈরী মনোভাব থেকে কিছু শ্রমিক যে লাভবান হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। স্বল্প দক্ষ অভিবাসীর আগমন হ্রাসের প্রভাব যদি কোথাও দেখা গিয়ে থাকে সেটা হচ্ছে তিনটি বিশেষ পেশার ক্ষেত্রে। এগুলো হলো গৃহপরিচর্যা, শ্রমিক, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ শ্রমিক এবং ড্রাইওয়ান ইন্সটলেটার। এই পেশাগুলো অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এসব পেশায় গড় মজুরি অন্যান্য কম পারিশ্রমিকের কাজের তুলনায় যথেষ্ট দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে পাঁচটি বড় মেট্রো এলাকায় বিদেশজাত লোকের সংখ্যা ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চরম হ্রাস পেয়েছে। সে সব এলাকায় মজুরি এখন বছরে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই পাঁচ মেট্রো এলাকার একটি হলো ক্লিভল্যান্ড। সেখানে চরম দারিদ্র্যের কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে। তবে এখন সেখানকার অবস্থা আগের চেয়ে ভাল হচ্ছে। মজুরি বৃদ্ধির এই স্বল্পমেয়াদী চিত্রে উৎসাহিত হয়ে রিপাবলিকান রাজনীতিকদের অনেকে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির জন্য অভিবাসন আরও কমানোর এমনকি অর্ধেক হ্রাস করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কিছু গবেষণামূলক নিবন্ধ থেকে জানা গেছে যে, অন্যান্য বার আমেরিকা যখন অভিশাসনের ওপর খড়গহস্ত হয়েছিল তখন স্থানীয় শ্রমিকদের তেমন কোন লাভ হয়নিÑ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিই হয়েছিল। আমেরিকার একদম প্রথম দিকের অভিবাসন বিরোধী যেসব পদক্ষেপ তার মধ্যে একটি ছিল চীনা শ্রমিকদের বের করে দেয়া। কিন্তু এতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। চীনা শ্রমিকরা মজুরি ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলেনি। কাজেই তাদের বহিষ্কারের ফলে মজুরি তেমন একটা বাড়েনি বললেই চলে। আমেরিকানদের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় স্বাস্থ্য খাতে তারা কাজ করতে আগ্রহী। আরও বেশি লোকের প্রয়োজন হবে। একের পর এক গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অভিবাসন ও দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এবং সেই কারণে চূড়ান্ত অর্থে সকল আমেরিকানের জীবনযাত্রার মানের মধ্যে ইতিবাচক যোগসূত্রে আছে। অভিবাসনের ওপর ট্রাম্পের বিধিনিষেধ আরোপের ফলে কম পারিশ্রমিকের মজুরি সাময়িকভাবে বাড়তেহ পারে। কিন্তু তার জন্য দেশের ভবিষ্যত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে মাশুল দিতে হবে। চলমাক ডেক্স সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×