ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১৭ মার্চ ২০২০

কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে মধ্যরাতে হানা ও তাকে তুলে নেয়ার ঘটনা তদন্তে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন ডিসি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম। সোমবার এ আদেশ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে আরেক প্রজ্ঞাপনে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র তিন সহকারী সচিবকে প্রত্যাহার করা হয়। তারা হলেন- নাজিম উদ্দিন, রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলাম। এদিকে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদ- দেয়ার মামলা সংক্রান্ত সকল নথিপত্র তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ২৩ মার্চ সোমবারের মধ্যে এসব নথি দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই দিন মামলার পরবর্তী আদেশ এবং শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও সোমবারের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফ এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এ ছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে ডিসি সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এ সময় একাধিকবার তাকে ডিসি অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকি দেয়া হয়। পরে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ির দরজা ভেঙ্গে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের জেল দেয়ার ঘটনায় ডিসি সুলতানা পারভীন আলোচনায় ছিলেন। এ ঘটনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নজরে এলে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কর্মকর্তারা তদন্ত করে প্রতিবেদনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়। রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ডিসির কাজে অনিয়ম পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়। কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদ- দেয়ার মামলা সংক্রান্ত সকল নথিপত্র তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ২৩ মার্চ সোমবারের মধ্যে এসব নথি দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই দিন মামলার পরবর্তী আদেশ এবং শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও সোমবারের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মোঃ রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও এ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য। আদালত বলেছে, সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এই চতুর্থ স্তম্ভ (সাংবাদিকরা) যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে রাষ্ট্রের বাকি তিন স্তম্ভ (আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে। শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন আদালতে বলেন, সাংবাদিকরা হচ্ছেন সমাজের দর্পণ। তারাই সমাজের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন। সাংবাদিকরা জেগে থাকলে সমাজে অন্যায় কম হয়। কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে বাসার দরজা ভেঙ্গে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে একজন সাংবাদিককে যেভাবে দ- দেয়া হয়েছে তা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছুই নয়। সাংবাদিক আরিফের অপরাধ তিনি ডিসির বিরুদ্ধে নিউজ করেছেন। নিউজে কোন ভুল থাকলে তার জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে। মানহানির মামলা করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে গভীর রাতে বাসার দরজা ভেঙ্গে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। এটা অন্যায় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। রবিবার সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে দেয়া সাজা ও দ-ের আদেশের অনুলিপি, অভিযান কারা পরিচালনা করেছে, মোবাইল কোর্ট নাকি টাস্কফোর্স, রাতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা, অভিযান পরিচালনার কারণ এবং আইন অনুসারে ঘটনা কার সম্মুখে কখন সংঘটিত হলো তা রাষ্ট্রপক্ষে জানাতে নির্দেশ দেয়। এ আদেশ অনুসারে রাষ্ট্রপক্ষ নথির ফটোকপি দাখিল করে। ওই দিন হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন।
×