ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মনোয়ার হোসেন

মুজিবশতবর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠান উদ্বোধন আজ

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৭ মার্চ ২০২০

মুজিবশতবর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠান উদ্বোধন আজ

ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে/চিরকাল, গান হয়ে/নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা, যাঁর নামের ওপর/কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া ...। অবিনাশী কীর্তিতে বাংলার জল-হওয়ায় এমন করেই অম্লান হয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ মঙ্গলবার স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির জন্মশতবার্ষিকী। শততম জন্মবর্ষে অবিসংবাদিত নেতাকে স্মরণ করা হবে ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতার বন্ধনে। জানানো হবে হৃদয়ছোঁয়া অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি। তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে বছরব্যাপী কর্মসূচী। আজ মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল অনুষ্ঠানটি রাত আটটায় প্রচারিত হবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। এছাড়া দিনব্যাপী থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের নানা কর্মসূচী। পাশাপাশি মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট, স্মারক নোট ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। আজ বিকেল পাঁচটায় গণভবনে উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে বিভিন্ন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত আটটায় জন্ম নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘটনাক্রমে এবারের জন্মশতবার্ষিকীতেও কাকতালীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পড়েছে মঙ্গলবার। জন্মক্ষণের সেই মুহূর্তটিকে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু হওয়া আতশবাজি ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে। উড়বে ফানুস। নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে যাবে বাঙালীর মহানায়ক ও বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের ¯্রষ্টার জন্মক্ষণের ঐতিহাসিক মুহূর্তটি। বাংলার আকাশে রাতের অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে উঠবেন মহানায়ক। সোনার বাংলার স্বপ্নমাখা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার বারতা দেবে আতশবাজির সেই আলোকরেখা। পাঁচ থেকে ৬ মিনিটের আতশবাজি দিয়ে মুজিববর্ষের বছরব্যাপী আনন্দ আয়োজনের সূচনা হবে। আতশবাজির সেই পর্বটিসহ জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত মূল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হবে সকল টিভি চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আজ রাত আটটার মহান নেতার জন্মদিনে আতশবাজির আলোয় আলোকিত হবে সারা দেশের রাতের আকাশ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বর্ণিল আতশবাজির আশ্রয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। আতশবাজির সেই পর্বটি সরাসরি সম্প্রচার হবে সকল টিভি চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর বাইরে উদ্বোধনী আয়োজনে থাকবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ার থেকে ধারণকৃত বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মুক্তির মহানায়ক নামের দুই ঘণ্টাব্যাপ্তির এ অনুষ্ঠানে অনেকগুলো কচিকণ্ঠ মিলে যাবে এক সুরে। সম্মেলক শিশু কণ্ঠে গীত হবে সোনার বাংলার উচ্চারণমাখা জাতীয় সঙ্গীত। এরপর প্রচারিত হবে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বাণী। রাষ্ট্রপতির বাণী দেয়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুভূতি প্রকাশ করবেন বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও সংস্থার প্রধানদের বাণী প্রচার হবে। যাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বিদ্যা ভান্ডারী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আল-ওথাইমিন প্রমুখ। মুজিববর্ষের টিভি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শত কণ্ঠে গাওয়া হবে মুজিববর্ষের থিম সং ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা’। এই গানে দেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। এছাড়া অনুষ্ঠানে পিতাকে নিয়ে শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শত যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীর সুরের মূর্ছনায় উপস্থাপিত হবে জাতির জনকের জীবনের নানা অধ্যায়। শতাব্দীর মহানায়ক শীর্ষক মনোমুগ্ধকর থিয়েট্রিকাল কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে বর্ণিত হবে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ, সাহস ও সংগ্রামের বিবরণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে পিক্সেল ম্যাপিং বা লেজার শোর মাধ্যমে শেষ হবে অনুষ্ঠান। আতশবাজির মতো লেজার শোটিও সরাসরি সম্প্রচারিত হবে টিভি পর্দায়। নৃত্যাশ্রিত দৃশ্যকাব্যের সঙ্গে সুরারোপিত চিত্রপটে উদ্ভাসিত হবেন বঙ্গবন্ধু। গানের সঙ্গে কবিতার মিতালীতে নাচের মুদ্রায় এগিয়ে যাবে পরিবেশনা। চেতনাদীপ্ত সুুরের সঙ্গে মিলে যাবে বাণী ও ছন্দ। নাচের সমান্তরালে বেজে উঠবে জয় বাংলা বাংলার জয় গানের সুর। সেই সুরধারা থেকেই উঠে আসবে শৈশব-কৈশোর থেকে শেখ মুজিবের সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায়। সেই জীবনে থাকবে খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্প। নেতা থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার চিত্রভাষ্য। কেমন করে স্বাধীনতার মহান স্থপতি হয়ে উঠলেন কর্মী থেকে রাজনীতির কবি; উপস্থাপিত হবে সেই দৃৃশ্যকল্প। মুজিবের জননেতা থেকে বিশ্বনেতায় পরিণত হওয়ার আখ্যানটিও উপস্থাপিত হবে সম্মিলিত শৈল্পিক পথরেখায়। এভাবেই ‘শতাব্দীর মহানায়ক’ শিরোনামের থিয়েট্রিকাল কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীতে উপস্থাপিত হবেন মহামানব শেখ মুজিব। মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারা দেশের দর্শক-শ্রোতা টিভি পর্দায় উপভোগ করবেন নৃত্য-গীত ও কবিতার সম্মিলনে সৃষ্ট ৪৫ মিনিটের মনোমুগ্ধকর এই থিয়েট্রিকাল কোরিওগ্রাফি। রাত আটটায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রচারিত হবে শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধুর জীবনাশ্রিত এ অনুষ্ঠান। সপ্তাহব্যাপী মহড়ার মাধ্যমে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সহ¯্রাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে বর্ণিল পরিবেশনাটি ধারণ করা হয়েছে। কোরিওগ্রাফির পাশাপাশি উদ্বোধনী আয়োজনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার অন্যতম আকর্ষণ থাকবে শত শিল্পীর যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনা এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ কোরিগ্রাফার আকরাম খানের নৃত্য পরিবেশনা। একইভাবে দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের গাওয়া ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা/তুমি হৃদয়ের বাতিঘর’ শিরোনামের থিম-সংটি হৃদয় রাঙাবে শ্রোতা-দর্শকের। শতাব্দীর মহানায়ক শীর্ষক প্রযোজনাটির গবেষণা, গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। প্যারেড স্কয়ারের অনুষ্ঠানটি ধারণের আগে গত দুই মাস ধরে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় হাজার শিল্পীর অংশগ্রহণে নির্মিত থিয়েট্রিকাল কোরিগ্রাফিটির মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেখ মুজিবের ত্যাগ-সংগ্রামের বর্ণিল জীবনকে ছয়টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে এই কোরিওগ্রাফিতে। সেই পর্বগুলো হলো জন্মজয়ন্তী, নতুন যৌবনের দূত, ক্ষুব্ধ স্বদেশ ভূমি, তেইশ বছরের ইতিহাস, ৩০৫৩ দিনের কারাবাস ও স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে। এই পর্বের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর থেকে তারুণ্য, গ্রাম বাংলার মানুষের প্রতি তার ভালবাসা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন কিংবা ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা থেকে অবিচল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের কথা উঠে আসবে। সেই সঙ্গে স্বাধীন দেশে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথ পরিক্রমায় তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালও উঠে আসবে কোরিওগ্রাফিতে। দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পীদের মেধার সম্মিলনে নির্মিত হয়েছে এই কোরিওগ্রাফি। আওয়ামী লীগের কর্মসূচী ॥ মুজিববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের সকল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। কর্মসূচীর মধ্যে আরও রয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সবাইকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ। এছাড়া দেশের সকল মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে। এতিম ও দুস্থদের মাঝে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করা হবে। দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে অসহায় দুস্থদের মাঝে খাবার, বস্ত্র ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবহার্য সামগ্রী বিতরণ করবে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপ-কমিটি। দুপুর একটায় বনানীর করাইল বস্তিতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এতিম ও দুস্থদের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করবে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরূপ কর্মসূচী পালন করা হবে। এছাড়া ঢাকার রবীন্দ্র সরোবর, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় দলীয়ভাবে আতশবাজি প্রদর্শনী হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচী ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে আজ দেশের সকল নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও সরকারী বেসরকারী স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১০০টি করে বৃক্ষ রোপণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনে এ বৃক্ষ রোপণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির আয়োজন ॥ মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশব্যাপী রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উদ্যোগ নিয়েছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটি। আজ নির্মূল কমিটির বিভিন্ন শাখা ১০০ ব্যাগ রক্তদান এবং ১০০টি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে মুজিববর্ষ উদ্্যাপনের সূচনা করবে।
×