ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সব সূচকেই অসামান্য অগ্রগতি

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের টেকসই অর্থনীতি আজ বিশ্ব স্বীকৃত

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৭ মার্চ ২০২০

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের টেকসই অর্থনীতি আজ বিশ্ব স্বীকৃত

রহিম শেখ ॥ ভঙ্গুর এক অর্থনৈতিক দশা থেকে একাত্তরে যাত্রা শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশটির অর্থনীতি পরাস্ত হয় বিদেশী সাহায্য ও ঋণ নির্ভরতায়। পাকিস্তানীদের শোষণে রুগ্ণ দেশকে বাঁচাতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় সব। মুক্ত, কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বদেশে বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই দেশের মানুষ যাতে আর কোন দিন অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈষম্যের শিকার না হয়, গ্রামপ্রধান-কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মেহনতি মানুষ যাতে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে সেজন্য তিনি সংবিধান রচনা করান চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও তিনি প্রাধান্য দেন সুষম একটি অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। দারিদ্র্য জয় করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের রফতানি আয় সোমবার দিন শেষে ৩ হাজার ২শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। শুধু রফতানি কিংবা জিডিপি নয়, দেশের বাজেটের আকার, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ, রাজস্ব আয়, রেমিটেন্স আহরণ, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়ন, বিদ্যুত উৎপাদন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে সফলতা। বাংলাদেশের অর্থনীতির এমন অর্জনকে বিস্ময়কর বলেছেন পৃথিবী বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের এ উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে এসেছে বিশ্বস্বীকৃতিও। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য তৈরি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কাঠামো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকার। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন। কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদন। ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো। জিডিপির আকারের তুলনায় কর আহরণের পরিমাণ বাড়ানো। বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যে সেদিকে যাত্রা শুরু করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ॥ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুরু হয়েছিল ঋণাত্মক দিয়ে। ওই সময় দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাইনাস ১৩.৯৭ শতাংশ। এর পর থেকেই মাথাপিছু আয় ॥ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার। আর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ছিল মাত্র ১২৯ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গত ৪৭ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিনটি সূচকের দুটিতে উত্তীর্ণ হলে কোন দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এর যে কোন দুটি সূচকে জাতিসংঘের মানদ- ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হবে। রিজার্ভ ॥ ১৯৭৩ সালে দেশের রিজার্ভ ছিল ১৭৩ মিলিয়ন ডলার বা ১৭ কোটি ৩ লাখ ডলার। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রিজার্ভ। গত অর্থবছর শেষে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। চলতি অর্থবছরের শুরুতে কিছুটা কমে আসলে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবস্থান করছে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। যা প্রতি মাসে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বাজেট ॥ স্বাধীনতার পর থেকে (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৯-১৯২০) দেশে জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে ৪৩২ গুণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়ে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। রেমিটেন্স আয় ॥ স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় ছিল ১৬.৩৫ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত সাড়ে চার দশকে তা বেড়েছে কয়েকশ গুণ। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক দশকে রেমিটেন্স আয় প্রায় সাড়ে তিনগুণ বা ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারী বিনিয়োগ ॥ সরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে ব্যাপক। সেইসঙ্গে বেড়েছে বেসরকারী বিনিয়োগও। গত এক দশকে বেসরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৪-৫ গুণ। চলতি বছরের ৯ মাসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) ৫০ হাজার ১১৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। রাজস্ব আয় ॥ স্বাধীনতার পর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৪২ কোটি টাকা। আর এখন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। সর্বশেষ করদাতার সংখ্যা ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে।
×