ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চিরনিদ্রায় জনকণ্ঠের বার্তা সম্পাদক আলী হাসান

প্রকাশিত: ১০:১২, ১৭ মার্চ ২০২০

চিরনিদ্রায় জনকণ্ঠের বার্তা সম্পাদক আলী হাসান

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দৈনিক জনকণ্ঠের বার্তা সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক আলী হাসানকে পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের মোমরাজপুর গ্রামের কবরস্থানে সোমবার দুপুর আড়াইটায় দাফন করা হয়েছে। এর আগে নিশ্চিন্তপুর ঈদগাহ্ ময়দানে তার ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্থানীয় সাতবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম, সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল বাসেত, অবসপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শওকত আলী বিশ্বাস, সাতবাড়ীয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এটি এম শামসুল আলমসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ অংশ নেন। জানাজায় ইমামতি করেন সুজানগর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মওলানা আব্দুল লতিফ। দীর্ঘদিন পায়ুপথের ক্যান্সারে ভুগে রবিবার রাত সোয়া ৮টায় ঢাকার মগবাজারের ডাক্তার গলির বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাত সাড়ে ১০টায় বাসার পাশের মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জনকণ্ঠের প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম খান, বার্তা সম্পাদক এম এ হামিদুজ্জামান, ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমান, শিফ্ট-ইন-চার্জ এম এ হায়দার খান, মফস্বল ইনচার্জ মীর লিয়াকত আলী এবং জেনারেল ম্যানেজার (কম্পিউটার, আইটি) মফিজুর রহমানসহ মরহুম আলী হাসানের শোকার্ত সহকর্মীবৃন্দ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। আলী হাসান প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে যুক্ত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জনকণ্ঠে বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আলী হাসানের মৃত্যুতে দৈনিক জনকণ্ঠ পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নবনির্বাচিত সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া, দৈনিক জনকণ্ঠ সাংবাদিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এবং ডিইউজে দৈনিক জনকণ্ঠ ইউনিট আলী হাসানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। আজ বাদ জোহর আলী হাসানের পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ২১ মার্চ শনিবার বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে জনকণ্ঠ ভবনে আলী হাসান স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, রবিবার রাতে সাংবাদিক-শিক্ষক আলী হাসানের মৃত্যু সংবাদ সুজানগর এলাকায় জানাজানি হলে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তার বাড়িতে হাজির হয়ে পরিবার-পরিজনকে সহমর্মিতা জানান। আলী হাসানের মরদেহ ঢাকা থেকে রাত ১২ টায় রওনা হয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় সুজানগরের নিশ্চিন্তপুরের মমতাজপুর গ্রামে পৌঁছলে পরিবার-পরিজনের বুকফাটা কান্নায় হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সাংবাদিক আলী হাসান সুজানগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম তোফাজ্জল ম-ল। শ্রমজীবী পরিবারের ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছাত্র জীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে সাতবাড়ীয়া হাইস্কুল থেকে ১ম বিভাগে স্টার মার্কসসহ ম্যাট্রিক পাস করেন। ’৭২ সালে সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজ থেকে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে স্টার মার্কসসহ ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। আর্থিক দৈন্যতার কারণে তিনি আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। তিনি ১৯৭৭ সালে সাতবাড়ীয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দেন। তিনি বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, উচ্চতর গণিত, বাংলা, ইংরেজী, ভুগোল, ইতিহাস সাবলীলভাবে ক্লাস নিতেন। তিনি শিক্ষকতা পেশায় মেধা মননে ছাত্র অভিভাবকমহলে আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। সংস্কৃতিমনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী আলী হাসান স্কুলের একাধিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের মন কেড়ে নেন। বাংলা সাহিত্যে তার পা-িত্য স্থানীয়ভাবে সর্বজনবিদিত। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই কবিতা লিখতেন ও ম্যাগাজিন বের করতেন। শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। পাবনা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক বিবৃতি’ পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। তার ছাত্র সাতবাড়ীয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এটি এম শামসুল আলম স্মৃতিচারণে জানান, আলী হাসান স্যারের মতো মেধা মননে সমৃদ্ধ শিক্ষক এখন আর দেখা যায় না। ক্লাসে চাত্ররা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকে অনুসরণ করতো। তারই ছাত্র সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আবুল হাশেম জানান, অসাধারণ মেধার অধিকারী সদালাপী ও আধুনিক রুচিবান শিক্ষক ছিলেন আলী হাসান স্যার। সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক কার্তিক কুমার মালাকার স্মৃতিচারণে জানান, গোটা ইউনিয়নে তার মতো জ্ঞানী মানুষ আর ছিল না। তিনি সবচে’ কঠিন বিষয় সহজেই সমাধান করে দিতেন। আলী হাসান স্যার আমাদের কাছে পূজনীয় হয়ে থাকবেন। সাতবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শামছুল আলম জানান, শিক্ষক হিসেবে তার মতো মানুষ আজ আর সমাজে দেখা যায় না। সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হক স্মৃতিচারণে জানান, তার কলেজের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন আলী হাসান। শিক্ষক হিসেবে তার মেধা আজও মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। শিক্ষকতা ছেড়ে আলী হাসান ১৯৮৪ সালে ঢাকায় গিয়ে আবার সাংবাদিকতা শুরু করেন।
×